শিক্ষার লক্ষ্য অনুচ্ছেদ
শিক্ষার লক্ষ্য হলো আমাদের আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়ন করা। এটি আমাদের জীবন এবং আমরা যে সমাজে বসবাস করি তা পরিবর্তনে সাহায্য করে। যে শিক্ষা আমাদের মনকে আলোকিত করে না অথবা আমাদের সমাজের জন্য কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে না তা কখনোই পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা হতে পারে না। শিক্ষা শুধু গ্রেড এবং সাটিফিকেট অর্জনই নয়, আমরা জীবনকে উন্নত করতে শিক্ষা ব্যবহার করি।
আমাদের কাছে প্রত্যাশা করা হয় যে, শ্রেণিকক্ষে শেখা জ্ঞান, দক্ষতা ও মূল্যবোধগুলোকে আমরা বাইরের জগতের সাথে সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করবো এবং এটি আমরা বিভিন্ন উপায়ে করতে পারি। চলো দেখি শিক্ষা কীভাবে কাজ করে। বিশ্বজুড়েই শিক্ষার্থীদের নাগরিক সম্পৃক্ততা ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়।
নাগরিক সম্পৃক্তার অর্থ হলো, ঐ সম্প্রদায়ের নাগরিক জীবনে জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ এবং অনুপ্রেরণা ব্যবহার করে ঐ সমাজের পরিবর্তন সাধন করা (নাগরিকের জনজীবন থেকে তার ব্যক্তিগত জীবন আলাদা)। নাগরিক সম্পৃক্ততা মানুষের কল্যাণ এবং স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অবদান রাখার মাধ্যমে ঐ সমাজের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করে।
পৌর বিষয়ে সম্পৃক্ত ব্যক্তিগণ বৃহত্তর সামাজিক গোষ্ঠীর সদস্য বলে নিজেদের চিহ্নিত করে এবং তারা নাগরিক বিষয়াদি নিয়ে সচেতন থাকে। তারা নিজেদেরকে অবিচার, বৈষম্য এবং অন্যান্য সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা অথবা ব্যবস্থা গ্রহণকারী দায়িত্বশীল নাগরিক মনে করে থাকে।
নাগরিক সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে, জন সচেতনতার বিষয়সমূহ খুব গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিগত অথবা দলগত কার্যক্রমের মাধ্যমে জনস্বার্থ সুরক্ষা করা এবং সমাজ নিজেকে মূল্যায়নের পদ্ধতিতে পরিবর্তন সাধন নাগরিক সম্পৃক্ততার অন্তর্ভুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, তুমি যদি স্থানীয় পৌরসভার অন্যায় কোনো সিদ্ধান্ত যেমন: কর বৃদ্ধি অথবা কোনো আইন যা জনস্বার্থ বিরোধী ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করো তখন তুমি নাগরিকভাবে সম্পৃক্ত এবং তোমার কাজকে নাগরিক সম্পৃক্ততা হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রতিবাদ বিভিন্ন উপায়ে করা যায়, যেমন: জনসভার আয়োজন স্বাক্ষর গ্রহণ, মানব বন্ধন, আবেদন লেখা ইত্যাদির মাধ্যমে।
এছাড়াও তুমি স্কুলের সামনে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে, বাচ্চাদের রাস্তা পার করতে সাহায্য করে, দলগত ভাবে পার্ক অথবা সমুদ্র সৈকত পরিষ্কারের কাজ করতে পারো। তাছাড়া তুমি বৃদ্ধ মানুষদেরও নানা সেবা প্রদান করতে পারো। এসবই নাগরিক সম্পৃক্ততার উদহারণ কারণ তুমি যা করো তা সমাজে সরাসরি প্রভাব ফেলে। নাগরিক সম্পৃক্ততা যখন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণকে একটি মাপকাঠির মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয় তখন তাকে ‘সেবা শিক্ষা’ বলা হয়।
শ্রেণিকক্ষে শেখানো জ্ঞান এবং দক্ষতার প্রয়োগ এবং এরপর একটি পূর্ণাঙ্গ কর্ম পরিকল্পনা তৈরি, যেমন- বাজেট তৈরি করা, তা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করা, মানুষকে এ কাজে সম্পৃক্ত করা এবং প্রয়োগসংক্রান্ত কৌশল সক্রিয় করা প্রভৃতি এর অন্তর্ভুক্ত। যখন নাগরিক সম্পৃক্ততা স্বতঃস্ফূর্ত কিন্তু অনিয়মিত এবং যা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম কর্মসূচির অংশ নয়, তখন তাকে স্বেচ্ছাসেবিতা হিসেবে গণ্য করা হয়।