প্রলম্বিত কণা‌ কি?

সিমেন্ট ও অ্যাসবেস্টস কারখানা, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ধাতু নিষ্কাশন, পাথর ভাঙ্গা কারখানা, কাঠ, কয়লা, খনিজ তেলের অসম্পূর্ণ দহনে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধূলিকণা বাতাসে মিশে। বায়ুতে প্রলম্বিত এই সকল ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কঠিন ও তরল কণাকে particulates প্রলম্বিত কণা বলা হয়।

এ কণাগুলোর ব্যাস 0.00002um থেকে 500um। ক্ষুদ্রতম ব্যাসের কণাগুলোকে এরোসল বলে। ধোঁয়া, ধূলিকণা, ধাতব কণা, ধাতব অক্সাইড, ধাতব লবণের কণা, ছাই, অ্যাসবেস্টস কণা প্রভৃতি প্রলম্বিত কণারূপে বায়ু দূষণ ঘটায়। এছাড়া H2SO4, HNO3 সূক্ষ্ম কণা রূপে বায়ুতে থাকতে পারে।

প্রলম্বিত কণার ক্ষতিকর প্রভাব: প্রলম্বিত কণাগুলোর মধ্যে যে কণা ক্ষুদ্রতর সেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ 5u এর চেয়ে ক্ষুদ্র কণাগুলোকে নাক গহ্বর ধরে রাখতে পারে না, এগুলো সরাসরি শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে ফুসফুসে প্রবেশ করে। এ কণাগুলোর পৃষ্ঠদেশের ক্ষেত্রফল বেশি হওয়ায় বিভিন্ন ক্যান্সার সৃষ্টিকারী দূষক পদার্থের সিংক হিসেবে কাজ করে।

বিভিন্ন পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন, অ্যাসবেস্টস প্রভৃতিকে এ কণাগুলো বহন করার ফলে ক্যান্সার, হাঁপানি, যক্ষ্মা প্রভৃতি রোগ সৃষ্টি হয়। এ ধরনের প্রলম্বিত কণার প্রভাবে— মোটর গাড়ির নির্গত ধোঁয়ার মধ্যে উপস্থিত লেড কণিকাসমূহ শিশুদের মস্তিষ্কের ক্ষতিসাধন করে ও স্নায়ুঘটিত রোগের সৃষ্টি করে।

লেড কণিকার প্রভাবে রক্তে লোহিত কণিকার উৎপাদন ও বিকাশ ব্যাহত হয়। কয়লা খনির শ্রমিকেরা কালো ফুসফুস রোগ এবং কাপড় কলের শ্রমিকেরা সাদা ফুসফুস রোগে আক্রান্ত হয়। অ্যাসবেস্টস কারখানার শ্রমিকেরা অ্যাসবেস্টোসিস রোগে আক্রান্ত হয়।

সিমেন্ট কারখানার শ্রমিকেরা তাদের ফুসফুসের সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত হয়। কারণ তারা প্রতিনিয়ত শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে SiO2 যুক্ত ধূলিকণা গ্রহণ করে। 

সর্বোপরি, বায়ুতে প্রলম্বিত কণা বেশি থাকলে উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া দারুনভাবে ব্যাহত হয়। কারণ— এ সব কণার প্রভাবে গাছের পাতার ছিদ্র পথগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এতে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও ফসলের উৎপাদন হ্রাস পায়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url