কার্বোহাইড্রেট কী? Carbohydrates

কার্বোহাইড্রেট কী?


কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন এর সমন্বয়ে গঠিত এক বিশেষ শ্রেণীর যৌগকে কার্বোহাইড্রেট বলে। অর্থাৎ কার্বোহাইড্রেট শ্রেণীর যৌগগুলো কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন এর সমন্বয়ে গঠিত।

কার্বোহাইড্রেট এর প্রাচীন সংজ্ঞা

পরমাণু ও পানির অণুর সংখ্যা ভিন্ন। গ্লুকোজে কার্বন পরমাণুর সংখ্যা ৬ এবং পানির সংখ্যাও ৬। কার্বোহাইড্রেটে কার্বনের সাথে ঠিক একই অনুপাতে পানি থাকে বলে এদেরকে বলে কার্বোহাইড্রেট (carbohydrates) এ কারণেই অতীতে কার্বোহাইড্রেট গুলোকে কার্বনের হাইড্রেট রূপে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু বিষয়টি ঠিক নয়।

কার্বোহাইড্রেট এর আধুনিক সংজ্ঞা


আলোক সক্রিয় ধর্ম বৈশিষ্ট্য পলি হাইড্রোক্সা অ্যালডিহাইড বা কিটোন অথবা যে সকল যৌগের আদ্র বিশ্লেষণ অনুরূপ ধর্ম সম্পন্ন অ্যালডিহাইড বা কিটোন উৎপন্ন হয় তাদেরকে কার্বোহাইড্রেট বলে। যেমন গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ

কাবহাইড্রেটের বৈশিষ্ট্য ও কাজ


১। কার্বোহাইড্রেটসমূহ জীব অণু বা প্রাণ অণু। দেহকোষ গঠনকারী যে সকল রাসায়নিক পদার্থসমূহের সংশ্লেষণ ব বিয়োজন জীবদেহে প্রতিনিয়ত ঘটে তাদেরকে জীব অণু বা বায়ো-অণু বা প্রাণ অণু (Biomolecules) বলে।
২। কার্বোহাইড্রেটসমূহ আলোক সক্রিয় ধর্মবিশিষ্ট অ্যালডিহাইড বা কিটোন।
৩। এদের আর্দ্রবিশ্লেষণে অনুরূপ ধর্মবিশিষ্ট অ্যালডিহাইড ও কিটোন পাওয়া যায়।
৪। কার্বোহাইড্রেটগুলো কার্বনের হাইড্রেট নয়।
৫। আমাদের খাদ্য তালিকার বেশির ভাগটাই কার্বোহাইড্রেট দিয়ে গঠিত।
৬। কার্বোহাইড্রেটগুলো জীবদেহের শক্তির প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করে। কারণ এরা বিবিধ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে জীবদেহের গঠন, শক্তি উৎপাদন, জীবদেহের বৃদ্ধি ও দেহকে রোগ সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে।
৭। কার্বোহাইড্রেটসমূহ উদ্ভিদ কর্তৃক প্রাথমিক জৈব রাসায়নিক উপাদান (primary metabolite)।
৮। প্রাণীরা কার্বোহাইড্রেটসমূহকে প্রস্তুত করতে পারে না। এ কারণে এদেরকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উদ্ভিদ থেকে সংগ্রহ করতে হয়।
৯। কার্বোহাইড্রেটসমূহ নির্দিষ্ট গঠন কাঠামোবিশিষ্ট হয়ে থাকে।১০। কার্বোহাইড্রেট সমূহ হাইড্রোক্সিল ও কার্বনিল গ্রুপ থাকব।

কার্বোহাইড্রেটসমূহের শ্রেণীবিন্যাস


নিচে কার্বোহাইড্রেটসমূহের শ্রেণীবিন্যাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

ভৌত ধর্মের উপর ভিত্তি করে কার্বোহাইড্রেটসমূহকে নিম্নরূপ দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে ।

