১৯৭০ সালের নির্বাচনের ইতিহাস

১৯৭০ সালের নির্বাচন কি?

১৯৭০ সালে নির্বাচন একটি ঐতিহাসিক নির্বাচন। পাকিস্তানের অধীনে এটি সর্বশেষ নির্বাচন। এই নির্বাচনের নানা ঘটনা প্রবাহ, নানা প্রতিকূলতা, নানা দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত একটি নির্বাচন।

পাকিস্তানের সামরিক জান্তা যখন একের পর এক পূর্ব বাংলার সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার, ষড়যন্ত্রমূলক আচরণ শুরু করে তখন থেকেই পূর্ব বাংলার মানুষ এর বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলন করে আসছিল এই আন্দোলনে একটি রুপরেখা সত্তরের সাধারণ নির্বাচন। নানা নাটকীয়তার মাধ্যমে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় এসে ১৯৭০ সালের ২৬ মার্চ বেতারের মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার কথা জনগণকে জানান।

১৯৭০ এর নির্বাচনের প্রেক্ষাপট বা পটভূমি


বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ চেতনা শুরু হয়। এই চেতনার ধারাবাহিকতায় ১৯৬৬ সালের ৬ ছয় দফা আন্দোলন বিশিষ্ট রূপ লাভ করে এর মাধ্যমেই আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন তীব্র হয়। বাঙালি জনগোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধ হয়ে শেখ মুজিবুর রহমান নেতৃত্বে সরকার পতনের ডাক দেয়। এই আন্দোলনের কারণেই মূলত আগরতলা মামলায় শেখ মুজিব এবং তার দলকে জড়িয়ে পড়তে হয়। তবে শেষ পর্যন্ত এই মামলা উঠিয়ে নিতে স্বৈরাশাসক পাকিস্তান উঠিয়ে নিতে বাধ্য হয়। তারপরও নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে কোণঠাসা করে রাখার উদ্দেশ্য পশ্চিম পাকিস্তানের মনে ছিল যার জন্য আন্দোলন এক দিনের জন্য থেমে থাকে নি। পর্যায়ক্রমে আন্দোলনের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান শুরু হয়। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান বাঙালির একটি মুক্তির আন্দোলন। জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় এসে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে বলে ঘোষণা দিলেও এই নির্বাচনও কয়েক দফায় পিছিয়ে যায়। এতে পূর্ব বাংলার মানুষ আরও অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে।

১৯৭০ এর নির্বাচনের তারিখ


ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় এসে ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সকল প্রকার বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করে রাজনৈতিক তৎপরতার বৈধ অনুমতি দেয়। এবং একই সাথে 5 অক্টোবর জাতীয় পরিষদ এবং ২২ অক্টোবর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের একটি তারিখ ঘোষণা করা হয়। তবে নানা ষড়যন্ত্র কারণে এই তারিখ ঠিক থাকেনি কিছুটা পিছিয়ে আবার নতুন তারিখ ঘোষণার দেন। নতুন তারিখ অনুযায়ী ৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদ এবং ১৭ ডিসেম্বর প্রাতিস্বিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা হয়। এদিকে 12 নম্বর পূর্ব পাকিস্তানে উপকূল অঞ্চলে প্রচন্ড জলোচ্ছ্বাস ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ওই অঞ্চলের নির্বাচনের তারিখ ১৭ ই জানুয়ারি ঘোষণা করা হয়।

জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্বাচনকেন্দ্রিক আইনগত কাঠামো


১৯৭০ সালের ২৮ মার্চ জাতির উদ্দেশে ভাষণে একটি নির্বাচনসংক্রান্ত আইনগত কাঠামোর আদেশ জারি করে। এই কাঠামোর মূল তত্ত্ব ছিল নিম্নরূপ
১. নির্বাচন কীভাবে করা হবে
২. প্রাদেশিক এবং জাতীয় পরিষদের আসন সংখ্যা কত হবে
৩. নির্বাচন কত দিনের মধ্যে হবে
৪. ভোটদানের প্রক্রিয়া কি রকম হবে
৫. সংবিধান রচনার কত দিনের মধ্যে হবে
৬. পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্য কিভাবে সমঝোতা রক্ষা হবে
৭. এই ভাষণে আরো অন্যান্য কিছু দিক ছিল
তার মধ্য ঘোষণার বিশেষ দিকগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
১ পশ্চিম পাকিস্তানের ১ ইউনিট ভেঙ্গে দিয়ে আগের প্রদেশগুলোর পুনরায় বিন্যস্ত করে এবং সেগুলো পহেলা জুলাই ১৯৭০ সালের মধ্যে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
২১৩ জন মহিলা প্রতিনিধিদের নিয়ে এবং ৩১৩ সিটের আসন হবে জাতীয় পরিষদের। অন্যদিকে 11 জন মহিলা সদস্য নিয়ে ৬২১ আসনের পাঁচটি প্রাদেশিক পরিষদ হবে ৫ টি।

