বঙ্গভঙ্গের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

বঙ্গভঙ্গ কি?

বঙ্গভঙ্গ শব্দের অর্থ বঙ্গ মানে বাংলা ভঙ্গ মানে ভাগ করা। অর্থ দাঁড়ায় বাংলা ভাগ করা। বঙ্গভঙ্গ হয় ১৯০৫ সালে। বঙ্গভঙ্গ কে কেন্দ্র করে মুসলমান এবং হিন্দুদের মধ্যে ভাতৃত্ববোধ কমে যায়, পারস্পারিক রেষারেষি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা বেড়ে চলে।

কিছু নেতাদের উদার প্রচেষ্টা, বিভিন্ন উদ্যোগ মূলক কর্মসূচি একত্র করার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। নানাবিধ প্রচেষ্টার ফলে চূড়ান্ত পর্যায়ে ব্রিটিশদের রূপরেখা বাস্তবে রূপ লাভ করে। যার ফলশ্রুতিতে উভয় জাতির মধ্যে অবিশ্বাস এবং শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব গড়ে ওঠে। যার প্রেক্ষাপটেই ৪৭ সালে দেশ বিভক্ত হয়।

বঙ্গভঙ্গের পিছনের প্রেক্ষাপট সমূহ

লর্ড কার্জন ভারতের বড়লাট হিসেবে 1905 সালের 16 ই অক্টোবর বাংলা কে বিভক্ত করে। বিভক্ত তা মূলত বঙ্গভঙ্গ নামে পরিচিত। বঙ্গভঙ্গের আগে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার, মধ্যপ্রদেশ এবং আসামের কিছু অংশ নিয়ে বাংলা প্রদেশ বা বাংলা প্রেসিডেন্সি গঠিত হয়েছিল। ব্রিটিশরা বঙ্গভঙ্গ করার চিন্তাভাবনা অনেক আগে থেকেই করে রেখেছিল। বাংলা অংশের অংশ বড় হওয়ার কারণে 1853 সাল থেকে 1903 সাল পর্যন্ত সীমানা গুলোকে পুনঃবিন্যাস করে নতুনভাবে প্রদেশ গঠনের জন্য বৃটিশ সরকারের নিকট যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছিল। নিয়ামক পক্ষেই 1903 সালে বঙ্গভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত হয় এবং সেই অনুযায়ী 1904 সালে ব্রিটিশ সরকারের সচিব এটি অনুমোদন দেয় সর্বশেষ 1905 সালের জুলাই মাসে বঙ্গভঙ্গ ঘোষিত আকারে আসে। এই সময় ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জলপাইগুড়ি, আসাম, পার্বত্য ত্রিপুরা এবং মালদহ নিয়ে পূর্ব বাংলা এবং আসাম নামে নতুন প্রদেশ গঠিত হয়। এই প্রদেশগুলোর রাজধানী স্থাপন করা হয় ঢাকায়। অন্যদিকে পশ্চিম বাংলা, বিহার উড়িষ্যা নিয়ে গঠিত হয় পশ্চিমবাংলার প্রদেশ যার রাজধানী স্থাপন করা হয় কলকাতা।

বঙ্গভঙ্গের উল্লেখযোগ্য কারণ সমূহ

বঙ্গভঙ্গের পেছনে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য কারণসমূহ নিচে আলোকপাত করা হলো:

বঙ্গভঙ্গের আর্থসামাজিক কারণ

বঙ্গভঙ্গের পেছনে সামাজিক কারণে পিছনে আরেকটি কারণ ছিল সেটি হলো অর্থনৈতিক কারণ। তখন অর্থনৈতিক কার্যাবলীর রাজধানী হিসেবে পরিচিত হয় কলকাতা। শিল্প প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা বাণিজ্য, অফিস-আদালত, বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবকিছুই কলকাতা কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। উন্নয়নের প্রায় সবগুলোই কলকাতা কেন্দ্রিক হয়ে ওঠে। কলকাতার তুলনায় পূর্ব বাংলার অবস্থা ছিল অর্থাৎ ঢাকার অবস্থা ছিল নিতান্তই কম। পূর্ববাংলার অংশ থেকে সকল পণ্যের কাঁচামাল কলকাতা পাঠানোর ব্যবস্থা ছিল খুবই নাজেহাল। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে সবকিছুই ছিল এলোমেলো। যেসব কারণে পূর্ব বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে। উচ্চশিক্ষার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোন প্রতিষ্ঠানে না থাকায় এই অঞ্চলের লোকজন শিক্ষা থেকে অনেকটা পিছিয়ে পড়ে। যার ফলশ্রুতিতে বেকারত্ব, এবং অশিক্ষিত লোক সংখ্যা বেড়ে যায়।