শর্করা বা সুপার (Sugars): যেসব কার্বোহাইড্রেট কেলাসাকার পদার্থ, মিষ্ট স্বাদযুক্ত এবং পানিতে দ্রব্য তাদের শর্করা বা সুগার (Sugars) বলে। যেমনঃ গ্লুকোজ (glucose), ফ্রুক্টোজ (fructose), সুক্রোজ (sucrose) ইত্যাদি। কয়েকটি সুগারের আপেক্ষিক মিষ্টতার মান নিম্নের ছকে দেখানো হলোঃ সুপার ল্যাকটোজ মলটোজ গ্যালাকটোজ গ্লুকোজ আপেক্ষিক মিষ্টতা যথাক্রমে 16, 32 ,32 ,75 সুক্রোজ 100, ফুকটজ +175

অ-শর্করা বা নন-সুগার (Non-sugars): যেসব কার্বোহাইড্রেট অনিয়তাকার, স্বাদহীন এবং পানিতে অদ্রাব্য বা স্বায়দ্রাব, তাদের অ - শর্করা বা নন-সুগার (Non-sugars ) বলে। যেমনঃ স্টার্চ (starch), সেলুলোজ (cellulose) ইত্যাদি।

আণবিক গঠন ও সংযুক্তি

বর্তমানে আর্দ্রবিশ্লেষণ বিক্রিয়ার ভিত্তিতে বা আণবিক গঠন ও সংযুক্তির ভিত্তিতে কার্বোহাইড্রেটগুলোকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়।

মনোস্যাকারাইড (Monosaccharides): যেসব কার্বোহাইড্রেটকে আর্দ্রবিশ্লেষিত করে নতুন কোন সরলতম কার্বোহাইড্রেটে পরিণত করা যায় না, তাদের মনোস্যাকারাইড (Monosaccharides) বলে। অর্থাৎ মনোস্যাকারাইড গুলোকে সরলতম কার্বোহাইড্রেটরূপে গণ্য করা হয়। যেমনঃ অ্যারাবিনোজ রাইবোজ, গ্লুকোজ, ফ্লুট্টোজ ইত্যাদি।

অলিগোস্যাকারাইড (Oligosaccharides): যেসব কার্বোহাইড্রেট অণুর আর্দ্রবিশ্লেষণের ফলে ২ থেকে ১৪ পর্যন্ত মনোস্যাকারাইড অণু উৎপন্ন হয়, তাদের অলিগোস্যাকারাইড (Oligosaccharides) বলে। আর্দ্রবিশ্লেষণে উৎপন্ন মনোস্যাকারাইড অণুর সংখ্যা অনুযায়ী এদেরকে আবার বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যেমন: ডাইস্যাকারাইড, ট্রাইস্যাকারাইড, টেট্রাস্যাকারাইড ইত্যাদি

ডাইস্যাকারাইড (Disaccharides): যে কার্বোহাইড্রেটের অণু আর্দ্রবিশ্লেষিত হয়ে ২ টি মনোস্যাকারাইড অ উৎপন্ন করে, তাকে ডাইস্যাকারাইড (Disaccharides) বলে। যেমনঃ সুক্রোজ, ল্যাকটোজ, মলটোজ ইত্যাদি।

ট্রাইস্যাকারাইড (Trisaccharides) যে কার্বোহাইড্রেটের অণু আর্দ্রবিশ্লেষিত হয়ে ৩ টি মনোস্যাকাইড উৎপন্ন করে, তাকে ট্রাইস্যাকারাইড (Trisaccharides) বলে। যেমনঃ রাফিনোজ

টেট্রাস্যাকারাইড (Tetrasaccharides: যে কার্বোহাইড্রেটের অণু আর্দ্রবিশ্লেষিত হয়ে ৪ টি মনোস্যাকারাইড উৎপন্ন করে, তাকে টেট্রাস্যাকারাইড (Tetrasaccharides) বলে। যেমনঃ স্ট্যাচিয়োজ

