তেজস্ক্রিয়তা দূষণ কী?

প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট কারণে উৎপন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিকিরণে পরিবেশ দূষিত হয়। প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট তেজস্ক্রিয় দূষণের ঘটনা সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
 

তেজস্ক্রিয় দূষণের প্রাকৃতিক কারণ

১। মহাশূন্য থেকে বায়ুমন্ডলে মহাজাগতিক রশ্মির (cosmic ray) প্রভাব স্বল্পায়ু তেজস্ক্রিয় মৌল কার্বন -14 এবং ট্রাইটিয়াম (হাইড্রোজেন-3) উৎপন্ন হয়। এই তেজস্ক্রিয় মৌলদ্বয় সরাসরি জীবজগতের উপর মন্দ প্রভা করে। উৎপন্ন কার্বন -14 এবং হাইড্রোজেন -3 অচিরেই কার্বনডাইঅক্সাইড এবং পানিতে জারিত হয়। উৎপন্ন কার্বনডাইঅক্সাইড ও পানি বায়ুমন্ডল এবং বারিমন্ডলে প্রবেশ করে। মহাজাগতিক রশ্মির নিউট্রন কণার সঙ্গে বায়ুমন্ডলের নাইট্রোজেন এর সংঘাতে কার্বন -14 এবং উচ্চশক্তিসম্পন্ন মহাজাগতিক রশ্মি - কণার আঘাতে হাইড্রোজেন পরমাণুর বিয়োজনে হাইড্রোজেন -3 বা ট্রাইটিয়াম উৎপন্ন হয়।

২। পৃথিবীর ক্রাস্ট (ভূ-ত্বক) অংশে বর্তমান ইউরেনিয়াম এবং থোরিয়ামের আকরিকই প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় বিকিরণের প্রধান উৎস। প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় পদার্থের তিনটি শ্রেণীরুম রয়েছে যারা প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তার জন্য দায়ী। যেমনঃ
a. ইউরেনিয়াম- রেডিয়াম ক্রম
b. থোরিয়াম ক্রম এবং
c. ইউরেনিয়াম - অ্যাকটিনিয়াম ক্রম

এছাড়া পটাসিয়াম -40 এবং রুবিডিয়াম -87 তেজস্ক্রিয়তার জন্য বিশেষভাবে দায়ী। মৃত্তিকার 20-76 শতাংশে তেজস্ক্রিয়তা পটাসিয়াম -40 এর জন্য সৃষ্টি হয়।

৩। বারিমণ্ডল ও তেজস্ক্রিয় পদার্থের দ্বারা দূষিত হতে পারে। যখন জলস্রোত তেজস্ক্রিয় আকরিক বা যৌগসম্পন্ন মৃত্তিকা বা পাহাড়ের সংস্পর্শে প্রবাহিত হয়, তখন পানি তেজস্ক্রিয় পদার্থের দ্বারা দূষিত হয়। কিন্তু কিছু করণা এবং প্রস্রবণে রেডন (নিষ্ক্রিয় গ্যাস) গ্যাসের তেজস্ক্রিয় সমস্থানিক- রেডন-222 এবং এর অপত্য সদস্য রেডিয়াম- 'A' এবং রেডিয়াম- 'C' এর উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে। এরূপে বায়ুমন্ডল, অশ্বমন্ডল এবং বারিমন্ডলে বর্তমান তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিকিরণে পরিবেশের প্রাকৃতিক তেজষ্ক্রিয় দূষণ সৃষ্টি হয়, যার প্রভাবে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়।

তেজষ্ক্রিয় দূষণের মনুষ্যসৃষ্ট কারণ


মনুষ্যসৃষ্ট তেজস্ক্রিয় দূষণ সৃষ্টি হয় তেজস্ক্রিয় পদার্থের ব্যবহার জনিত ক্রিয়াকলাপে। তেজস্ক্রিয় পদার্থের প্রক্রিয়াকরণ বা পারমাণবিক অস্ত্র এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেজস্ক্রিয় পদার্থের ব্যবহারই মনুষ্যসৃষ্ট তেজস্ক্রিয় দূষণের প্রধান কারণ। এছাড়া গবেষণার কাজে বা চিকিৎসা প্রণালীতে ট্রেসার হিসাবে তেজস্ক্রিয় পদার্থের ব্যবহার মনুষ্যসৃষ্ট তেজষ্ক্রিয় দূষণের কারণ। কয়লার দহনে তেজস্ক্রিয় মৌল বাহুতে মুক্ত হয়।

