ট্রেসার মৌল|Trace elements

ট্রেস মৌল বা কণামাত্র মৌল কী?

কোন অর্গানিজমে যে সকল মৌল খুব অল্প পরিমাণে বা খুব সামান্য পরিমাণে দরকার তাদেরকে ট্রেস মৌল বা কণামাত্র মৌল (Trace elements) বলে।

১। ট্রেসার মৌলগুলো অত্যন্ত অল্প পরিমাণে উদ্ভিদ ও প্রাণির পক্ষে অপরিহার্য।
২। শতকরা এক ভাগেরও কম পরিমাণে ট্রেস মৌলসমূহ কোন খনিজে বর্তমান বিশ্লেষণে দেচিৎকারিকেন পদ্ধতি ও জানের রোগ
৩। উদাহরণ হিসাবে লোহা, তামা, ম্যাঙ্গানিজ প্রভৃতি উদ্ভিদের পক্ষে এবং লোহা, তামা, আরোি লাগির পক্ষে ট্রেস মৌল হিসাবে ভূমিকা পালন করে।

ট্রেসার মৌলের উপাদান


ট্রেসার বা ট্রেসার মৌল হলো একটি বহিরাগত কথা বাহ্যিক পদার্থ যা সাধারণত তেজস্ক্রিয় এবং মূলত আইসোটোপ, যা অন্য কোন পদার্থের সাথে মিশিয়ে বা যুক্ত করে ওই বহিরাগত পদার্থের অবস্থান, গতিবিনি ত বণ্টন উপযুক্ত পদ্ধতি দ্বারা বিশেষভাবে লক্ষ্য করা হয়।

আরো সহজ ভাষায়, যে সকল বাহ্যিক তেজস্ক্রিয় পদার্থ কোন নির্দিষ্ট পদার্থের সাথে যুক্ত করে মিশিয়ে দেয়া হয় যাতে দ্বিতীয় বস্তুর বন্টন ও উপস্থিতি নির্ণয় করা যায় তাদেরকে ট্রেসার মৌল বা অনুজ্ঞাপক মৌল (Tracer elements) বলে। 

যেমনঃ কার্বন -14 একটি ট্রেসার মৌল। নিম্নে কতিপয় ট্রেসার মৌল ও তাদের প্রয়োগ আলোচনা করা হলো:

১। আয়রন -59 শরীরের রক্তের পরিমাণ নির্ণয়ে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা হয়।
২। সোডিয়াম -24 যা রেডিওসোডিয়াম নামে পরিচিত  রেডিওসোডিয়াম দ্বারা শরীরের রক্ত সঞ্চালন পরীক্ষা করা হয়।
৩। আয়োডিন -131 মস্তিষ্কে টিউমার নির্ণয়ে ব্যবহার করা হয় ।
৪। ফসফরাস -32 আইসোটোপ লেবেলযুক্ত খাবার রোগীকে খাইয়ে পলিসাইথেমিয়া ভেরা রোগ প্রশমন করা হয়।

ট্রেসিং বা তেজস্ক্রিয় ট্রেসিং কী?

কোন যৌগের একটি সুস্থিত আইসোটোপকে একই মৌলের তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ দ্বারা প্রতিস্থাপনই হলো ট্রেসিং বা তেজষ্ক্রিয় ট্রেসিং। একে লেবেলিংও বলা হয়। যে পদার্থের সাথে ট্রেসার মৌল যুক্ত করা হয় তাকে ট্রেসিং মৌল বা লেভেলড পদার্থ (Tracing element or lavelled element) বলে। যেমনঃ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিভিন্ন আইসোটোপ বিভিন্ন গতিতে বিক্রিয়া সংঘটিত করে।