বঙ্গভঙ্গের প্রশাসনিক কারণ

প্রশাসনিক কারণের মধ্যে অন্যতম ছিল বিভিন্ন কিছু সংস্কার করা। বাংলার তিন ভাগের দুই ভাগ লোক পূর্ব বাংলার অঞ্চলে বসবাস করত। প্রশাসনিক সকল কিছু কলকাতা কেন্দ্রিক গড়ে ওঠায় কলকাতা থেকে পর্ব বাংলা আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা অনেকটাই দুরূহ ছিল। যেসব কারণে লর্ড কার্জন এই অঞ্চলকে আলাদাভাবে প্রশাসনিক ইউনিট করার পক্ষে ছিল।


বঙ্গভঙ্গের রাজনৈতিক কারণ

লর্ড কার্জন শুধু আলাদা করার জন্যই প্রশাসনিক কারণগুলোই দেখায়নি এর পিছনে ব্রিটিশ সরকারের স্বার্থ ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। ভারতের অনেক ব্রিটিশ বিরোধী নেতারা কলকাতা কে কেন্দ্র করে সমগ্র ভারতবর্ষে আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য রূপরেখা তৈরি করেছিল। এসব কিছু লর্ড কার্জনের দৃষ্টিগোচর ছিল। তিনি সব সময় গুলোর খোঁজখবর রাখতেন। এদিকে মুসলিম-হিন্দু একত্রিত হয়ে ব্রিটিশদের তাড়ানোর জন্য নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বলে বাংলাকে ভাগ করার মাধ্যমে হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়কে আলাদাভাবে বিরক্ত করার চিন্তা শুরু হয়। অন্যদিকে পাকিস্তানের অংশ বাংলার অংশের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়। এতে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে দাঙ্গা-হাঙ্গামা আরও বৃদ্ধি পায়। এভাবে কার্জন যতটা বাংলাকে নিয়ন্ত্রণ রাখার উদ্দেশ্য ছিল তার চেয়ে বেশি উদ্দেশ্য ছিল বিভেদ ও শাসন নীতি।

বঙ্গভঙ্গের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

বঙ্গভঙ্গের কারণে বাংলার মানুষদের মধ্যেও নানা রকমের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। পূর্ববাংলার মুসলমানরা নবাব সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে বঙ্গভঙ্গ কে স্বাগতম জানায়। মুসলিম পত্র-পত্রিকা এবং সম্প্রদায়ের লোকজন হাসিমুখে মেনে নেয়। কারণ তারা জানে এর ফলে এই অংশে উন্নত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, মিল কারখানা চালু হবে যার মাধ্যমে এ অঞ্চলটা শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক দুই দিক দিয়েই সমান তালে এগিয়ে যাবে। অন্যদিকে এই আন্দোলনকে বয়কট করার জন্য হিন্দু সম্প্রদায় মনে পানে প্রচেষ্টা চালান। এই আন্দোলন অনেক উচ্চমানের রাজনীতিবিদ অংশগ্রহণ করে উল্লেখ করার মতো সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি, অরবিন্দ ঘোষ, অশ্বিনী কুমার দত্ত, বিপিনচন্দ্র পাল প্রমখ ব্যক্তিবর্গ। চরমপন্থী নেতাদের কারণে এই আন্দোলনের সঙ্গে সশস্ত্র কার্যকলাপ যুক্ত হয়।

বঙ্গভঙ্গ রদ

নানাবিধ ষড়যন্ত্র, রাজনৈতিক অস্থিরতা, জাতিগত দ্বন্দ্ব 1911 সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়। এ সময় বড়লাট ছিলেন লর্ড হার্ডিঞ্জ। যার সময় কার নির্মিত কুষ্টিয়ায় হার্ডিঞ্জ সেতু। এ সময় বৃটেনের মন্ত্রী ছিল ‌ রাজা দ্বিতীয় পঞ্চম জজ। 1911 সালে দিল্লির দরবারে বঙ্গভঙ্গ রদের ঘোষণা আসে।লর্ড হার্ডিঞ্জ প্রচেষ্টায় 12 ডিসেম্বর 1911 সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হয় এবং 20 জানুয়ারি 1912 তা কার্যকর হয়। বঙ্গভঙ্গের পর বাংলার গভর্নর হয় লর্ড কারমাইকেল। লর্ড কারমাইকেল রংপুরের কারমাইকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা।

চাকরি পরীক্ষা কেন্দ্রিক সেসব প্রশ্ন হতে পারে


Q. কার শাসনামলে বঙ্গভঙ্গ হয়?
Q. বঙ্গভঙ্গের সময় বড়লাট ছিল কে?
Q. বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করা হয় কত তারিখে?
Q. বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয় কত সালে?
Q. বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে ছিল হিন্দু কোন নেতা গুলো
Q. পূর্ব বাংলার পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন কে?
Q. নবাব সলিমুল্লাহ নেতৃত্ব মেনে নিয়েছিল কোন অংশের লোকজন?
Q. বঙ্গভঙ্গ রদ হয় কোন সাল?
Q. বঙ্গভঙ্গ রদ কার্যকর হয় কত সালে?
Q. বঙ্গভঙ্গের সময় বড়লাট ছিল‌ কে?
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url