সমযোজী বন্ধন কি, গঠন এবং বৈশিষ্ট্য

সমযোজী বন্ধন কাকে বলে?

দুটি পরমাণুর মধ্যে রাসায়নিক সংযোগের সময় নিজ নিজ বহিঃস্তরে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের স্থিতিশীল ইলেকট্রন গঠনের উদ্দেশ্যে যদি উভয় পরমাণু সমান সংখ্যক ইলেকট্রন সরবরাহ করে এক বা একাধিক ইলেকট্রন জোড় গঠন করে এবং উভয় পরমাণু তা সমানভাবে শেয়ার করে তবে পরমাণুয়ের মধ্যে যে বন্ধন গঠিত হয় তাকে সমযোজী বন্ধন বলে।

অথবা,
পরমাণুগুলোর সংযোগসময় যোজোতা অরবিটালের অধিগ্রহণের ফলে যে বন্ধন গঠিত হয় তাকে সমযোজী বন্ধন বলে।

অথবা,
ইলেকট্রন শেয়ারের মাধ্যমে দুটি পরমাণুর মধ্যে যে বন্ধন গঠিত হয় তাকে সমযোজী বন্ধন বলে।

সমযোজী বন্ধন গঠন

দুটি অধাতব পরমাণু তাদের বহিস্থ শক্তিস্তর থেকে সমসংখ্যক ইলেকট্রন যোগান দিয়ে ইলেকট্রন যুগল সৃষ্টি করে এবং তা সমভাবে শেয়ার করে নিকটস্থ নিষ্ক্রিয় গ্যাসের মতো স্থিতিশীল ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ করে। শেয়ারকৃত ইলেকট্রন যুগল উভয় পরমাণুর মধ্যখানে থাকে এবং ঐ ইলেকট্রন যুগলকে বন্ধন ইলেকট্রন যুগল বলে।

এ বছন ইলেকট্রন যুগল রাসায়নিকভাবে আবদ্ধ হয়ে অণু গঠন করে। যেমন- প্রতিটি হাইড্রোজেন পরমাণুতে একটি ইলেকট্রন আছে এবং এটি নিকটতম নিষ্ক্রিয় গ্যাস হিলিয়ামের ইলেকট্রন বিন্যাস অর্জন করার উদ্দেশ্যে আরো একটি ইলেকট্রন গ্রহণে আগ্রহী হয়। যদি দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু একত্রিত হয় তখন উভয় পরমাণু থেকে একটি করে ইলেকট্রন প্রস্পরের সাথে এমনভাবে আদান প্রদান করে যেন উভয় ইলেকট্রনই দুটি পরমাণুর কেন্দ্রকে পরিবেষ্টন করে থাকে। এভাবেই হাইড্রোজেন অণু সৃষ্টি হয়।

সমযোজী যৌগের বৈশিষ্ট্য


১. পোলারিটি: ইলেকট্রন শেয়ারের মাধ্যমে সমযোজী বন্ধন গঠিত হয় বলে বন্ধনযুক্ত প্রত্যেক পরমাণু বন্ধন গঠনের পূর্বের মতোই তড়িৎ নিরপেক্ষ থাকে। ফলে সমযোজী যৌগ সাধারণত নন - পোলার বা অমেরুক প্রকৃতির

২. গলনাংক ও স্ফুটনাংক: সমযোজী যৌগের অণুগুলো অমেরুক হওয়ায় এদের মধ্যে পারস্পরিক আকর্ষণ বল খুব কম। ফলে এদের গলনাংক ও স্ফুটনাংক বেশ নিম্ন।

৩. তড়িৎ পরিবাহিতা: সমযোজী যৌগগুলো গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় আয়নিত হয় না বলে এরা বিদ্যুৎ পরিবহন করে না।

৪. দ্রাব্যতা: সমযোজী যৌগ অমেরুক বলে এরা সাধারণত অমেরুক দ্রাবক। যেমন- বেনজিন, ইথার ইত্যাদিতে বেশি দ্রবণীয় এবং পানিতে অল্প মাত্রায় দ্রবণীয়।

৫. সমাণুতা: সমযোজী যৌগসমূহ আলোক সমাণুতা ও স্টেরিওসমাণুতা প্রদর্শন করে।

৬. ডাইইলেকট্রিক ধ্রুবক: সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ উপাদান পরমাণুগুলোর তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্য থাকলে সমযোজী যৌগে পোলারিটি সৃষ্টি হয়। এরূপ পোলারিটির কারণে সমযোজী যৌগে ডাইইলেকট্রিক ধ্রুবকের মান বেশি হয়।

৭. বিক্রিয়ায় সক্রিয়তা: সাধারণভাবে সমযোজী যৌগসমূহের বিক্রিয়ায় সক্রিয়তা কম।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url