পলাশীর যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
পলাশীর যুদ্ধ কি?
পলাশী একটি জায়গার নাম এই জায়গায়। ২৩ জন ১৭৫৭ সালে ঐতিহাসিক যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
সিরাজদৌলার পরিচয় কি?
সিরাজদৌলার পুরো নাম নবাব মনসুর উল মুলক সিরাজদুল্লাহ শাহ কুলি খান মির্জা মোঃ হযরত জং বাহাদুর। সিরাজের পিতার নাম জয়ন উদ্দিন আহমেদ এবং মাতার নাম আমিনা বেগম। ধর্ম ইসলাম পদমর্যাদা হিসেবে পেয়েছিলেন নবাবজাদা।সিরাজদৌলার কয়টি স্ত্রী ছিল
সিরাজদৌলার তিনটি স্ত্রী ছিল।- লুৎফুন্নেসা
- জেবুন্নেসা
- উমদেনেসা
পলাশীর যুদ্ধ প্রারম্ভিক ঘটনাপ্রবাহ
১৭৪০ সাল থেকে ১৭৫৬ পর্যন্ত আলীবর্দী খান এবং বাংলা-বিহারের নবাব ছিলেন। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও তিনি সফলভাবে রাজ্য পরিচালনা করত। বর্গীদের মারাঠীদের শক্ত হাতে দমন করতে সক্ষম হয়েছিল। সুদক্ষতার কারণে ইংরেজ বণিক কোম্পানি কেউ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছিল। নবাব আলীবর্দী খানের মৃত্যুর পর বাংলার শাসনকার্যে ভীষণ ঘোলা দেখা যায়। নবাবের মৃত্যুর আগে তার কনিষ্ঠ কন্যা আমিনা বেগম এর পুত্র সিরাজউদ্দৌলাকে বাংলার সিংহাসন এর জন্য মনোনীত করেন। ১৭৫৬ সালে আলীবর্দী খানের মৃত্যু হলে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে নবাব ক্ষমতা গ্রহণ করে।
সিংহাসনে বসার পর দিন থেকেই নানামুখী ষড়যন্ত্রের শিকার হতে থাকে নবাব সিরাজদুল্লাহ বিশেষত আলীবর্দী খানের জ্যেষ্ঠ কন্যা ঘষেটি বেগমের দেওয়া নিতে এবং খালাতো ভাই শওকত জং এর সহোদরদের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। পারিবারিক বিদ্রোহ গুলো নবাব কৌশলে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেও বাইরের ষড়যন্ত্র তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বাধ্য করে। তার বিরোধিতা হয়েছিল তার প্রধান সেনাপতি মীর জাফর, অশ্বসেনের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী, রাজ্যের অন্যতম ব্যক্তিবর্গ। এসব কিছুই পলাশীর যুদ্ধের পটভূমি তৈরি করতে বাধ্য করে।
ঐতিহাসিক পলাশী যুদ্ধের কারণ
ঐতিহাসিক যেসব ঘটনা প্রবাহ ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটাতে পারে তার মধ্যে পলাশীর যুদ্ধ অন্যতম একটি।
- নবাবের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কলকাতায় দুর্গ নির্মাণ করা হয়।
- নবাব সিরাজদুল্লাহ সিংহাসনে বসার পর থেকেই নিয়ম অনুযায়ী ইংরেজরা উপঢৌকন পাঠাতো। তবে তার ক্ষেত্রে সে ধরনের কোনো সৌজন্য মূলক আচরণ হয়নি।
- নবাব আলীবর্দী খানের সঙ্গে যেসব চুক্তি করা হয়েছিল সেসব চুক্তি অস্বীকৃতি জানায়। এছাড়া নতুন সাধারন জনগনের উপর নানা ধরনের নির্যাতন শুরু করেন।
- ইংরেজ কোম্পানি দস্তকের ব্যবহার অবৈধভাবে করলে ব্যবসায়ী বণিক শ্রেণি ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। নবাবের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে চাইলে ইংরেজদের কাছে কোন সন্তুষ্টজনক প্রস্তাব পাইনি।
- রাজা রাজবল্লভের পুত্র কৃষ্ণ দাস তার পরিবারসহ সদস্যগণ প্রচুর ধন-সম্পদ নিয়ে কলকাতায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। তাকে ফেরত দেওয়ার জন্য নবাব ইংরেজিতে নিকট বিশেষ অনুরোধ জানায় এর বিপরীতে নবাব কে অপমান করে ফেরত দেয়নি বরং তাড়িয়ে দেন।