১৯৭০ সালের জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদের আসন সংখ্যা


ক. জাতীয় পরিষদ ‌(পূর্ব পাকিস্তান)
সাধারণ আসন: ১৬২
মহিলা সংরক্ষিত ৭
মোট আসন: ১৬৯

খ. জাতীয় পরিষদ (পশ্চিম পাকিস্তান)
সাধারণ আসন: ১৩৮
মহিলা সংরক্ষিত: ৬
মোট আসন: ১৪৪

গ. প্রাদেশিক পরিষদ (পূর্ব পাকিস্তান)
সাধারণ আসন: ৩০০
সংরক্ষিত মহিলা: ১০
মোট: ৩১০

ঘ. প্রাদেশিক পরিষদ (পশ্চিম পাকিস্তান)
সাধারণ আসন: ৩০০
সংরক্ষিত মহিলা: ১১
মোট: ৩১১

৩. নির্বাচনের ভোট পদ্ধতি হবে এক ব্যক্তি একটি ভোট দিতে পারবেন। ১ ভোট নীতি।
৪. পাকিস্তানের দুটি অঞ্চলের অর্থনৈতিক এবং আইনের শাসন ব্যবস্থা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে থাকবে।
৫. ১৯৭০ সালের জুন মাসের মধ্যে ভোটার তালিকা প্রণয়ন।
৬. সংবিধান রচনার জন্য অধিবেশনের প্রথম দিন থেকে ১২০ দিন সময় পাবে। এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংবিধান রচনা করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের বাইরে সংবিধান রচনা করা যাবেনা, নতুবা নতুন নির্বাচনের কথা হবে অর্থাৎ নতুন নির্বাচন দেয়া হবে। এখানে আরেকটি কথা উল্লেখ করা হয় সংবিধান রচনা করে সামরিক শাসন দ্বারা সত্যায়ন করা। নির্বাচনের পাশাপাশি সংবিধানের মূল ভিত্তি কিছু ছক বাঁধা ধারা দেওয়া হয় । আইনি কাঠামো ধারার ২০ নং ধারায় ৬ টি মূলনীতি বেঁধে দেওয়া হয়।

১. সরকারব্যবস্থা হবে ফেডারেল পদ্ধতির
২. রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে ইসলামী আদর্শের
৩. প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটে নির্বাচন হবে এবং জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবে।
৪. মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে
৫. নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এলাকার অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য বৈষম্য দূর করতে হবে।
৬. বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

১৯৭০ সালের নির্বাচন কমিশন


পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ছিলেন আব্দুস সাত্তার তার নেতৃত্বেই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। এই নির্বাচন কমিশনের নানাবিধ কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা। এই নির্বাচন কমিশন এর তালিকা অনুযায়ী পূর্ব পাকিস্তানের ভোটের সংখ্যা ছিল ৩, ১২, ১৪, ৯৩৫ অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের ভোটার ছিল ২, ৫২, ০৬, ২৬৩ জন। এখানে উল্লেখযোগ্য যে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠী এই ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল।

১৯৭০ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দল সমূহ


এই নির্বাচনে ৭৮১ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করে। নিম্নোক্ত দলসমূহ নির্বাচন করেছিল।
১. পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগ(১৬২)
২. নিখিল পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় জামায়াত উলামা এবং নেজামে ইসলাম পার্টি (৪৫)
৩. ইসলামী গণতন্ত্র দল (৫)
৪. জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান (৬৯)
৫. পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি (৮১)
৬. পাকিস্তান মুসলিম লীগ (৫০)
৭. পাকিস্তান মুসলিম লীগ কনভেনশন (৯৩)
৮. পাকিস্তান মুসলিম লীগ কাইয়ুম (৬৫)

উপরোক্ত দলগুলো বন্ধনে আবদ্ধ সংখ্যক আসুন দিয়েছিল। নির্বাচনের প্রতীক ‌পূর্ববাংলা আম্লীগের প্রতীক ছিল নৌকা। অন্যান্য দলগুলোর বিভিন্ন ধরনের প্রতীক ছিল।

