বক্সারের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল
Admin
2:14 PM
বক্সারের যুদ্ধ কি?
ঐতিহাসিক পলাশীর যুদ্ধের পর বক্সারের যুদ্ধ অন্যতম। ১৭৬৪ সালে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পর মীরজাফর ক্ষমতায় আসলে তাকে নামেমাত্র নবাব করা হয়। ব্রিটিশরা অর্থাৎ ইংরেজরা যে উদ্দেশ্যে মীরজাফরকে ক্ষমতায় বসান সে উদ্দেশ্য সফল হয়নি যার কারণে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করে। বার্ষিক কর আদায়ের জন্য মীরজাফর এর উপর ইংরেজরা জোর তৎপরতা চালায় এদিকে মীরজাফর লর্ড ক্লাইভের উপর এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন। বারবার মীরজাফরের রাষ্ট্রপরিচালনার হস্তক্ষেপের বিষয়টি মোটেও ভাল লাগেনি।
এদিকে ইংরেজদের অত্যাচারের অতিষ্ঠ হয়ে মীরজাফর ইংরেজদের হটানোর জন্য ওলন্দাজদের সাথে সন্ধি করে। এসব নানা কারণে ১৭৬০ সালে ইংরেজ গভর্নর ভানসটাট মীরজাফরকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে মীর কাসেমকে শর্তসাপেক্ষে নবাব করেন। কিন্তু মীর কাশেম ও কিছুটা স্বাধীনচেতা লোক ছিল, তিনি স্বাধীনভাবে রাজ্য পরিচালনার জন্য চেষ্টা শুরু করেন। মীর কাসেমের কাজকর্ম ইংরেজদের কাছে মোটেও পছন্দ ছিল না। দিন যত এগোতে থাকে মীর কাশেমের সাথে ইংরেজদের মনোমালিন্য তত বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে মীর কাশেমের সাথে যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার রুপরেখা শুরু হয়ে যায়।
মীর কাসেম ছিলেন একজন সুদক্ষ শাসক, বুদ্ধিমান রাজনীতিবিদ, মেধাবী এবং একজন সচেতন স্বাধীনচেতা মানুষ। তিনি প্রজাদের এবং সাধারন মানুষদের সুখে রাখার জন্য জনকল্যাণমূলক কাজে সবসময় এগিয়ে আসতো। তিনি চেষ্টা করেছিলেন ইংরেজদের সাথে কিছুটা সম্পর্ক রেখে বাংলার স্বার্থ রক্ষা করা। এসব নানাবিধ কারণে শেষ পর্যন্ত তাকে বক্সারের যুদ্ধ দিকে এগোতে হয়।
বক্সারের যুদ্ধের কারণসমূহ
১. মীর কাসেম এবং ইংরেজদের রাজনৈতিক পদক্ষেপ বন্ধ এবং সেই সাথে প্রশাসনকে প্রভাব মুক্ত করার নানা ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ। তিনি রাজধানী মুর্শিদাবাদ থেকে মঙ্গরে স্থানান্তর করেন। রাজধানী কি সুরক্ষিত রাখার জন্য দুর্গ নির্মাণ এবং রাজধানীর চারো দিকে পরীখা খনন করেন।
২. অস্ত্র ও গোলাবারুদের জন্য অন্যের সহযোগিতার প্রয়োজন না পড়ে সেই উদ্দেশ্যে নিজ রাজধানীতেই অস্ত্র তৈরীর কারখানা নির্মাণ করেন। এখানে এই তৈরি হয় কামান-বন্দুক গোলাবারুদ।
৩. বিহার প্রদেশের শাসনকর্তা রাম নারায়ন ইংরেজদের প্রতিবেশী দুর্বল হয়ে পড়লে তাকে ক্ষমতা থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং সেই সাথে তার নামে বেনামে সকল সম্পত্তি সরকারি কোষাগারে নিয়ে আসা হয় অর্থাৎ বাজেয়াপ্ত করা হয়।
৪. ইংরেজিদের আক্রমণ প্রতিহত করা এবং ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সুদক্ষ বাহিনী করার উদ্দেশ্যে ইউরোপীয় সামরিক পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের জন্য দুইজন ইউরোপীয় প্রশিক্ষক রাখা হয়।
