উপসর্গ

 উপসর্গ কি?

এক প্রকার অব্যয়। সেই সকল অব্যয় যেগুলো ধাতুর পূর্বে বসে নতুন শব্দ গঠন করে তাকে উপসর্গ বলে।
অথবা

বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত কিছু শব্দাংশ যেগুলো স্বাধীন পথ হিসেবে বাক্যে ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ বাক্যর পরিবর্তন সাধন করে তাকে উপসর্গ বলে।

উপসর্গের কাজ সমূহ

• নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরীর ক্ষেত্রে
• শব্দের অর্থের সম্প্রসারণ ঘটাতে
• শব্দের অর্থের পুনঃবিন্যাস সাধিত করতে
• অর্থের সংকোচন ঘটানো এবং অর্থের পরিবর্তন ঘটানো

সহজ ভাষায় উপসর্গ: ভাষায় ব্যবহৃত অব্যয় সূচক শব্দ  ই উপসর্গ।

যেমন, নাদর একটি শব্দ যার নিজস্ব কোন অর্থ নেই।
নাদর শব্দের আগে যদি অ যোগ করা হয় তাহলে শব্দটি হয় অনাদার। যার অর্থ হচ্ছে কয়েক রকমের:
  • অভাব অর্থে - অনাদর, অনাবৃষ্টি, অমিল
  • ছাড়াও অর্থে- অনাসৃষ্টি, অনাচার
  • অশুভ অর্থে- অনামুখো
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই কিন্তু অর্থদ্যোতকতা রয়েছে। অর্থাৎ উপসর্গ নতুন নতুন শব্দ গঠনে নানাভাবে সহায়তা করে।

উপসর্গ কত প্রকার

১. বাংলা উপসর্গ 
২. তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গ
৩. বিদেশি উপসর্গ
১. বাংলা উপসর্গ মোট 21 টি
বাংলা উপসর্গ গুলোর প্রয়োগ নিচে দেখানো হলো
১. অ - অকেজো,অচেনা,অপয়া / নিন্দিত অর্থ
অচিন,অজানা,অথৈ / অভাব অর্থ
অঝোরে,অঝোর/ ক্রমাগত অর্থে
২. অঘা- অগা চন্ডী, অঘারাম ব্যবহৃত হয় বোকা অর্থে
৩. অজ- অজ পাড়াগাঁ, অজপুকুর, অ্জ মূখ ব্যবহৃত হয়- মন্দ অর্থে
৪. অনা- অনাদর, অনাবৃষ্টি অভাব অর্থে ব্যবহৃত হয়
৫. আ - আকাড়া, আধোয়া, আলুনি / অভাব অর্থে ব্যবহৃত হয়।
আকাঠা, আগাছা/ নিকৃষ্ট বা বাজে অর্থে ব্যবহৃত হয়।
৬. আড়- আড় চোখে , আড়নয়নে ব্যবহৃত হয় বক্র অর্থে। আড়মোড়া, ব্যবহৃত হয় অংশ
৭. আন - আনকোরা ব্যবহৃত হয় না অর্থে।
আনচান, আনমনা ব্যবহৃত হয় বিক্ষিপ্ত অর্থ।
৮. আব- আবছায়া,আবডাল ব্যবহৃত হয় অস্পষ্টতা অর্থেই।
৯. ইতি - ইতিহাস, ইতিকথা - পুরনো অর্থে
ইতি কর্তব্য, ইতিপূর্বে ব্যবহৃত হয় বা ,এর শব্দসমূহ
১০. ঊন- ঊনিশ, ঊনপাঁজুরে / কম অর্থে
১১. কদ- কদর্য, কদাকার, কদবেল/ নিন্দিত অর্থে
১২. কু- কুকথা, কুনজর, কুসঙ্গ, কু অভ্যাস/ অপকর্ষ বা কুৎসিত অর্থে ব্যবহৃত হয়।
১৩. নি- নিখোঁজ, নিলাজ , নিভাস, নিরেট নিখুঁত- ব্যবহারিক অর্থ নেতি বা নাই 
১৪. পাতি- পাতিশিয়াল, পাতিলেবু, পাতকুয়া, পাতিহাঁস / ক্ষুদ্র অর্থে ব্যবহৃত হয়।
১৫. বি - বিভূই, বিপদ, বি ফল- ভিন্নতা অথবা নিন্দনীয় আচরণে ব্যবহৃত হয়।
১৬. ভর- ভরপেট,ভরসাঝ, ভরপুর, ভরদুপুরে/ পূর্ণতা অর্থে ব্যবহৃত হয়।
১৭. রাম - রামদা, রাম সিংহ, রাম বোকা, রাম ছাগল এগুলো বড় অথবা উৎকৃষ্ট অর্থে ব্যবহৃত হয়।
১৮. স- সবর,সঠিক,সজোর ,সপাট/ সঙ্গে অর্থে ব্যবহৃত হয়।
১৯. সা- সাজোয়ান, সাজিরা, সিজদা উৎকৃষ্ট অর্থ ব্যবহৃত হয়।
২০. সু- সুখবর, সুদিন ,সুনাম,সুকাজ / উত্তম অর্থে ব্যবহৃত হয়।
২১. হা - হাভাতে, হা ঘরে, হাপিতোশ সাধারণত অভাব অর্থে ব্যবহৃত হয়।

