মানুষের রক্তে pH এর ভূমিকা

রক্তের pH কী?

মানুষের শরীরের বিভিন্ন প্রকারের তরল যথা রক্ত, মূত্র ইত্যাদির অম্লত্ব ও ক্ষারত্বের সমতা সুষমভাবে বজায় রাখা হয় যাতে তরল পদার্থগুলো সুচারুরূপে শারীরবৃত্তীয় কাজ সম্পন্ন করে। ফলে মানুষের জীবন নির্বিঘ্নে চলে।

রক্তের pH এর স্বাভাবিক মান কত?


রক্তের pH এর স্বাভাবিক মান 7.4। কিন্তু মূত্রের pH এর একটি পরিসর থাকে 4.5 থেকে ৪। জৈবিক ও শ্বসন ক্রিয়ার ফলে pH মান স্বাভাবিক মানের চেয়ে কম বা বেশি হয়। তখন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ - প্রত্যঙ্গ অত্যন্ত সূক্ষ্ম কর্মকান্ডের মাধ্যমে pH মান স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করে। তখন রক্তের pH স্থির রাখার জন্য রক্তে বিদ্যমান কার্বনেট ও ফসফেট বাফার যৌথভাবে কাজ করে। আমাদের শরীরে রক্তের pH আহার্য্য খাদ্যের প্রকৃতির ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল।

সুতরাং রক্তের pH আমাদের খাদ্য যা আমরা খাই এবং ও সকল খাদ্য শরীরের যেরূপ জৈবিক পরিবর্তনে অংশ নেয় তা দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হয়। শরীরের বিভিন্ন তরলের কতিপয় খাদ্য যেমন লেবুর রস অম্ল প্রকৃতির হলেও শরীরের অভ্যন্তরীণ বিক্রিয়ায় ক্ষারে পরিনত হয়। এজন খাদ্যাভাস সম্বন্ধে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে এবং খাদ্যের প্রতিক্রিয়ায় শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ কিরূপে প্রভাবিত হয় তা জানতে হবে। রক্তে অম্লতা দেখা দেওয়া মানে 'জারণ' ঘটা যার অর্থ শরীরের ক্ষয়। তাই অতিরিক্ত অম্লত্ব শরীরে বিভিন্ন অসুবিধার জন্ম দেয়। যেমন
 
১। শরীরের ত্বক, চুল, নখ, দাঁত, হাঁড় দূর্বল হয়
২। পরিপাক তন্ত্রের আবরণে ছিদ্র তৈরি হতে পারে।
৩। স্নায়ুতন্ত্র উত্তেজিত হয়।
৪। হতাশাজনিত দুর্বলতা, উদ্বেগ ও বিষণ্নতার লক্ষণ দেখা দেয়।
৫। পেশির সংকোচনজনিত ব্যথা হয় ।
৬। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস জন্মগ্রহণ করে শরীরে আক্রমণ করে।
৭। দেহে দীর্ঘ মেয়াদি ক্লান্তি সৃষ্টি হয়।
৮। শরীরের কোন কোন খনিজ উপাদানের সহজলভ্যতা হ্রাস পায়।
৯। ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

রক্তের pH ক্ষারীয় (pH 7.4) লে তা শরীরে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাক প্রতিরোধ করে। ফলে কোষের জীবন দান ক্ষমতা অক্ষুন্ন থাকে। নতুন জীবন জন্ম গ্রহণের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ কেবল ক্ষারীয় pH মানে বজায় থাকে।

রক্তের pH কিসের ওপর নির্ভরশীল?

