চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কাকে বলে?
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হলো নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব পরিষদের মাধ্যমে জমিদারদের নিজ নিজ জমির ওপর মালিকানা দান করে যে বন্দোবস্ত চালু করা হয় তাকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বলা হয়।
কোথা থেকে এলো চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত: রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি এবং স্থায়ী অনুরক্ত সৃষ্টির মাধ্যমে ১৭৮৯ সালে ১০ সালা বন্দোবস্ত চালু করেন। লর্ড কর্নওয়ালিস ২২ মার্চ ১৭৯৩ সালে ১০ সালা বন্দোবস্ত কে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হিসেবে ঘোষণা করেন। এখানে উল্লেখযোগ্য যে সূর্যাস্ত আইন নামে যে আইন ছিল তিনি সে আইনের বলবৎ করেন।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কখন চালু করা হয়: ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিস সর্বপ্রথম চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত যার অপর নাম স্থায়ী ভূমি ব্যবস্থা চালু করেন।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কেন হয়
সর্বপ্রথম ১৭৭২ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস পাঁচশালা বন্দোবস্ত চালু করেছিলেন। এই পাঁচশালা বন্দোবস্ত উদ্দেশ্য ছিল উচ্চ হারের ডাক নিয়ে কৃষকদের হতে রাজস্ব আদায় করা। রাজস্ব আদায়ের জন্য নির্দিষ্ট সময় সীমা ছিল। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্য রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থ হলে অর্থাৎ কৃষকরা রাজস্ব কর দিতে ব্যর্থ হলে তাদের উপর নেমে আসত অমানবিক নির্যাতন। কিন্তু কৃষকদের আর্থিক উন্নয়ন কিংবা জমির উন্নয়নের ব্যাপারে জমিদারে কোনো লক্ষ্য ছিল না। এত নির্যাতনের কারণে কৃষকরা চাষাবাদ না করেই পালিয়ে যেত। যার পরিপ্রেক্ষিতে বছরের-পর-বছর জমিগুলো অনাবাদি হয়ে থাকতো। বাংলা বিহার, উড়িষ্যার রাজস্ব সমস্যা সমাধানের জন্য ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টে তৎকালীন সময়ে নতুন আইনে ব্যবস্থা উদ্ভাবনের দরকার বলে মনে করেন। এরই প্রেক্ষিতে ১৭৮৪ সালে পিটের ইন্ডিয়া অ্যাক্ট প্রবর্তিত হয়। ফলে আইন পরিবর্তন করে ১৭৮৬ সালে ১০ সালা ব্যবস্থা কে চেঞ্জ করা হয়। ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করা হয়।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য:
১. নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের শতে জমিদার জমিদারের চিরস্থায়ী অধিকার লাভ করে।
২. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হওয়ায় জমিদারদের প্রশাসনিক ক্ষমতা বিলুপ্তি হয়। যার জন্য জমি তাদের অত্যাচার থেকে সাধারণ কৃষক, সাধারণ মানুষ রক্ষা পায়
৩. সরকার স্বয়ং শান্তিরক্ষা এবং জনগনের পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করে। যার বিনিময় সাধারণ শ্রেণীর লোক কৃষিজমি চাষবাস করতে আগ্রহ প্রকাশ করে।
৪. খাজনা বকেয়া পড়লে জমিদার'দের ভূমির কিছু অংশ বিক্রি করে রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা করা যেত।
৫. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত মাধ্যমে জমিদারগণ জমির মালিক হিসেবে পরিগণিত হয়। যার ফলে জমিদারগণ জমির মালিকানা হিসেবে বিবেচিত হতো।
৩. সরকার স্বয়ং শান্তিরক্ষা এবং জনগনের পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করে। যার বিনিময় সাধারণ শ্রেণীর লোক কৃষিজমি চাষবাস করতে আগ্রহ প্রকাশ করে।
৪. খাজনা বকেয়া পড়লে জমিদার'দের ভূমির কিছু অংশ বিক্রি করে রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা করা যেত।
৫. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত মাধ্যমে জমিদারগণ জমির মালিক হিসেবে পরিগণিত হয়। যার ফলে জমিদারগণ জমির মালিকানা হিসেবে বিবেচিত হতো।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের উল্লেখযোগ্য সুযোগ-সুবিধা
এ ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে সরকার তার নিজস্ব আয় ব্যাপারে জানতে পারত। যার মাধ্যমে বাজেট গ্রহণ, বার্ষিক পরিকল্পনা, পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা সহজ হত।
এই ব্যবস্থার মাধ্যমে সাধারণ কৃষক উপকৃত হলেও জমিদার শ্রেণীর লোকজন সরকারের খুব কাছের এবং ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কারণ এই তারা জমির মালিকানা হিসেবে পরিগণিত হয়। যার ফলে ব্রিটিশ শাসন দূর করুন, সহজতর হয়।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কারণে জমিদারগণ নিজস্ব ভূমির মালিক হওয়ায় তাদের মন উদাস হয়ে ওঠে। কিছু ক্ষেত্রে তারা অনিয়ম করলেও অনেক জনকল্যাণ কাজেও এগিয়ে আসে। তারা একের পর এক স্কুল কলেজ, নলকূপ, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে। বাংলাদেশের জমিদারদের উল্লেখযোগ্য অনেক কিছুই নির্দেশন করার মত রয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনো জমিদারদের পুরাকীর্তি রয়েছে। টাঙ্গাইলের রণদাপ্রসাদ সাহা, মানিকগঞ্জ তেওতা জমিদার বাড়ি, মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ, টাঙ্গাইলের কুমদিনী সরকারি কলেজ এছাড়া প্রায় প্রতিটি জেলায় জমিদারদের স্থাপনা রয়েছে। এই সময় তারা অনেক অনাবাদি জমি কৃষকদের উৎসাহ জাগিয়ে চাষের ব্যবস্থা করেন।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সমস্যা
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত জমির সঠিক পরিমাপ না থাকায় অনেক সময় কম জমিতে বেশি পরিমাণ কর দিতে হতো। যার কারণে পরবর্তীতে অনেক সময় মামলা মোকদ্দমা জড়িয়ে পড়তে হতো। সূর্যাস্ত আইন বহাল থাকায় অনেক বড় বড় জমিদার তাদের জমিদারিত্ব হারাতে। জমিদার তাদের নিজস্ব অর্পিত দায়িত্ব সাধারণ নায়েব গোমস্তা দের উপর দিয়ে বসবাস করত। তাদের অত্যাচারে সাধারণ পেশার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠতো। ফলে কৃষক জমির উৎপাদন কমে যেত। তখনকার সময় জমি ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। যার যত জমি ছিল সে তত আভিজাত্যের অধিকারী ছিল। ফলে অনেকেই জমিদারি কিনে বিভিন্ন কোম্পানির সাথে ব্যবসা করে আভিজাত্যের অধিকারী হয়ে ওঠে।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সারসংক্ষেপ
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে জমিদারগণ নিজস্ব ভূমির মালিক হয় এবং কৃষকগণ কিছু ক্ষেত্রে বঞ্চিত হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুবিধা ভোগ করে ক্ষেত্রে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ এবং জমিদার শ্রেণীর মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি হয়। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে শিক্ষিত অংশ আস্তে আস্তে সচেতন হয়ে বৈষম্য দূরীকরণের জন্য জেগে উঠতে থাকে। এর মাধ্যমে ব্রিটিশ রাজ উৎখাতের জন্য স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়। সমগ্র ভারত উপমহাদেশে নতুন জাতীয়তাবাদ বিকশিত হয়।