১৯৭০ নির্বাচনের ফলাফল


এই নির্বাচনের ফলাফল ছিল অভূতপূর্ব। এখানে বিভিন্ন দল বিজয় লাভ করে নিম্নে বিভিন্ন দলের বিজয় আসন দেওয়া হল
• পূর্ব বাংলার আওয়ামী লীগ ১৬০
• ডেমোক্রেসি বা পিপলস পার্টি  ৮১
• মুসলিম লীগ কনভেনশন ৭
• মুসলিম লীগ কাইয়ুম ৯
• মুসলিম লীগ কাউন্সিল ২
• মারকাজি উলামায়ে ইসলাম ৭
• পিডিপি ১
• জামাত ইসলাম ৪
• ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ৪
• কেন্দ্রীয় জামাত উল ইসলাম ৭
• স্বতন্ত্র প্রার্থী ১৪

এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের আসন গুলোর মধ্যে অর্থাৎ ১৬২ টি আসনের মধ্যে ১৬০ টি আসনে জয়লাভ করে। সংরক্ষিত ৭ টি মহিলা আসন সহ আওয়ামী লীগ মোট ১৬৭ টি আসনে জয়লাভ করে। এ বিজয় ছিল আওয়ামী লীগের অন্যতম একটি বিজয়। যার মাধ্যমে বাঙ্গালীদের আশা-আকাঙ্ক্ষার অনেক প্রতিপালিত হয়। দীর্ঘদিনের দুর্বিষহ অবস্থা থেকে স্বস্তির রক্ষা মিলতে যায়। অন্যদিকে প্রাদেশিক পরিষদে সংরক্ষিত মহিলা আসন সহ ৩১০ টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৯৮ টি আসনে জয়লাভ করে। 

পরিসংখ্যান মতে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫১ টি আসন দরকার ছিল। তৎকালীন আওয়ামী লীগ এর চেয়ে বেশি আসনে জয়লাভ করে। এতে দুই পাকিস্তানের দুই নেতা পূর্ব পাকিস্তানের শেখ মুজিবুর রহমান যিনি নেতৃত্ব পর্যায় আসে ১৯৬৩ সালে অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের জুলফিকার আলী যিনি পিডিপি নেতৃত্ব দিয়েছে তিনি নেতৃত্ব পর্যায়ে আসে ১৯৬৭ সালে।৭০ নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় পরিষদের ১৬০ আসনে জয়লাভ করে এবং ভোটের হার ছিল ৩৯.২ শতাংশ।

অপরদিকে জুলফিকার আলী জাতীয় পরিষদের ৮১ টি আসন পায় ভোটের হার ছিল ১৮.৬ শতাংশ। আবার প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ তথা শেখ মুজিবুর রহমান ৭০.৪৮ শতাংশ ভোট পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। বিশাল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করা পূর্ব পাকিস্তানকে নিয়ে একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত শেখ মুজিবুর রহমানের ছিল। এত জয়লাভ করার পরেও নির্বাচনের এই ফলাফল পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী সহজে মেনে নিতে পারেনি এমনকি মেনে নেয়নি।

ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা দেয়ার ব্যাপারে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র এবং টালবাহানা শুরু করে। আজ না কাল এভাবে মাস কেটে যায় এখানে উল্লেখযোগ্য যে ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের একটি অধিবেশন আহ্বান করা হয় কিন্তু নানা কারণ দেখিয়ে এই অধিবেশন ১ মার্চ তারিখে স্থগিত করা হয়। অবশ্যই হঠকারিতা সিদ্ধান্তে পূর্ব পাকিস্তানের জনগোষ্ঠী বিশেষ করে সাধারণ শ্রমিক, সাধারণ মানুষ তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়েছে।

১৯৭০ সালের ফলাফলের ভিত্তিতে যে সকল আন্দোলন হয়


• স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।
• ছাত্র সংগ্রাম এর উদ্যোগে ২ মার্চ দেশব্যাপী ধর্মঘট আহ্বান করা হয় ‌
• মার্চের ৩ তারিখে ছাত্রলীগ কর্তৃক পল্টনে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেওয়া হয় এবং বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।
• ছাত্রলীগের সমাবেশ থেকে ৫ দফা কর্মসূচি আহবান করা হয়। এই কর্মসূচি পরবর্তীতে স্বাধীনতার ইশতেহার হিসাবে বিবেচিত হয়।
• ছাত্রদের আহবানে যোগ দিয়ে সাধারণ শ্রমিক কর্মচারী, মেহনতী মানুষ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। এসব আন্দোলনে অনেক সাধারণ মানুষ নিহত এবং আহত হয়।
• ৬ মার্চ বেতারের মাধ্যমে ২৫ মার্চ নতুন করে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করা হয়।
• ৭ মার্চ সরোয়ারদী উদ্যান আগের বিখ্যাত রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ অনুষ্ঠিত হয়। আন্দোলনের মাধ্যমে বৃহত্তর আন্দোলনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো কর্তৃক গৃহীত হয়েছে ‌৩০ অক্টোবর ২০১৭ সালে।