পলিস্যাকারাইড (Polysaccharides): যেসব কার্বোহাইড্রেট অণুর আর্দ্রবিশ্লেষণের ফলে বহুসংখ্যক মনোস্যাকারাইড অণু উৎপন্ন হয়, তাদের পলিস্যাকারাইড (Polysaccharides) বলে। যেমনঃ স্টার্চ, সেলুলোজঅ গ্লাইকোজেন ইত্যাদি। পলিস্যাকারাইডগুলোর সাধারণত কোন স্বাদ থাকে না। এরা ফুটন্ত পানির সঙ্গে মিশে কোলয়েড গঠন করে। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, মনোস্যাকারাইডগুলো সরলতম কার্বোহাইড্রেট শ্রেণীভুক্ত যৌগ, যাদেরকে আর্দ্রবিশ্লেষিত করে নতুন কোন সরলতম কার্বোহাইড্রেটে পরিণত করা যায় না। এদের অণুতে ৩ থেকে ৭ টি পর্যন্ত কার্বন পরমাণু বর্তমান থাকে। অধিকাংশ মনোস্যাকারাইডকে C, (H2O), এই সাধারণ সংকেতের সাহায্যে প্রকাশ করা যায় (যেখানে n = 3-7)। প্রকৃতিজাত মনোস্যাকারাইডের সংখ্যা প্রায় ২০ টি। মনোস্যাকারাইড অণুতে উপস্থিত কার্বনিল গ্রুপের প্রকৃতি অনুযায়ী এদের নামকরণ এবং শ্রেণীবিন্যাস করা হয়।

অণুতে উপস্থিত কার্বনিল গ্রুপের প্রকৃতি অনুযায়ী মনোস্যাকারাইডগুলোকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়:

অ্যালডোজ (Aldose): যেসব মনোস্যাকারাইডের অণুতে অ্যালডিহাইড গ্রুপ উপস্থিত থাকে, তাদেরকে অ্যালডোজ (Aldose) বলে। অর্থাৎ পলিহাইড্রক্সি অ্যালডিহাইডগুলোকে অ্যালডোজ (Aldose) বলে। যেহেতু অ্যালডিহাইড গ্রুপটি একযোজী, তাই অ্যালডিহাইড গ্রুপটি সর্বদা অ্যালডোজ অণুর কার্বন শৃঙ্খলের একপ্রান্তে অবস্থান করে।


কিটোজ (Ketose): যেসব মনোস্যাকারাইডের অণুতে কিটো গ্রুপ উপস্থিত থাকে তাদেরকে কিটোজ (Ketose) বলে অর্থাৎ পলিহাইড্রক্সি কিটোনগুলোকে কিটোজ (Ketose) বলে।

যেহেতু কিটো গ্রুপটি দ্বিযোজী, তাই কিটো গ্রুপের কার্বন পরমাণুটি কিটোজ অণুর কার্বন শৃঙ্খলের যে কোনো অবস্থান দখল করতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, প্রকৃতিজাত সব কিটোজের ক্ষেত্রে কিটো গ্রুপটি ২ নং অবস্থানে থাকে।
আবার মনোস্যাকারাইড অণুতে উপস্থিত কার্বন পরমাণুর সংখ্যা অনুযায়ী এদের বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা যায় যেমন:

১। তিনটি কার্বন পরমাণুবিশিষ্ট মনোস্যাকারাইডকে বলা হয় ট্রায়োজ (trlose)
২। চারটি কার্বন পরমাণুবিশিষ্ট মনোস্যাকারাইডকে বলা হয় টেট্রোজ (tetrose)
৩। পাঁচটি কার্বন পরমাণুবিশিষ্ট মনোস্যাকারাইডকে বলা হয় পেন্টোজ (pentose)
৪। ছয়টি কার্বন পরমাণুবিশিষ্ট মনোস্যাকারাইডকে বলা হয় হেক্সোজ (hexose)
৫। সাতটি কার্বন পরমাণুবিশিষ্ট মনোস্যাকারাইডকে বলা হয় হেপ্টোজ (heptose) কাজেই তিনটি, চারটি, পাঁচটি ও ছয়টি কার্বন পরমাণুযুক্ত অ্যালডোজগুলোকে যথাক্রমে অ্যালডোট্রায়োজ, অ্যালডোটেট্রোজ, অ্যালডোপেন্টোজ ও অ্যালডোহেক্সোজ বলা হয়। একইভাবে, তিনটি, চারটি, পাঁচটি ও ছয়টি কার্বন পরমাণুযুক্ত কিটোজগুলোকে যথাক্রমে কিটোট্রায়োজ, কিটোটেট্রোজ, কিটো পেন্টোজ, কিটো hexa's বলা হয়।

রাসায়নিক ধর্মের উপর ভিত্তি করে কার্বোহাইড্রেট সমগ্র দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।

ক। বিজারক চিনি বা বিজারক সুগার
খ। অবিজারক চিনি বা অবিজারক সুগার
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url