৫. মোগল সম্রাটের সময় অর্থাৎ ১৭১৭ সালে সম্রাটের সাথে ইংরেজদের যে ব্যবসা বাণিজ্য করার জন্য চুক্তি হয়েছিল সেই চুক্তির অপব্যবহার শুরু করে। এখানে দস্তক নামের ছাড়পত্র ব্যবহারের অপব্যবহার করার কারণে দেশীয় ব্যবসা বণিক সমিতি ব্যাপক পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই বিষয়টি মীর কাসেম আলী কোনভাবেই আপোষ করতে চাইনি, মীমাংসার দিকে এগোয় নি যার কারণে ইংরেজিতে সাথে সংঘর্ষ দানা বাঁধতে শুরু করে।
৬. নবাবের কার্যক্রমগুলো মূলত ছিল দেশের জনগণ, সাধারণ প্রজা, এদের স্বার্থ এবং সুবিধার জন্য। এই বিষয়গুলো ইংরেজরা ভালো ভাবে মেনে নিতে পারেনি, ভালোভাবে তো দূরের কথা একেবারেই মেনে নিতে পারেনি। ১৭৬৩ সালে পাটনা কুটির দখল করে নেয় এটি ছিল অধ্যক্ষ কুটির এলিস। ফলে অস্ত্র দারুন ছাড়া আর সম্রাটের আর কোন পথ ছিলনা। এই একই সালে কলকাতার কাউন্সিল নবাব, নবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। মেজর অ্যাডামসের নেতৃত্বে ইংরেজি বাহিনীর কাছে বেশ কয়েকটি এলাকা যুদ্ধে পরাজিত হয় এলাকা গুলো হচ্ছে কাটোয়া, উদয় নালা, গিরিয়া।
৭. এসব পরাজয় অভাব কে দমিয়ে রাখতে পারেনি , ধৈর্য সাহসিকতা নিয়ে সামনের দিকে এগোতে থাকে। এদিকে অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা, দিল্লির অযোধ্যায়, বাংলার সম্রাট শাহ আলম, অযোধ্যার আরাক নবাব মেজর মনরো, আর ইংল্যান্ডের মীর কাসেম একত্রিত হয়ে১৭৬৪সালে বিহারের বক্সার নামক স্থানে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
বক্সারের যুদ্ধের ফলাফল
১. এই যুদ্ধে মীর কাশেম স্বাধীনতা রক্ষার সর্বাত্মক চেষ্টা করে। যুদ্ধে পরাজয়ের কারণে ইংরেজদের প্রভাব-প্রতিপত্তি মান সম্মান বৃদ্ধি পায়। কোন রকম শর্ত ছাড়াই তারা আধিপত্য বিস্তারের অনেক সুযোগ সুবিধা পায়।
২. যুদ্ধে পরাজিত হয়ে কলকাতার নবাব সুজাউদ্দৌলা রোহিলাখন্ড পালিয়ে যায়। বাংলার সম্রাট শাহ আলম ইংরেজদের সাথে যোগ দেয়। মীর কাসেম পরাজিত হয়ে আত্মগোপন করে। উল্লেখযোগ্য যে১৭৭৭ সালে তার মৃত্যু হয়।
৩. ইংরেজরা অযোধ্য নবাব অর্থাৎ কলকাতা নবাব এর কাছ থেকে পুনরায় এলাহাবাদ ও কারা হস্তগত করতে সক্ষম হয়।
৪. এই যুদ্ধের প্রেক্ষাপট এর কারণেই রবার্ট ক্লাইভ দিল্লির সম্রাটের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমগ্র বাংলা বিহার উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করতে সক্ষম হয়। যেসব কারণে ইংরেজিদের অধিকার আইনগতভাবে স্বীকৃতি লাভ করে। ইংরেজদের ক্ষমতা আগের চেয়ে আরো বেশি হয় এবং বাংলা সহ বেশ কিছু অঞ্চল ইংরেজদের কলোনিতে পরিত হয়।
৫. এই যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলা নবাব শুধু পরাজিত হয় না সাথে সাথে ভারত সম্রাট শাহ আলম কলকাতার সম্রাট শাহ সুজা দোলা পরাজিত হন।