জৈব যৌগের গুরুত্ব

দৈনন্দিন জীবনে জৈব যৌগের গুরুত্ব


জৈব রসায়ন সম্বন্ধে বিভিন্ন সমগোত্রীয় শ্রেণির যৌগের প্রস্তুতি ও ধর্ম আলোচনায় এ সব যৌগের মানব বনে ব্যবহার সম্বন্ধে অনেক জেনেছি। মানুষের জীবনের প্রাথমিক সমস্যা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা ইত্যাদির জৈব যৌগের অবদান ও গুরুত্ব অপরিসীম।

পরিবেশ ও সামাজিক ক্ষেত্রে জৈব যৌগের গুরুত্ব

প্রত্যেক মানুষ পরিবেশ ও সমাজেরই অংশ। মানুষই জৈব যৌগ ব্যবহার করে। জৈব যৌগের সে সব ব্যবহার ব্যক্তিজীবনে ও সামাজিক জীবনে হয়ে থাকে। আবার জৈব যৌগ ব্যবহারের পর পারিপার্শ্বিক পরিবেশে বর্জ্যারূপেও ফেলা হয়। অনেক জৈব যৌগের বর্জ্য পরিবেশ দূষণের কারণ হতে পারে।

প্রথমে পরিবেশের ওপর এবং পরে সামাজিক ক্ষেত্রে জৈব মৌগের গুরুত্ব আলোচনা করা হবে। পরিবেশের ওপর জৈব যৌগের প্রভাব প্রাত্যহিক জীবনে আমরা বিভিন্ন জৈব যৌগ খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ ও বিভিন্ন বক্তৃ - সামগ্রী রূপে ব্যবহার করি। ব্যবহার শেষে ঐ সব পদার্থের কিছু আশেপাশের পরিবেশে ফেলা হয়।

সেসব জৈব পদার্থ পচনশীল হলে তা ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বিযোজিত হয়ে মাটির ‘হিউমাস’ বৃদ্ধি করে। হিউমাস মাটির পানি, বাতাস ও পুষ্টি পদার্থের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে মাটির গঠন সংযুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এসব পচনশীল বস্তু হলো নিত্যদিনের ব্যবহৃত প্রাকৃতিক পলিমার শাকসব্জির বন্ধ অংশ। এসব প্রাকৃতিক জৈব পদার্থকে নির্দিষ্ট স্থানে মাটির গর্তে জমা করে সময়মতো মাটি চাপা দিতে হবে। আবার বিভিন্ন সাংশ্লেষিক পলিমার যেমন, বাজারের পলিথিন ব্যাগ, বিভিন্ন বস্তুসামগ্রীর প্যাকেজিং পলিমার যৌগ সহ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা অবিযোজ্য (non - degradable) পদার্থ।

এসব প্লাস্টিক পদার্থ ব্যাকটেরিয়া - অৰিযোজ্য অবিকৃত অবস্থা মাটিতে ও পানির তলদেশে জমা থাকে। এর ফলে মাটির যেমন ক্ষতি করে, একইভাবে জলজ প্রাণীও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। করার জন্য ব্যবহৃত ডিটারজেন্ট হলো জৈব যৌগ। এর সাথে ফসফেট লবণ ফিলাররূপে মিল পুকুরের পানিতে মিশে পানিকে দূষিত করে। দূষিত পানিতে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির কারণে পাঁচ DO হ্রাস পায়। এতে পুকুরের মাছ মরে যায়।

তাই কাপড় ধোয়া পানি পুকুরের পানিতে যেন না মিশে এর ব্যবস্থা থাকতে হবে। কৃষি কাজে কীটনাশক, আগাছা রোধকরূপে বিভিন্ন জৈব যৌগ ব্যবহৃত হয়। এর ফলে পরিবেশের দূষণ ঘটে। শিল্পে ক্ষেত্রে বিভিন্ন জৈব যৌগ দ্রাবক হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং শিল্প বর্জ্যারূপে ঐ সব যৌগ বাতাসে, মাটিতে ও পানিতে হিন্ পরিবেশের দূষণ ঘটায়। কাপড় চোপড় পরিষ্কার থাকে। কাপড় ধোঁয়ার বর্জ্য পরিবহনের পেট্রোল ও ডিজেল ইঞ্জিনের হাইড্রোকার্বন জ্বালানি দহনে নির্গত CO2, CO, N2O ইত্যাদি পরিবেশ দূষন করে। তাই এসব জৈব যৌগ ব্যবহারে পরিবেশ দূষণ রোধের ব্যবস্থার কথা ভাবতে হবে।


সামাজিক ক্ষেত্রে জৈব যৌগের গুরুত্ব


সমাজ কাঠামোয় আচারানুষ্ঠান সংক্রান্ত ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম সামাজিক যোগসূত্র নিয়ন্ত্রণে বা সামাজিক বন্ধন বৃদ্ধি করতে আচারানুষ্ঠান সাহায্য করে। ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মোমবাতি ও আল সুগন্ধ বন্ধু ছড়ানো মানসিক প্রশান্তিদায়ক। উভয় বস্তু জৈব যৌগ। সামাজিক অনুষ্ঠানে খাওয়া - দাওয়া আনন্দের ব্যাপর এক্ষেত্রে খাদ্যরূপে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন , ফ্যাট বা তেল সব হলো প্রাকৃতিক পলিমার বায়ো অণু। ঈদ - পুজো পার্বণে অর সবাইকে নতুন কাপড়ে ভূষিত দেখতে আনন্দ পাই। নতুন কাপড়টি কটন সুতার হতে পারে; যার উৎস হলো প্রাকৃতির সেলুলোজ।

আবার সেই পোশাকটি পলিএন্টার সুতার তৈরি ডেক্রন বা টেরিলিন কাপড়ের তৈরি হতে পারে; অথবা হতে পাড়ে সিলুক অথবা শিফন। যা হোক না কেন সব পোশাকের কাপড়ের সুতা প্রাকৃতিক পলিমার জৈব যৌগ অথবা সাংশ্লেষিক পলিমা যৌগ থেকে তৈরি। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে যা দেখা যায়, এ সব বস্তুর অধিকাংশই জৈব যৌগ থেকে তৈরি। এ সব গেল সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করার আচার - অনুষ্ঠানের কথা।

কিন্তু সামাজিক কিছু অনাচারও মাঝে মধে দেখা যায়; যাতে জৈব যৌগ পরোক্ষ ভূমিকা রেখেছে। ঐ সব জৈব যৌগ ধূমপান, পানীয় অথবা ট্যাবলেটরূপে সেবনের ফলে মানুষের স্নায়ুতন্ত্রে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটায়; তখন মানুষটি নেশাগ্রস্ত হয়েছে বলা হয়। নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিরা সমাজের সময় করে; সামাজিক শান্তি বিনষ্ট করে। এদের পরিবারে সামাজিক সুনাম নষ্ট হয়। ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে অশান্তি নামে। রসায়ন বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হিসেবে নেশা সৃষ্টিকারী জৈব যৌগসমূহকে চিনে নিয়ে, এদের থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করে হবে। বিজ্ঞান পড়া মানে জ্ঞানকে বিশেষিত করা, উন্নত, চিন্তাশীল মানুষ হওয়া। 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url