২. সংস্কৃত বা তৎসম উপসর্গ ২০ টি 

বিশ টি সংস্কৃতি বা তৎসম উপসর্গের গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ 

1. পো - প্রচলন, প্রভাব, প্রস্ফুটিত এগুলো প্রকৃষ্ট অর্থ ব্যবহৃত হয়।
• প্রতাপ, প্রভাব, প্রসিদ্ধ খ্যাতি অর্থে ব্যবহৃত হয়।
• প্রচার, প্রবল, প্রসার, প্রকাণ্ড এগুলো আধিক্য অর্থ ব্যবহৃত হয়।
• প্রবেশ, প্রস্থান এগুলো গতি অর্থ ব্যবহৃত হয়।
2. পরা-পরায়ণ, পড়া কান্ত, পরাকাষ্ঠা এগুলো আতিশয্য অর্থে ব্যবহৃত হয়।
আবার, পরাজয়, পরাভব এগুলো বিপরীত অর্থ ব্যবহৃত হয়।
৩. অপ- অপমান,অপকার,অপচয়,অপযশ,অপবাদ শব্দগুলো বিপরীত অর্থে ব্যবহৃত হয়।
*অপসংস্কৃতি, অপ সৃষ্টি, অপকর্ম এগুলো নিকৃষ্ট অর্থে ব্যবহৃত হয়।
*অপসারণ, অপহরণ, অপনোদন এগুলো স্থান্তর অর্থে ব্যবহৃত হয়।ষ
*অপমৃত্যু শব্দ টি বিকূত অর্থে ব্যবহৃত হয়।
৪. সম - সম্পন্ন, সমাদর, সমৃদ্ধ শব্দগুলো সম্মুখের ব্যবহৃত হয়।
৫. নি - যেমন ' নিবূও অর্থে নিষেধ 
• নিবারণ, নির্ণয় শব্দগুলো নিশ্চয় অর্থে ব্যবহৃত হয়।
• নির্ধারণ, নিদাঘ শব্দগুলো আতিশয্য অর্থে ব্যবহৃত হয়
• নিস কম, নিষ্কলুষ শব্দগুলো অভাব অর্থে ব্যবহৃত হয়।
৬. অব- অবজ্ঞা, অবমাননা শব্দগুলো হীনতা অর্থে ব্যবহৃত হয়।
• অবরোধ, অবগাহন, অবগত শব্দগুলো সম্যকভাবে  ব্যবহৃত হয়।
• অবতরণ, অবরোহন শব্দগুলো নিম্নে অর্থে ব্যবহৃত হয়।
• অবসান, অবেলা, অবশেষ শব্দগুলো অল্প অর্থে ব্যবহৃত হয়।
৭. অনু- অনুশোচনা, অনুগামী, অনুচর, অনুজ , অনুতাপ, অনুকরণ শব্দগুলো পশ্চাৎ অর্থে ব্যবহৃত হয়।
*অনুবাদ, অনুরূপ, অনকার শব্দগুলো সাদৃশ্য অর্থ ব্যবহৃত হয়।
*অনুদিত, অনুশীলন, অনুক্ষণ শব্দগুলো পুণঃপ্রচারিত অর্থে ব্যবহৃত হয়।
*অনুকম্পা, অনুকূল শব্দগুলো সঙ্গে অর্থে ব্যবহৃত হয়।
৮. নির- নির্জীব, নিরহংকার, নিরাশ্রয়, নির্দল, নির্ধন, নিরব শব্দগুলো অভাব অর্থে ব্যবহৃত হয়।
• নির্ভর, নিশ্চয়, নির্ণয় শব্দগুলো নিশ্চিত অর্থে ব্যবহৃত হয়।
• নিঃসরণ, নির্বাসন, নির্গত শব্দগুলো বাহির অর্থে ব্যবহৃত হয়।
৯. দুর- দুর্ভাগ্য, দুর্নাম, দুর্দশা শব্দগুলো মন্দ অর্থে ব্যবহৃত হয়।
• দূরতিকূম, দুর্লভ, দুর্ভাগ্য শব্দগুলো মন্দ অর্থে ব্যবহৃত হয়।
১০. বি- বিশুদ্ধ, বিজ্ঞান, বিশুষ্ক, বিধূত, শব্দগুলো বিশেষ রূপে ব্যবহৃত হয়
• বিশৃংখল, বি ফল, বিবর্ণ, বিনিদ্র শব্দগুলো অভাব অর্থ ব্যবহৃত হয়।
• বিক্ষেপ, বিচরণ শব্দ দুটি গতি অর্থে ব্যবহৃত হয়।
• বিপর্যয়, বিকার শব্দ দুটি অপ্রকৃতস্থ অর্থ ব্যবহৃত হয়।
১১. সু- সুকৃতি, সুচরিত্র, সুপ্রিয়, সুনীল, সুকণ্ঠ শব্দগুলো উত্তম অর্থে ব্যবহৃত হয়।
• সুগম,সুলভ, সুশান্ত , শব্দগুলো সহজ অর্থে ব্যবহৃত হয়।
• সুকঠিন, সুধীর, সুতীক্ষ্ণ, সুনিপুণ, সুচতুর শব্দগুলো আতিশয্য অর্থে ব্যবহৃত হয় ‌।
১২. উৎ- উৎক্ষিপ্ত, উত্তোলন, উদগ্রীব, উন্নতি, উদ্যম শব্দগুলো ঊর্ধ্বমুখী তা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
• উৎপাদন উচ্চারণ শব্দ দুটি প্রস্তুতি অর্থে ব্যবহৃত হয়।
• উৎকষ, উশৃংখল, উৎকৃষ্ট শব্দ গুলো অপকর্ষ অর্থে ব্যবহৃত হয়।
১৩. অধি- অধি প্রতি, অধিবাসী, অধিকার শব্দগুলো আঁদিপত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
• অধিবাস, অধিপতি, অধিগত, অধিকার শব্দগুলো ব্যাপ্তি অর্থে ধাবিত হয়
১৪. পরি- পরিপূর্ণ, পরিবর্তন, পরিপক্ক
 পরিশ্রান্ত, পরীক্ষা, পরিমাণ শব্দগুলো সম্যকরূপে ব্যবহৃত হয়।
 আবার, পরিমণ্ডল, পরি ভ্রমণ শব্দগুলো চতুর্দিক অর্থ ব্যবহৃত হয়।
১৫. প্রতি- প্রতিধ্বনি, প্রতিমন্ত্রী, প্রতিমূর্তি সদৃশ্য অর্থে ব্যবহৃত হয়।
প্রতিবাদ, প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধ অর্থে ব্যবহৃত হয়।
প্রতিদিন, প্রতি মাস শব্দ দুটি পূনপূন অর্থে ব্যবহৃত হয়।
প্রতিঘাত, প্রতিদান, প্রত্যুপকার শব্দগুলো অনুরূপ কিছু করা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
১৬. উপ- উপকূল, উপকণ্ঠ সামীপ্য অর্থে ব্যবহৃত হয়
• উপবনে, উপদ্বীপ সাদূশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
• উপসাগর,উপসহর, উপগ্রহ, উপনেতা ক্ষুদ্র হিসেবে পরিচিত।
১৭. অভি- অভিব্যক্তি, অভিভূত, অভিজ্ঞ শব্দগুলো সম্যক অর্থ
• অভিযান, অভিসার শব্দ দুটি গমনে  ব্যবহৃত হয়।
• অভিমুখ,অভিবাদন শব্দ সামনে হিসেবে পরিচিত।
১৮. অতি- অতিকায়,অতিশয়, অত্যাচার শব্দগুলো আতিশয্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
• অতি মানব, অতিপ্রকৃত শব্দ দুটি অতিক্রম অর্থে ব্যবহৃত হয়।
১৯. আ- আকণ্ঠ, আমরণ, আসমুদ্র শব্দগুলো পর্যন্ত হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
• আদান, আগমন শব্দ দুটি বিপরীত অর্থ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
২০. অপি- অপনিহিত ,অসমীকরন ব্যাকরণ এর সূত্র হিসেবে শব্দগুলোর ব্যবহার রয়েছে।