১। তেজস্ক্রিয় আকরিকের প্রক্রিয়াকরণ— নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে বিয়োজনশীল তেজস্ক্রিয় মৌল যথা ইউরেনিয়াম এবং খোরিয়ামের জ্বালানি পন্ড ব্যবহার করা হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক ইউরেনিয়াম- ২৩৫ ই কেবল স্বতঃস্ফূর্ত বিয়োজন দেখাতে পারে। তাই নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টে ব্যবহারোপযোগী অন্যান্য তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ যেমনঃ ইউরেনিয়াম -238 এবং থোরিয়াম -232 কৃত্রিম উপায়ে তেজস্ক্রিয় মৌলের আকরিক থেকে প্রক্রিয়াকরণ করা হয়।

তাই নিউক্লিয়ার প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তির প্রথম ধাপে তেজস্ক্রিয় মৌলকে খনি থেকে উত্তোলন করার পর ধৌতকরণ এবং পরিশোধন করা হয় এবং পরবর্তী ধাপে গ্যাসীয় ব্যাপন বা অন্যান্য তেজস্ক্রিয় মৌল থেকে পৃথক করা হয়। তেজস্ক্রিয় আকরিকের মাইনিং এবং রিফাইনিং প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত পানিতে অধিক অর্ধায়ুযুক্ত এবং পানিতে দ্রাব্য তেজস্ক্রিয় মৌল- কণা বা  তরল আকারে উপস্থিত থাকে।

নির্গত পানি নদী, হ্রদ এবং সমুদ্রে স্থানান্তরিত হলে নদী, সমুদ্র এবং হ্রদের পানিরাশি তেজস্ক্রিয় পদার্থের দ্বারা দূষিত হয়। ফলে তেজস্ক্রিয় পারমাণবিক নিরাপত্তা নির্গত তেজস্ক্রিয় বিকিরণের প্রভাবে পানির সমগ্র বাস্তুতন্ত্র আক্রান্ত হয়। মাইনিং এবং রিফাইনিং নির্গত পানিতে ইউরেনিয়াম এবং থোরিয়ামের অপত্য মৌল যেমনঃ থোরিয়াম -230, রেডিয়াম-226, সীসা -210 (ইউরেনিয়াম- রেডিয়াম ক্রম) এবং রেডিয়াম -228, থোরিয়াম -228 (থোরিয়াম ক্রম) প্রভৃতি উপস্থিত থাকে। পানিতে সংক্রমিত রেডিয়াম- 226 ই জলজ পরিবেশে সর্বাপেক্ষা ক্ষতিকর। তেজস্ক্রিয় মৌলের প্রক্রিয়াকরণে বায়ুমণ্ডলও দূষিত হয়। তেজস্ক্রিয় আকরিকের মাইনিং, ওয়াশিং, রিফাইনিং এবং সেপারেশানে বহু তেজস্ক্রিয় গ্যাস যথা রেডন, থোরন প্রভৃতি বায়ুমন্ডলে নিক্ষিপ্ত হয় এবং পরবর্তী ধাপে বিক্ষিপ্ত কণায় বিশোষিত হয়ে বায়ুমন্ডলে ভেসে ভেড়ায়।

২। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টে পারমাণবিক শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বা বিভাজন (ফিশন) এবং সংযোজন (ফিউশন) নিউক্লিয়ার প্রযুক্তির ভূমিকা— কোন মৌলের পরমাণুর অন্তনির্হিত শক্তিকে পারমাণবিক শক্তি বলে।

বিশেষ বিভাজন (fission) এবং সংযোজন (fussion) নিউক্লিয়ার প্রযুক্তির সাহায্যে নির্গত পারমাণবিক শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয়। মৌলের পরমাণুর ভারী নিউক্লিয়াস (অসংখ্য প্রোটন এবং নিউট্রন সমন্বিত) স্বাভাবিক ভাবেই অস্থির। বিভাজন প্রক্রিয়ায় ভারী নিউক্লিয়াসকে বহিরাগত নিউট্রন কণার দ্বারা আঘাত করলে ভারী নিউক্লিয়াসটি সমান দুটি নিউক্লিয়াসে বিভাজিত হয়। উৎপন্ন নিউক্লিয়াস ভারী জনিত নিউক্লিয়াস অপেক্ষা অধিক সুস্থির হয়। নিউক্লিয়ার বিভাজনে উদ্ভূত বিপুল শক্তিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কাজে লাগানো হয় নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে। এই বিভাজন প্রক্রিয়ায় ভারী তেজস্ক্রিয় মৌল। যেমনঃ ইউরেনিয়ামের আইসোটোপ- ইউরেনিয়াম -235, ইউরেনিয়াম -238, এবং থোরিয়াম -232 বিশেষ উপযোগী। 