- একের পর এক জঘন্যতম আচরণের জন্য নবাব খুব ক্ষুব্ধ হয়। ইংরেজদের চরম শিক্ষা দেওয়ার জন্য ১৭৫৬ সালে কলকাতার দুর্গ দখল করে নেয় এবং নবাব অতর্কিত হামলা চালিয়ে ফটো উইলিয়াম দুর্গ দখল করে। কিছু ইংরেজরা এখান থেকে পালিয়ে যায় এবং বাকিগুলো আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এই ধারাবাহিকতায় কিছু ইংরেজি বন্দীশালায় বন্দী হয়। বন্দিশালা থেকে তারা মুক্তি পেয়ে নবাবের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চালায়, নবাবের মিথ্যা প্রচারণা লিপ্ত হয়, এরই সূত্র ধরে অন্ধকূপ নামে হত্যাযজ্ঞ চলে। মিথ্যা প্রচারণা মধ্য ছিল মাত্র ১৮ ফুট দীর্ঘ এবং ১৪.১০ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট ঘরে ১৪৬ জন ইংরেজিকে বন্দি করে রাখা হয়। প্রচণ্ড গরমে তারা আর শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করে। এই বানোয়াট খবর খোদ মাদ্রাজ পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
- মাদ্রাজ থেকে ওয়াটসন এবং ক্লাইভ কলকাতায় চলে আসে তারা নবাবের সেনাপতি মানিক চাঁদ কে পরাজিত করে পুনরায় কলকাতা দখল নেয়। নানাবিধ ষড়যন্ত্রের কারণে নবাব ইংরেজিতে সাথে সন্ধি করতে বাধ্য হন। এই অপমান যোগ্য সন্ধি ইতিহাসে আলীনগর সন্ধি নামে পরিচিত।
- আলিনগর সন্ধির কারণে ক্লাইভের উচ্চাকাঙ্খা আরো বৃদ্ধি পায়।
পলাশীর যুদ্ধের দিনের ঘটনা
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ভাগীরথী নদীর তীরে পলাশের আম কাননে ঐতিহাসিক পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে লর্ড ক্লাইভ সন্ধি ভঙ্গের অজুহাত দেখিয়ে যুদ্ধ বাধিয়ে দেয়। নবাব সিরাজউদ্দৌলার পক্ষে যুদ্ধ করে মীরমদন , মোহনলাল, ফরাসি সেনাপতি সিন ফে । এই ঐতিহাসিক যুদ্ধে নবাবের পক্ষের লোক মীর মদন নিহত হন। নবাবের বিজয় জেনে মির্জাপুর ষড়যন্ত্রমূলকভাবে যুদ্ধ থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন এবং থামিয়ে দেন।মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতা আর মীর মদনের নিহত হওয়ার ঘটনা নবাব সিরাজউদ্দৌলার কে খুবই চিন্তিত করে। তিনি ব্যথিত হৃদয় নিয়ে কোনমতে যুদ্ধ চালিয়ে শেষ পর্যন্ত পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের কারণ
- মীর জাফর এবং তার সহযোগীদের যুদ্ধক্ষেত্রে সহযোগিতা না করা, ও বিশ্বাস ভঙ্গ।
- মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতা খবর পেয়ে তার উপর নির্ভরশীল থাকা
- অপরদিকে নবাব এর সূত্র পক্ষ ছিল অক্ষ বদ্ধ এবং রণকৌশলে উন্নত
- রবার্ট ক্লাইভ ছিল সুচতুর ব্যক্তি, কুট বুদ্ধি সম্পন্ন, দূর দর্শি
- যুদ্ধক্ষেত্রে নবাব দ্রুত সিদ্ধান্ত পরিচয় গ্রহণে ব্যর্থ হয়।
- তরুণ নবাবের নেতৃত্বের অভাব, বিচিত্র ও বিচক্ষণতার অভাব।
পলাশীর যুদ্ধের চূড়ান্ত ফলাফল
- নবাব সিরাজ দৌলার মৃত্যুর পর বাংলায় মুসলিম শাসনের অবসান ঘটে বাংলা শেষ স্বাধীন নবাব হারায়।
- যুদ্ধে নবাবের পরাজয়ের পর মীরজাফর নামেমাত্র নবাব হন মূল ক্ষমতা লাভ করেন লর্ড ক্লাইভ।
- যুদ্ধের পর ইংরেজদের স্বার্থ হাসিল হয়, ইংরেজরা এদেশে একচেটিয়া ব্যবসা বাণিজ্যের অধিকার লাভ করে
- এই যুদ্ধের রাজনৈতিক এবং অর্থনীতিতে বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসে।
- এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ইংরেজরা প্রায় ২০০ বছরের শাসন শুরু করে অর্থাৎ ১৯০ বছর সময় ইংরেজরা শাসন করে।
- যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ভারতে বাংলাদেশের স্বাধীন সূর্য স্তমিত হয়, আমরা হারায় শেষ স্বাধীন নবাব।
পলাশীর যুদ্ধ থেকে শিক্ষা
স্বাধীনতা পর্যালোচনা করে দেখা যায় নবাবের সাথে বিশ্বাসঘাতক পরবর্তীতে সুখী জীবনযাপন করতে পারেনি। বরং পদে-পদে তারা লাঞ্ছিত অপমানিত হয়েছে। তারা বিভিন্ন দূরারোগ এমনকি কেউ কেউ নিজের আত্মহত্যা করে দুনিয়া থেকে ন্যাক্কারজনকভাবে বিদায় নিয়েছে।
এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় বিশ্বাসঘাতকতা এর পরিচয় খুব ভয়াবহ। এছাড়া কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত করতে প্রথমেই যাচাই-বাছাই করে বসাতে হয়। অল্প বয়সী সিরাজ এর নেতৃত্ব অনেকেই মেনে নিতে পারেনি এছাড়া দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, দূরদর্শিতা এগুলোর অভাব সিরাজের মধ্যে ছিল।