গাইগার মূলার কাউন্টার

গাইগার-মূলার কাউন্টারের মৌলিক গঠনপ্রণালী

১। গাইগার-মূলার কাউন্টার একটি কপারের মোটা চোঙাকৃতির টিউব (C) দিয়ে তৈরী যার দৈর্ঘ্য সাধারণত 10cm থেকে 50cm এবং গ্রন্থ 1cm থেকে 5cm পর্যন্ত।
 
২। এ কপারের মোটা চোঙাকৃতির টিউব (C) এর অক্ষ বরাবর একটি ধাতব তার (W) থাকে এবং এ তারটি ইস্পাত বা অ্যালুমিনিয়াম বা টাংস্টেন দ্বারা তৈরি।
 
৩। ধাতব তারটির সাথে টিউবটির কোনরূপ সংযোগ থাকে না। বাহিরের একটি কাচের চোঙ (G) যা ধাতব তারটিকে যথাস্থানে ধরে রাখতে সাহায্য করে।

৪। কাচের চোঙের একপাশে পাতলা অভ্রের (মাইকার) পর্দা দ্বারা একটি জানালা থাকে যা দ্বারা আয়নায়নকারী কণা কাউন্টারের ভিতরে প্রবেশ করে।

৫। গাইগার-মূলার কাউন্টারের ভিতরে খুব স্বল্প চাপে (2cm হতে 10cm) বায়ু বা হাইড্রোজেন বা আর্গন বা মিশ্র গ্যাস রাখা প্রায় 10 টর চাপে। খুব সম্প্রতিকালে Icm হতে 0.1cm পারদ চাপে ব্রোমিন বাষ্প ব্যবহার করা হয়।
 

গাইগার-মুলার কাউন্টারের বৈশিষ্ট্যসমূহ Characteristics of Geigar Mullar counter

১। গাইগার - মূলার কাউন্টার একটি উচ্চ সুবেদী গ্যাসপূর্ণ কাউন্টার।
২। গাইগার মূলার কাউন্টার ভোল্টেজ অঞ্চলে কাজ করে।
৩। গণনাকার গ্যাসের মধ্যে একটি মাত্র আয়নযুগল উৎপন্ন হলেও তা নির্দেশ করার মত সুবেদিতা গাইগার মূলার কাউন্টারে থাকে।
৪। গাইগার মূলার কাউন্টারের অ্যানোডে সৃষ্ট বৈদ্যুতিক ঝলকের বিস্তার সবসময় সমান থাকে। প্রতিটি আয়ন উৎপাদক কণার অনুপ্রবেশের পরে গাইগার মূলার কাউন্টারটি বেশ কিছুক্ষণ ধরে কার্যকারিতা হারায়- এ সময়কে অসংবেদী সময় বা ইনসেনসেটিভ টাইম (Insensative time) বলে।
৫। গাইগার-মূলার কাউন্টারের বিশ্লেষী ক্ষমতা খুবই কম।
৬। গাইগার-মূলার কাউন্টারের ক্ষেত্রে পালস্ ভোল্টেজ অত্যধিক হওয়ায় বিবর্ধনের প্রয়োজন হয় না।
৭। গাইগার মালভূমির দৈর্ঘ্য, মালভূমির নতি বা ঢাল এবং মৃত সময় বা নিষ্ক্রিয় সময়ের উর গাইগার - মূলার কাউন্টারে গুণগত মান নির্ভর করে।
৮। একটি আদর্শ গাইগার মূলার কাউন্টারের ঢাল প্রতি 100 V এর প্রায় 3%।
৯। গাইগার-মূলার কাউন্টারের ক্ষেত্রে শক্তি সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করার কোন প্রয়োজন হয় না।
     
গাইগার - মূলার কাউন্টারের নিষ্ক্রিয় সময় বা মৃত সময় (Dead time of Geigar Mullar counter)