ঠিক বিপরীত নীতি অবলম্বনে সংযোজন প্রক্রিয়ায় মৌলের পরমাণুর হালকা নিউক্লিয়াসদ্বয়কে সংযোজন করালে একটি সুস্থির নিউক্লিয়াস পাওয়া যায়। নিউক্লিয়াসন্বয়ের সংযোজন উদ্ভূত শক্তিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। সংযোজন প্রক্রিয়ায় হাইড্রোজেনের আইসোটোপ ডয়টেরিয়াম (Deuterium Hydrogen-2) এবং ট্রাইটিয়াম (Tritium, Hydrogen-3) ব্যবহার করা হয়। 

নিউক্লিয় নিরাপত্তা বা পারমাণবিক নিরাপত্তা নির্গত তেজস্ক্রিয় বিকিরণের প্রভাবে পানির সমগ্র বাস্তুতন্ত্র আক্রান্ত হয়। মাইনিং এবং রিফাইনিং নির্গত পানিতে ইউরেনিয়াম এবং থোরিয়ামের অপত্য মৌল যেমন: থোরিয়াম -230, রেডিয়াম -226, সীসা -210 (ইউরেনিয়াম- রেডিয়াম ক্রম) এবং রেডিয়াম -228, থোরিয়াম -228 (থোরিয়াম ক্রম) প্রভৃতি উপস্থিত থাকে। পানিতে সংক্রমিত রেডিয়াম- 226 ই জলজ পরিবেশে সর্বাপেক্ষা ক্ষতিকর। তেজস্ক্রিয় মৌলের প্রক্রিয়াকরণে বায়ুমণ্ডলও দূষিত হয়। তেজস্ক্রিয় আকরিকের মাইনিং, ওয়াশিং, রিফাইনিং এবং সেপারেশানে বহু তেব্বক্রিয় গ্যাস যথা রেডন, থোরন প্রভৃতি বায়ুমন্ডলে নিক্ষিপ্ত হয় এবং পরবর্তী ধাপে বিক্ষিপ্ত কণায় বিশোষিত হয়ে বায়ুমন্ডলে ভেসে ভেড়ায়।

২। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টে পারমাণবিক শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বা বিভাজন (ফিশন) এবং সংযোজন (ফিউশন) নিউক্লিয়ার প্রযুক্তির ভূমিকা— কোন মৌলের পরমাণুর অন্তনির্হিত শক্তিকে পারমাণবিক শক্তি বলে। বিশেষ বিভাজন (fission) এবং সংযোজন (fussion) নিউক্লিয়ার প্রযুক্তির সাহায্যে নির্গত পারমাণবিক শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয়। মৌলের পরমাণুর ভারী নিউক্লিয়াস (অসংখ্য প্রোটন এবং নিউট্রন সমন্বিত) স্বাভাবিক ভাবেই অস্থির।

বিভাজন প্রক্রিয়ায় ভারী নিউক্লিয়াসকে বহিরাগত নিউট্রন কণার দ্বারা আঘাত করলে ভারী নিউক্লিয়াসটি সমান দুটি নিউক্লিয়াসে বিভাজিত হয়। উৎপন্ন নিউক্লিয়াসম্বর ভারী জনিত নিউক্লিয়াস অপেক্ষা অধিক সুস্থির হয়। নিউক্লিয়ার বিভাজনে উদ্ভূত বিপুল শক্তিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কাজে লাগানো হয় নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে। এই বিভাজন প্রক্রিয়ায় ভারী তেজস্ক্রিয় মৌল যেমনঃ ইউরেনিয়ামের আইসোটোপ- ইউরেনিয়াম -235, ইউরেনিয়াম -238, এবং থোরিয়াম -232 বিশেষ উপযোগী।

ঠিক বিপরীত নীতি অবলম্বনে সংযোজন প্রক্রিয়ায় মৌলের পরমাণুর হালকা নিউক্লিয়াসদ্বয়কে সংযোজন করালে একটি সুস্থির নিউক্লিয়াস পাওয়া যায়। নিউক্লিয়াসন্বয়ের সংযোজন উদ্ভূত শক্তিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। সংযোজন প্রক্রিয়ায় হাইড্রোজেনের আইসোটোপ ডয়টেরিয়াম (Deuterium Hydrogen-2) এবং ট্রাইটিয়াম (Tritium, Hydrogen-3) ব্যবহার করা হয়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url