Nishant Mazumder passage in bangla
সবে চল্লিশ বছর পেরোনো নিশাত মজুমদার একজন বাংলাদেশী মহিলা যিনি একজন ক্রীড়া পথিকৃৎ। তাঁর জন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারে; তাঁর বাবা একজন ব্যবসায়ী এবং মা একজন গৃহিণী। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
তিনি খুব লম্বা বা সুগঠিত নন, বা রাজকুমারীর মতো একটি কমনীয় চেহারা তাঁর নেই; তবে দেখতে সাধারণ এই মেয়েটির তিনটি জিনিস রয়েছে যাতে তিনি গর্বিত হতে পারেন।
এগুলি হল: তাঁর অসাধারণ সহায়ক পিতামাতা রয়েছে যারা তাঁর স্বপ্নকে বাস্তব হিসাবে গ্রহণ করেছে; তাঁর বাবা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি ২০১২ সালে প্রথম বাংলাদেশী মেয়ে হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ চূড়ায় আরোহণ করেছিলেন।
নিশাতের জীবন একটি অনুপ্রেরণামূলক গল্প উপস্থাপন করে যা বাংলাদেশের যুবকদের জানা দরকার। নিশাত ১৯৮১ সালের ৫ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার তেওরী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
Nishant Mazumder passage Bangla translation
তিনি ১৯৯৭ সালে বটমলে হোম গার্লস হাই স্কুল থেকে তার স্কুল জীবন শেষ করেন এবং ১৯৯৯ সালে শহীদ আনোয়ার গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি ঢাকা সিটি কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা ওয়াসার একজন হিসাবরক্ষক হিসাবে কাজ করছেন।
তিনি বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতিতেও আগ্রহী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাপান স্টাডিজে এমএ করার জন্য ভর্তি হয়েছেন। আমাদের জন্য নিশাতের জীবন বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এটি আমাদের বুঝিয়ে দেয় যে কীভাবে একজন ব্যক্তির প্রভাব কাউকে বড় স্বপ্ন দেখতে অনুপ্রাণিত করতে পারে।
একজন মুক্তিযোদ্ধার কন্যা হিসেবে নিশাতকে তাঁর জীবনে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। কিন্তু তাঁর আদর্শ তাঁর মা সেই বাধাগুলিকে অতিক্রম করতে এবং তাঁর স্বপ্নকে অনুসরণ করার জন্য তাঁকে সাহস এবং দৃঢ় সংকল্প দিয়েছিলেন।
নিশাতের মা আশুরা মজুমদার একজন কঠোর পরিশ্রমী এবং বোধশক্তিসম্পন্ন মহিলা, যিনি কঠিন পরিস্থিতিতে তাঁর পরিবারের হাল ধরেছিলেন।
নিশাত তাঁর মায়ের কাছ থেকে শিখেছেন কীভাবে জীবনের দুর্যোগের মুহূর্তে মানসিক শক্তি ধরে রাখতে হয়। তাঁর কাছ থেকে শিখে নিশাত তাঁর পর্বত জয়ের স্বপ্ন দেখা শুরু করেন।
তোমরা কী সুপারম্যান আর তার অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি নিয়ে হলিউড চলচ্চিত্রের কথা শুনেছ? এই ছবিতে সুপারম্যানের ভূমিকায় অভিনয় করা অভিনেতা ক্রিস্টোফার রিভ ১৯৯৬ সালে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে দেওয়া এক বক্তৃতায় বলেছিলেন “আমাদের অনেক স্বপ্ন প্রথমে একেবারেই অসম্ভব বলে মনে হয়, তারপরে সেগুলি কিছুটা অসম্ভব বলে মনে হয় এবং তারপরে যখন আমরা আমাদের ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগাই সেগুলি শীঘ্রই অনিবার্য হয়ে ওঠে।”
নিশাতের জীবনেও এমন হয়েছে। যদিও তার দীর্ঘকালের লালিত স্বপ্ন ছিল একজন পর্বতারোহী হওয়ার, কিন্তু ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি ৯৬৭ ফুট উঁচু কেওক্রাডং আরোহণ করতে পারেননি। এডমন্ড হিলারি এবং তেনজিং নোরগে - এর মাউন্ট এভারেস্ট জয়ের ৫০ তম বার্ষিকী উদযাপনের জন্য ২৯ মে, ২০০৩ - এ পর্বতারোহণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সত্যিকারের অভিযানের আগে তাঁর শরীরকে আরোহণের জন্য প্রস্তুত করতে টানা তিন দিন ১৫ কেজি ব্যাকপ্যাক নিয়ে ঢাকার রাস্তায় হেঁটেছিলেন নিশাত।
সৌভাগ্য, ঐকান্তিকতা এবং সুযোগ তৈরির মতো বিষয়গুলি যে কোনও ব্যক্তির সাফল্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে একজন ক্রীড়াবিদকে সফল হওয়ার জন্য শৃঙ্খলা এবং - অধ্যবসায়ও থাকতে হবে।
প্রাতিষ্ঠানিক এবং পেশাদার প্রশিক্ষণও প্রয়োজন। নিশাত ২০০৬ সালে বাংলাদেশ মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবে (বিএমটিসি) যোগদান করেন এবং ২০০৭ সালে ভারতের দার্জিলিং এর হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে একটি প্রাথমিক প্রশিক্ষণ কোর্স। সম্পন্ন করেন। এর পর তিনি বাংলাদেশের একাধিক দলে যোগদান করে হিমালয় পর্বতমালার একের পর এক চূড়া অতিক্রম করেন।
আজ হিমালয়ে নেপাল - বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ নামে একটি পর্বত শৃঙ্গ আছে। এর এরকম নামকরণ করা হয়েছে কারণ দুটি বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের পর্বতারোহীরা যৌথভাবে প্রথমবারের মতো এটিতে আরোহণ করেছিল। নিশাতের দলের নেতৃত্বে ছিলেন এম. এ. মোহিত, যিনি এভারেস্টের চূড়া এবং ৮০০০ মিটারেরও বেশি উচ্চতার আরও কয়েকটি শৃঙ্গে আরোহণ করেছিলেন।
বাংলাদেশে পর্বতারোহণ একটি নতুন ক্রীড়া এবং আমরা এখনও এমন একটি সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারিনি যা একজন মহিলার পর্বতারোহণ কার্যক্রমকে উৎসাহিত করবে। নিশাত চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করেছিল এবং তাঁকে তাঁর বাবা - মা সমর্থন করেছিল।
এটি একটি ব্যয়বহুল ক্রীড়া এবং নিশাত ও অন্যান্য পর্বতারোহীরা সফল হতে পারত না যদি বিভিন্ন সংস্থা তাদের সাহায্য না করত। নিশাত ২০১২ সালে মাউন্ট এভারেস্ট অভিযানে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের “কারণ আমি একজন মেয়ে” প্রচারাভিযানের একজন শুভেচ্ছাদূত ছিলেন।
তিনি বাংলাদেশের সকল মানুষের জন্য একটি বার্তা দিতে চেয়েছিলেন যে একটি ছেলে যা করতে পারে তা একটি মেয়েও করতে পারে এবং তাই প্রতিটি মেয়ের তার বাবা - মা এবং সমাজের কাছ থেকে প্রতিটি চ্যালেঞ্জিং কর্মকাণ্ডে সমর্থন পাওয়া উচিত।