ট্রসার কৌশল কি

রেডিওফ্যামিকেল পদ্ধতি ও তাদের প্রয়োগ ট্রেসার কৌশল বা অনুসরণ কৌশল (Tracer technique) - (কোন পরীক্ষায় বা যে কৌশলে মৌলসমূহ তেজস্ক্রিয় হলে অথবা তেজষ্ক্রিয় মৌল ব্যবহার করে কোন মৌলের প্রকৃতি, উপস্থিতি, ঘন্টন, গতিবিধি, ধর্মাবলী, বিক্রিয়ার কৌশল, প্রয়োগ ও পরিমাণ নির্ণয় করা হয় তাকে। ট্রেসার কৌশল বা অনুসরণ কৌশল (Tracer technique) বলে।

ট্রেসার কৌশল বা অনুসরণ কৌশলের প্রধান বৈশিষ্ট্য


১. হালকা হাইড্রোজেন আইসোটোপিক ট্রেসার কৌশলে বেশি ব্যবহৃত হয়। কারণ হালকা মৌলসমূহের আইসোটোপের সাথে আইসোটোপিক ভগ্নাংশের তরের পার্থক্য বেশি থাকে।

২। ট্রেসার আইসোটোপের তেজস্ক্রিয়তা শুধুমাত্র চিহ্নিতকরণের সময় বিবেচ্য। কারণ আইসোটোপীয় ট্রেসার পরমাণু তাদের তেজস্ক্রিয় গুণে চিহ্নিত হয়।

৩। হাইড্রোজেন ট্রেসার কৌশলে ডিউটেরিয়ামের যথেষ্ট প্রয়োগ রয়েছে।
৪। কৌন বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে যদি ট্রেসার সহ - অধ্যক্ষেপসহ হয় তবে বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে রাসায়নিক বা বর্ণালীমিতিক পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হয়।
৫। তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ রাসায়নিক বা জৈবিক প্রক্রিয়া দ্বারা প্রভাবিত হয় না। এ কারণে ট্রেসার কৌশল use হয়।
৬। অধিকাংশ ট্রেসার কৌশলই সাধারণ কার্বন দ্বারা সম্পন্ন করা হয়।

ট্রেসার কৌশল বা অনুসরণ কৌশলের ত্রুটি

১। সুবিধাজনক অর্ধায়ুবিশিষ্ট কতিপয় জানা সক্রিয় মৌলের আইসোটোপের অনুপস্থিতি তেজস্ক্রিয় ট্রেসার 700D ধর্ম প্রোটিয়াম থেকে অনেক আলাদা।
২। হাইড্রোজেন ট্রেসার কৌশলে ডিউটেরিয়ামের যথেষ্ট প্রয়োগ থাকলেও ঢিট্রিায়ামের প্রয়োগ নেই কারণ এর
৩। ব্রোমিনের ট্রেসার হিসাবে Br (অর্ধায়ু = 45 ঘন্টা) ব্যবহৃত হলে তাতে রাসায়নিক প্রভাবজনিত কারণে ক্ষুদ্র সমাণুক অবস্থাবিশিষ্ট 80MBr (অর্ধায়ু = 18 মিনিট) মিশ্রিত থেকে তারা সাম্যাবস্থা নির্দেশ করে। ব্রোমিন সমাণুর সাথে ব্যবহার করা যায় শুধুমাত্র যখন পৃথককৃত নমুনা 45 ঘন্টা ধরে ক্ষয় লেখচিত্র থেকে বিশ্লেষণ করা হয় এবং 18 মিনিটের তুলনায় অনেক দীর্ঘ সময় ধরে পরিমাপ করা হয়। এ ধরনের ঘটনা অধিকাংশ ট্রেসার আইসোটোপের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় না। বরং উচ্চ বা নিম্ন সক্রিয়তাসম্পন্ন পরীক্ষণে প্রতিহত করে।
4। আয়নিক রশ্মির ফলে উদ্ভূত সম্ভাব্য রাসায়নিক ফলাফল সাধারণ ট্রেসার সক্রিয়তা দ্বারা প্রশমিত হয় না। বর্ণালীমিতিক পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হয়।
5। কোন বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে যদি ট্রেসার সহ - অধক্ষেপসহ হয়।
  