১। অম্লীয় খাদ্যদ্রব্য: মাংস, শস্যকণা, ফল যেমন পাঁকা কলা এবং আলু বোখারা, পরিশোধিত চিনি, মসলা, প্রক্রিয়াজাত ও কৌটাজাত খাদ্যের pH 2.8 থেকে 5.5 হয় অর্থাৎ অম্লীয় হয়। এ সকল খাদ্য আমাদের প্রক্রিয়াজাত শরীরে কোষের ভাঙন ধরায়। 

২। ক্ষারীয় খাদ্যদ্রব্য: বাদাম, অপাস্তুরিত মধু, পানি, খামারজাত খাদ্য, সবুজ শাকসব্জি, নারকেল, আঙ্গুর, উঁচু লিচু, দই, ঘোল, খেজুর, ডুমুর ফল, অ্যাপ্রিকট, নাশপাতি প্রভৃতি সকলেই ক্ষারীয় খাবার। এরা আমাদের স্বাস্থ্যকে পুনরুদ্ধার করে।

৩। pH মানুষের আবেগের ওপরও নির্ভরশীল। আনন্দ, খুশি ও তৃপ্তিদায়ক মুহূর্ত শরীরের অভ্যন্তরে ক্ষারীয় উপাদান গঠন করে। এটি সম্পন্ন হয় আমাদের গ্রন্থির রাজা হাইপোথ্যালামাস দ্বারা যা আমাদের চিন্তা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। শরীর সুস্থ রাখার জন্য শরীরের অভ্যন্তরীণ তরল পদার্থের pH এর মানে স্বাভাবিক মানে রাখা অত্যন্ত জরুরী। নতুবা আমাদের জীবন ধারণ অসম্ভব।

এ তরল পদার্থের pH মান 7 থেকে 7.5 এ থাকলেই তবে রক্তের pH এর সর্বাচ্চ অনুকুল মান 7.4 এ পৌঁছায়। রক্তের pH স্বাভাবিক রাখতে যেটি প্রথম ও প্রধান ভূমিকা রাখে তা হলো খাবার পানি। আমাদের শরীরে প্রায় 70 % হলে পানি। তাই তরল জাতীয় যেকোন খাদ্য গ্রহণে আমাদের রক্তের pH সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়। সকল পানিযুক্ত খাদ্য অম্লীয় হয়। ক্ষারীয় ধর্ম বিশিষ্ট পানিযুক্ত খাদ্য সকল সমাজে পাওয়া যায় না। তবে পানিযুক্ত বারে ক্যালসিয়াম খনিজ বিশিষ্ট লবণ প্রয়োজনীয় পরিমাণে যোগ করে ক্ষারীয় প্রকৃতিতে রূপান্তরিত করা যায়। এ পানি গ্রহণ করলে রক্তের pH স্বাভাবিক থাকে। খাদ্যে অপরিশোধিত লবণ যোগ করেও রক্তের pH স্থির রাখা যায়।

 সামুদ্রিক লবণ স্বচ্ছ সাদা না হয়ে একটু ধূসর হয়। এতে অপদ্রব্য হিসাবে বিভিন্ন খনিজ উপাদান মিশ্রিত থাকে। এ খনিজগুলো শরীরের রক্তে মিশে গিয়ে খাদ্য জদের দরুণ শরীরের অভ্যন্তরে রক্তের pH পরিবর্তনের যে সম্ভাবনা তৈরী হয় তা প্রশমিত করে।

শরীরের অভ্যন্তরস্থ তরলের অম্লত্ব পরিশোষণ করে পরিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে। এলার্জি ও ভূতের রেক অন্তরোধ করে ক্যান্সার ঠেকাতে সাহায্য করে।

রক্তে কার্বনেট বাফারের গুরুত্ব


মানুষের শরীরের রক্তে কার্বনিক এসিড, H2CO3  একটি দুর্বল এসিড ও বাইকার্বনেট আয়ন, HCO3, একটি ক্ষারক বিদ্যমান থাকে। এরা একত্রে মিলে রক্তে যে বাফার দ্রকা তৈরি করে তা রক্তের pH 7 .4 এ স্থির থাকতে সাহায্যে করে। রক্তে ph 6.8 এর নিচে নামলে অথবা 7.8 এর উপরে ওঠে গেলে মানুষ অসুস্থ হয়ে যায়, এমন কি মারাও যায়। রক্তে এসিডের (H+) পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে তা বাইকার্বনেট আয়নের সাথে বিক্রিয়া করে দুর্বল কার্বনিক এসিডে পরিণত হয়। ফলে H+ এর ঘনমাত্রা স্থির থাকে এবং রক্তের pH স্থির থাকে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url