১৯৭০ নির্বাচনের তাৎপর্য


এই নির্বাচনের তাৎপর্য ছিল অপরিসীম। দীর্ঘ 24 বছরের গোলামে হতে মুক্তির আন্দোলন। নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের হৃদয়ের হাহাকার দূর করার একটি আন্দোলন ‌। এই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভালোবাসা, সহযোগিতা, একতার কথা ফুটে উঠেছে। ২৪ বছরের ইতিহাসে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটের এটি শেষ এবং প্রথম নির্বাচন ছিল। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করলেও ক্ষমতা না দিয়ে পাকিস্তান গোষ্ঠী নানা টালবাহানা মত্ত হয়। অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তান ৬ দফার ভিত্তিতে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যায়। এ নির্বাচনে শুধু বাঙ্গালীদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি বরং ভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সমর্থনযোগ্য সক্ষম হয়েছিল। অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনে শেখ মুজিবর রহমানের দল বিজয় লাভ করলেও হিংসাত্মক মনোভাবের কারণে ক্ষমতায় বসায় নি। এসব পথের মধ্য দিয়েই জাতীয় সত্তা দ্বিখণ্ডিত হয়।

১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব


এ নির্বাচন বাংলাদেশ স্বাধীনতার এবং পাকিস্তানের রাজনীতিতে অপরিসীম ভূমিকা রাখে। যার ফলে নিচের ক্ষেত্রগুলোতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়।

১. এর মাধ্যমে ঐতিহাসিক ছয়দফার বিজয়: এ নির্বাচনে পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী মূলত ব্যর্থ হয়। নির্বাচনের মাধ্যমে পাকিস্তান আওয়ামী লীগ অধিকাংশ ভোট পায় ফলে পাকিস্তান আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। ছয় দফার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা করা, ছয় দফার পক্ষে মানুষ ভোট দেয় যার ফলশ্রুতিতে নির্বাচনী আসন সংখ্যা পাকিস্তান অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তান বৃদ্ধি পায়।

২. রাজনীতিক সহনশীলতা: এই নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ তথা পূর্ব পাকিস্তান রাজনীতিক সংহতি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যার মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান বিশ্ব দরবারে স্বাধীনতার পক্ষে জনসমর্থন আদায় সচেষ্ট হয়।

৩. ন্যায় এর ক্ষেত্রে অনন্য: এই নির্বাচনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান স্পষ্টভাবে তাদের অধিকারের কথা সারা বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দেয়। যার মাধ্যমে পাকিস্তানের দুই অংশের চাওয়া পাওয়া, আশা-আকাঙ্ক্ষা, এবং চাওয়া-পাওয়ার দিক ভিন্নতা হয়।

৪. প্রবল মুক্তির বাসনা: পূর্ব পাকিস্তান সত্যি যে পশ্চিম পাকিস্তানের গোলামী থেকে মুক্তি চায় , এই নির্বাচনের মাধ্যমে তা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগোষ্ঠী স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলনে শরিক হয়। এই আন্দোলন থেকেই পরবর্তী স্বাধীনতার বীজ বপন হয়।

৫. বৈধ স্বায়ত্বশাসন দাবি: দীর্ঘদিনের বাঙালি জাতির একটাই দাবী ছিল পূর্ববাংলার জন্য আলাদা জাতি রাষ্ট্র গঠন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সকল অত্যাচার এর জবাব দেওয়া হয়। ছয় দফা কেন্দ্রিক আন্দোলন গড়ে ওঠে তা মূলত ছিল আলাদা শোষনহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।

৬. পাকিস্তানের বিভক্ত করন: এই নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ পশ্চিম পাকিস্তানের কোন আসনে বিজয় লাভ করতে পারেনি ঠিক সেভাবেই পাকিস্তান পিপলস পার্টি পূর্ব পাকিস্তান থেকে বিজয় লাভ করতে পারেনি। এসব নানা ঘটনায় মূলত আঞ্চলিকতা ফুটে উঠে অর্থাৎ আঞ্চলিক নেতৃত্ব দারুণ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এই নির্বাচন মূলত পাকিস্তানের বিভক্ত করন নির্বাচন।

৭. স্বাধীন বাংলাদেশের নতুন অভ্যুদয়: এই নির্বাচনের মাধ্যমে বোঝা যায় আগামী দিনের পাকিস্তানের নতুন সূর্য উদয় হওয়ার ঘটনা। কারো নির্বাচনের মাধ্যমে পাকিস্তান আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ৩১৩ আসনের মধ্য ১৬৭ টি আসন‌ লাভ করে। অন্যদিকে পারদেশী পরিষদের নির্বাচনে ৩১০ আসনের মধ্য ২৮৮ টি আসনে জয়লাভ করে। এসব বিজয় নতুন অভ্যুদয়ের দিকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url