গাইগার-মূলার কাউন্টারটি একবার একটি তেজষ্ক্রিয় কণার উপস্থিতি সম্পর্কে সাড়া প্রদান করার পরে আরেকটি কণা গ্রহণ করার জন্য উপযুক্ত অবস্থায় ফিরে আসতে যে অতি স্বল্প সময় ব্যয় হয় তাকে গাইগার মূলার কাউন্টারের নিষ্ক্রিয় সময় (Dead time of Geigar Mullar counter) বলে। এ সময়ে কাউন্টারটি কোন কণার উপস্থিতি সাড়া
প্রদান করে না বলে এ সময়কে এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। কাউন্টারের নিষ্ক্রিয় সময়ের উপরই তার সুবেদীতা নির্ভরশীল। যেমনঃ যে নিষ্ক্রিয় সময় যত কম সে কাউন্টারটি তত বেশী সুবেদী। গাইগার - মূলার কাউন্টারে বিদ্যমান কেন্দ্রীয় তার ইলেকট্রোড দ্বারা ইলেকট্রন সংগ্রহ করে এবং ইলেকট্রন সংগ্রহ হওয়ার পর তারটিকে ঘিরে একটি ধনাত্মক আয়নের Sheath তৈরী হয় যার ব্যাসার্ধ বাহিরের সিলিন্ডারের দিকে Drift করার সাথে সাথে বৃদ্ধি পায়। কেন্দ্রীয় তারের সন্নিকটে এ Sheath একটি ক্ষুদ্র বিভব তৈরি করে এবং প্রযুক্ত বিভব পার্থক্য হেতু এ Sheath এর ব্যাসার্ধ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ না হওয়া পর্যন্ত কাউন্টারটি কোন কণার উপস্থিতিতে সাড়া প্রদান করে না অর্থাৎ নিষ্ক্রিয় থাকে।

গাইগার-মূলার কাউন্টারের প্রয়োগসমূহ |Applications of Gelgar-Muliar counter

 ১। তেজষ্ক্রিয় বস্তু কর্তৃক নির্গত খালি চোখে অদৃশ্যমান ও মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর উপ - পারমাণবিক বা অব - পারমাণবিক বা সাব - অ্যাটোমিক কণা সনাক্তকরণ ও রেকর্ডে গাইগার মূলার কাউন্টার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২। নিউট্রনের মত চার্জহীন কণাসমূহকেও শনাক্ত ও গণনাকরণে এ কাউন্টারের গুরুত্ব অপরিসীম।
৩। গাইগার - মূলার কাউন্টারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ হল তেজষ্ক্রিয় বস্তু হতে প্রতি সেকেন্ডে নির্গত আলফা কণার সংখ্যা গণনাকরণ।

গাইগার-মূলার কাউন্টারের সুবিধাসমূহ|Advantages counter


১। গাইগার মূলার কাউন্টারে আয়ন যুগলের অভ্যন্তরীণ বৃদ্ধির পরিমাণ খুব বেশি। ফলে বিদ্যুৎ স্পন্দন বোঝায় জন্য বাহ্যিক শক্তি বৃদ্ধির প্রয়োজন হয় না।
২। গাইগার মূলার কাউন্টারের যন্ত্রসজ্জা অপেক্ষাকৃত সহজ।
৩। এ কাউন্টার অপেক্ষাকৃত ছোট বলে একে সহজে স্থানান্তর করা যায়।
৪। গাইগার মূলার কাউন্টারের সামগ্রিক যন্ত্রের মূল্য অল্প।

গাইগার-মূলার কাউন্টারের অসুবিধাসমূহ|Disadvantages of Geigar Mullar counter

 
১। গাইগার মূলার কাউন্টারে ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ স্পন্দনের উচ্চতা আয়ন সংখ্যার উপর নির্ভর করে না বলে এর সাহায্যে কোন কণার শক্তি নির্ণয় করা যায় না। 
২। গাইগার - মূলার কাউন্টারের মৃত সময় বেশী বলে এর গণনা হার নিম্ন।
 ৩। গাইগার - মূলার কাউন্টারের ক্ষেত্রে পালস্ ভোল্টেজ অত্যধিক হওয়ায় নিম্নরূপ দুটি অসুবিধার সৃষ্টি হয়:

(i) নিষ্ক্রিয় সময় বেশি হয়।

(ii) ধনাত্মক আয়নগুলোর শক্তি এতই উচ্চ হয় যে, তারা পরে নতুন আয়নযুগল তৈরী করতে পারে না। ফলে পরীক্ষাকার্য এতটা কার্যকর হয় না।

৪। গাইগার - মূলার কাউন্টারের সাহায্যে নিম্ন শক্তির বিকিরণ সনাক্ত করা যায় না।
৫। মসমার ক্রিয়া ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে গাইগার - মূলার কাউন্টার কোনরূপ ভূমিকা পালন করে না।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url