সেন বংশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

সেন বংশের পরিচয় অনেকটা উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো পরিচয় সেন বংশের। সেনরা আসলে দক্ষিণ কর্ণাটক রাজ্যে বসবাস করত, সেখান থেকে তারা সময় এবং সুযোগ বুঝে নানা ষড়যন্ত্র মাধ্যমে পালদের হটিয়ে নিজেদের জায়গা করে নেয়।

সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সামন্ত সেনকে ধরা হলেও মর্যাদাবান এবং শক্তির দিক দিয়ে সামন্ত শ্রেণীর পুত্র হেমন্তকে সেন বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।    

শক্তিশালী শাসক বিজয় সেন


হেমন্ত সেন এর পুত্র বিজয় সেন ছিলেন শক্তিশালী শাসক। তিনি ছিলেন স্বাধীনচেতা শাসক, তিনি প্রথমে ছোট রাজ্যের শাসক ছিলেন পর্যায়ক্রমে দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় মাধ্যমে বড় শাসনকর্তার পরিণত হয়। পাল শাসনামলে কৈবত বিদ্রোহ সময় তিনি রামপালকে সাহায্য করেছেন। তার রাজত্বকাল ধরা হয় ১০৯৭ থেকে ১১৬০ খ্রিস্টাব্দ ‌। তিনি সুর বংশের রাজকন্যা বিলাসিনী কে বিয়ে করেন। তিনি একেবারে তার দক্ষতার জন্য কামরূপ, কলিঙ্গ, মিথিলা জয় করেছেন।

বিজয় সেনের রাজধানী


বিজয় সেন হুগলি জেলার ত্রিবেণী তে প্রথম রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। দ্বিতীয় রাজধানী স্থাপন করেন মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরে

বিজয় সেনের উপাধি


বিজয় সেন একাধারে মহেশ্বর, পরমেশ্বর, পরম ভট্টারক, মহারাজাধিরাজ, অরিরাজ বিশপ শংকর উপাধি লাভ করেন।

পন্ডিত বল্লাল সেন


বল্লাল সেন ছিলেন সুশিক্ষিত, চৌকস, রক্ষণশীল, বিদ্যানুরাগী। তার লেখা দুটি বই দানসাগর এবং অদ্ভুত সাগর। তিনি নিজেকে অরিরাজ নিঃসঙ্গ শংকর উপাধি দিয়েছিলেন। তিনি স্মৃতি, বেদ সংস্কৃতি সহ অন্যান্য ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। তার সময় রাজধানী ছিল রামপালে। তিনি একজন ধর্ম সংস্কারক ছিলেন এজন্য তিনি হিন্দু ধর্মের নিয়ম নীতি নতুন করার উদ্দেশ্যে কলিন্য প্রথা চালু করেন। এই প্রথার মাধ্যমে কুলীন চীনের মধ্যে একটি পার্থক্য শুরু হয়ে যায় অর্থাৎ তাদের বিবাহ অনুষ্ঠানে সামাজিক রীতিনীতি তে একটি অন্যরকম নিয়ম মেনে চলতে হতো। বল্লাল সেন তান্ত্রিক হিন্দু ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি যাদুবিদ্যা, তন্ত্র মন্ত্র, যোগী সন্ন্যাসী এদেরকে আশ্রয় এবং আপ্পায়ন করত।

সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষণ


বল্লাল সেন এর সুযোগ্য পুত্র লক্ষণ সেন ৬০ বছর বয়সে শাসনকর্তা হয়। তিনি ও তার বাবার মত দক্ষ যোদ্ধা, সুশিক্ষিত, রক্ষণশীল, বিদ্যানুরাগী শাসনকর্তা ছিলেন। তিনি দীর্ঘ ২৬ বছর শাসন করেন , তার শাসনামল ১১৭৮ থেকে ১২০৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।

বাবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল লক্ষণ সেন


তিনি বাবার প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ছিলেন, এজন্য তার বাবার লেখা অদ্ভুত সাগর গ্রন্থটি তিনি লিখে সমাপ্ত করেন। অদ্ভুত সাগর গ্রন্থটি বল্লাল সেন অসমাপ্ত রেখে মারা গিয়েছিলেন। তার রাজসভায় অনেক জ্ঞানী পন্ডিত ব্যক্তির স্বভাবের হত। সব কিছু ঠিক রেখে শুধুমাত্র বাবার পরমেশ্বর উপাধির পরিবর্তে তিনি সেখানে পরম বৈষ্ণব উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। দান দক্ষিণের ক্ষেত্রে তার উদার মনোভাব কবি-সাহিত্যিকদের ভাবিয়ে তোল তো।

লক্ষণ সেনের শেষ প্রণয়


লক্ষণ সেনের জীবনের শেষ দিনগুলো কষ্টে কেটেছে, বিদ্ধ বয়সে রোগ শোক জরা জীর্ণতায়, বার্ধক্যজনিত দুর্বলতা, রাজদরবারের অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রে বিষিয়ে তোলেছিল তার মনকে। বৃদ্ধ বয়সে বাবার মতো তিনি গঙ্গার ধারে বসবাস শুরু করে। এই গঙ্গার তীরে ছোট একটি নবদ্বীপ রাজধানী স্থাপন করেছিল লক্ষণ সেন। নানা প্রতিকূলতার একপর্যায়ে, ১৩ শতকের প্রথম দিকে মুসলিম সেনাপতি ইখতিয়ার মোহাম্মদ বক্তিয়ার খলজির অশ্বারোহী বেসে অতর্কিত হামলা চালিয়ে লক্ষণ সেন কে পরাজিত করে সিংহাসন আরোহন করেন। এভাবেই স্তিমিত হয়ে যায় একটি দীর্ঘ সময়ের, নানা স্মৃতিকথার, নানা ঘটনার, সেন বংশের প্রদীপ বাতি।           
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url