টেসার কৌশলের প্রয়োগ


রক্ত কণিকার জীবন কাল নির্ধারণ লোহিত রক্ত কণিকার জীবনকাল নির্ণয়ে রেডিওআইসোটোপ অনবদ্য ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে সাধারণত Fe- রেডিওআইসোটোপ ব্যবহ 45 Fe আইসোটোপ ব্যবহার করে লোহিত রক্ত কণিকার জীবনকাল প্রায় ১২০ দিন পাওয়া গেছে।

২। থাইরয়েড গ্রন্থির রোগ নির্ণয় –  যেমনঃ রেডিও আইসোটোপ প্রয়োগ করে থাইরয়েড গ্রন্থির আকার, প্রকার ও এর কোষ কর্তৃক আয়োডিন গ্রহণের ক্ষমতা নির্ণয় করা হয় যা হতে থাইরয়েড গ্রন্থির রোগ নির্ণয় করা সম্ভব অধ বিশ্লেষণে রেডিওক্যামিকেল পদ্ধতি ও তাদের প্রয়োগ।

৩। Pernicious anaemia নির্ণয়- প্রয়োগের মাধ্যমে এ রোগ নির্ণয় করা হয়। এ কারণে ব্যবহারের মাধ্যমে এ রোগ নির্ণয় করা হয়। ভিটামিন B12 এর সাথে 6Co আইসোটোপ সংযোজিত করে Co আইসোটোপবিশিষ্ট ভিটামিন- B12 ব্যবহারের মাধ্যমে এ রোগ নির্ণয় করা যায়।
৪। যকৃতের কার্যকারিতা নির্ণয় - রেডিওআইসোটোপ ব্যবহার করে যকৃতের কার্যকারিতা নির্ণয় করা হয়।
৫। যকৃতের টিউমার নির্ণয়— যকৃতের টিউমার এবং টিউমার সৃষ্টিকারী রোগ - ব্যাধি নির্ণয়ে রেডিওআইসোটোপবিশিষ্ট ঔষধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। Cr নামক রেডিওআইসোটোপকে লোহিত রক্ত কণিকার সাথে ব্যবহার করে খুব সহজেই টিউমার নির্ণয় করা সম্ভব।
৬। প্লীহার টিউমার নির্ণয় 51 cr use হয়।
৭। রক্তের প্লাজমার পরিমাণ নির্ণয় 131I আয়োডিন ব্যবহার করা হয়। রেডিওআইসোটোপ ব্যবহার করে রক্তের প্লাজমার পরিমাণ নির্ণয় করা যায়।
৮। মস্তিষ্কের টিউমার নির্ণয়- 197 Hg ও (Hg রেডিও আইসোটোপ প্রয়োগ করে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কের টিউমার নির্ণয় করেছেন। সাধারণতঃ অ্যাজিওগ্রাফীর মাধ্যমে এ টিউমার নির্ণয় করা হয়। অনেক সময় উপরোক্ত আইসোটোপগুলোর সাহায্যে টিউমার নির্ণয় করা সহজ হলেও অপসারণ সহজ হয় না। তাই এসব ক্ষেত্রে Co গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

৯। অগ্ন্যাশয়ের কার্যক্রমের অপর্যাপ্ততা ও ফুসফুসের টিউমার নির্ণয়— রেডিওআইসোটোপ ব্যবহার করে অগ্ন্যাশয়ের কার্যক্রমের অপর্যাপ্ততা ও ফুসফুসের টিউমার নির্ণয় করা যায়।