বাংলা এবং সংস্কৃতি দুটি উপসর্গ থেকে মিল রয়েছে চারটি উপসর্গ 
  • আ,
  • সু
  • বি
  • নি
৩. বিদেশি উপসর্গ: বিদেশি উপসর্গ গুলো আবার কয়েকটি ভাগে বিভক্ত যেমন
• আরবি উপসর্গ: আম : আমদলবার, আমমোক্তার
• খাস: খাস খবর, খাসকামরা, খাস দরবার,খাসমহল
• নলা
• লাখেরাজ,লাওরাশ, লাপাত্তা, লাজওয়াব
• গর্- গরমিল গরহাজির, গররাজি অভাব অর্থে ব্যবহৃত হয়।

ছন্দে মনে রাখা - আম খাস লাগালিয়া
ইংরেজি উপসর্গ: 
  • ফুল
  • হাফ
  • সাব
  • হেড
ফারসি উপসর্গ
কার - কারসাজি, কারচুপি,কারদানি, কারবারি, কারখানায়
নিম্-নিমখুন, নিমরাজি
ফি- ফি বছর, ফি হন, ফি রোজ,
বদ্- বদমেজাজ, বেকসুর, বেকায়দায়, বেতার, বেকার
বে- বেয়াদব, বেকসুর, বেকায়দায়,
ব্-বমাল, বনাম, বিকলম
কম্- কমজোর, কমবখত

উর্দু হিন্দি উপসর্গ
হরমাহিনা, হরহামেশা, হরকিসিম, হররোজ- হর উপসর্গ 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url