১০। হাড় বা অস্থির টিউমার নির্ণয় হাড় বা অস্থি ক্যান্সার অথবা অস্থি টিউমার উভয় সনাক্তকরণ ও চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের (প্রযোজ্য ক্ষেত্র) রেডিওআইসোটোপ ব্যবহার করা হয়।
১১। রক্তের আয়তন নির্ণয়— দেহের রক্ত ও রক্তের সিরাম মাপার জন্য বর্তমানে রেডিও আইসোটোপজনিত মনুষ্য সিরাম এলবুমিন একত্রে ব্যবহার করতে হয়।
১২। বৃক্কের কার্যকারিতা নির্ণয়—
১৩। রক্তের ক্ষতি ও হ্রাসের পরিমাণ নির্ণয়– কোন দুর্ঘটনাজনিত কারণে দেহ হতে নির্গত রক্তের পরিমাণ নির্ণয়ে কি পরিমাণ রক্তের হ্রাস বা ক্ষতি ঘটলো তা রেডিওআইসোটোপের মাধ্যমে বের করা যায়।
১৪। কোষের পরিচালন ও কোষে ঔষধের ভেদ্যতা নির্ণয়– রেডিওআইসোটোপ ব্যবহার করে দেহের অভ্যন্তরভাগের ঔষধের পরিমাণ এবং কোষে ঔষধের ভেদন ক্ষমতা ও ভেদ্যতার হার নির্ণয় করা সম্ভব।



ট্রেসার কৌশলে কৃষিক্ষেত্রে রেডিওআইসোটোপের প্রয়োগ— 

১। ট্রেসার কৌশলের মাধ্যমে রেডিওআইসোটোপ প্রয়োগ করে মাটির আণবিক গঠন এবং মাটির কণার আকার ও আয়তন নির্ণয় করা যায়। 
২। মাটির রাসায়নিক গঠন ও মাটির কণার অভ্যন্তরভাগের বায়ুর সঞ্চালনও রেডিওআইসোটোপের সাহায্যে জানা যায়। 
৩। মাটি হতে গাছের পুষ্টি আহরণ সম্পর্কে তথ্য জানতে রেডিওআইসোটোপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
 ৪। সারবিষয়ক গবেষণায় রেডিওআইসোটোপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যেমনঃ 
(i) বিভিন্ন ফসলের বৃদ্ধি প্রক্রিয়া তরান্বিতকরণ
(ii) মাটির উৎপাদন ক্ষমতা উন্নয়ন 
(iii) বিভিন্ন ধরনের জৈব রাসায়নিক ও জৈব সারের বিশ্লেষণ 
(iv) কৃষি ক্ষেত্রে সার প্রয়োগ সুষ্ঠু হচ্ছে কিনা তা চিহ্নিতকরণ ।
৫। গাছের পুষ্টি ও শারীরবৃত্তীয় সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে রেডিওআইসোটোপ প্রয়োগ করা হয়।
৬। রেডিওআইসোটোপের সাহায্যে উদ্ভিদদেহে মূল হতে পাতা পর্যন্ত খনিজ পদার্থের স্থানান্তর ও সমগ্র উদ্ভিদদেহে এর পুনর্বিন্যাস সম্পর্কে জানা যায়। যেমনঃ S এর সালফেট লবণ প্রয়োগ করে বিট - চিনি গাছের উপরোক্ত প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। 
  
৭। কোন গাছের জীবনকাল ও সংশ্লিষ্ট গাছটি কি পরিমাণ পুষ্টি গ্রহণ করে তা রেডিওআইসোটোপ ব্যবহার করে জানা সম্ভব। এক্ষেত্রে সাধারণতঃ ফসফেট সারে P- রেডিও আইসোটোপ ব্যবহার করা হয়। 
৮। কীট পতঙ্গের গতিপথ অনুসরণ ও কৃষি প্রকৌশলের উন্নতিসাধনে রেডিওআইসোটোপ ব্যবহার করা হয়। রেডিওআইসোটোপ ব্যবহার করে ফসল নষ্টকারী বিভিন্ন কীট  পতঙ্গ ধ্বংস বা নিষ্ক্রিয় করা যায়। 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url