শৃঙ্খল বিক্রিয়া কী?

শৃঙ্খল বিক্রিয়া কাকে বলে?


কিছু বিক্রিয়া আছে যাদের গতিবেগ সংঘর্ষ তত্ত্বানুসারে প্রাপ্ত গতিবেশের তুলনায় অনেক বেশী। এ ধরণের বিক্রিয়া সাধারণ কৌশলের দ্বারা ঘটে না এবং উৎপাদ উৎপন্ন কারী ধাপের একটি মাত্র বিক্রিয়াক অংশগ্রহন করে না। এ শ্রেণীর বিক্রিয়াসমূহ ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হয় এবং বার বার ঘটতে থাকে ও লক্ষ লক্ষ বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। এ ধরনের বিক্রিয়াকেই শৃঙ্খল বিক্রিয়া বলে।

সুতরাং শৃংখল বিক্রিয়ার সংজ্ঞা এভাবে দেয়া যায় যে বিক্রিয়া বার বার ঘটতে থাকে ও ধারাবাহিকভাবে অগ্রসর কতগুলো মৌলিক বিক্রিয়ার একটি শ্ৰেণী যেখানে সক্রিয় ৷ মধ্যবর্তী কণা বা পরমাণু বা অণু বা মুক্তমূলকসমূহ উৎপাদে পরিণত হওয়ার পূর্বে নিঃশেষিত (consumed) এবং পুনাপতি (regenerated) হয়।

শৃংখল বিক্রিয়ার ধাপসমূহ


১. শৃংখল সূত্রপাত (Chain initiation) এ ধাপে শৃংখল বাহক নামে পরিচিত সক্রিয় মধ্যবর্তী পরমাণু বা রাসায়নিকভাবে হতে পারে মুক্তমূলক বা উচ্চ শক্তিসম্পন্ন অণু ধীরে ধীরে উৎপন্ন হয়। শৃংখলের সূচনা তাপীয়ভাবে বা আলোক রাসায়নিক ভাবে ঘটে।

২. শৃঙ্খল চলন (Chain propagation): সূচনা ধাপে উৎপন্ন সক্রিয় মধ্যবর্তী পরমাণু বা মুক্তমূলক উচ্চ শক্তিসম্পন্ন অণু তারপর অন্য বিক্রিয়ক বা বিক্রিয়কসমূহের সাথে বিক্রিয়া করে উৎপাদ তৈরী করে এবং সরিনা মধ্যবর্তী পরমাণু বা মুক্তমূলক বা উচ্চ শক্তিসম্পন্ন অনু আবারো তৈরী করে। ফলে বিক্রিয়াটি পুনরায় শুরু হয়ে শেষ উৎপাদ উৎপন্ন করে। এ ধরনের ধাপকে শৃংখল চলন ধাপ বলে। তুলনামূলকভাবে দ্রুতগতি সম্পন্ন এবং বিক্রিয়ার অধিকাংশ উৎপাদই এ ধাপে তৈরী হয়ে থাকে।

৩. শৃংখল স্থানান্তর ( Chain transfer ) শৃংখল চলন ধাপের কোন কোন ক্ষেত্রে নতুন চেইন বাহক তৈরী – হতে দেখা যায় । এ ধরণের ধাপকে শৃংখল স্থানান্তর ধাপ বলে । শৃংখল স্থানান্তর ধাপে প্রাথমিক চেইন বাহক কিছু উত্তেজিত অণুর সাথে বিক্রিয়া করে নতুন চেইন বাহক তৈরী করে।

৪. শৃংখলা বাধা ( Chain inhibition): এ ধাপে আরো অধিক সক্রিয় মধ্যবর্তী পরমাণু বা মুক্তমূলক উচ্চ শক্তিসম্পন্ন অণু তৈরী করতে গিয়ে উৎপন্ন উৎপাদ বিনষ্ট হয় । ফলে বিক্রিয়ার সার্বিক হার হ্রাস পায় । এ ধরণের ধাপকে শৃংখল বাধা ধাপ বলে । উৎপন্ন উৎপাদের ঘনমাত্রা যথেষ্ট না হওয়া পর্যন্ত শৃংখল বাধা চলতে থাকে।

৫. শৃংখল সমাপন (Chain termination): এ ধাপে সক্রিয় মধ্যবর্তী পরমাণু বা মুক্তমূলক উচ্চ শক্তিসম্পন্ন অণু অপসারিত বা বিনষ্ট হয় এবং চেইনের সূচনা বা চলনের জন্য ইহাদেরকে আর পাওয়া যায় না। যখন বিক্রিয়ক অণুর অধিক হারে উৎপাদে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় এবং সক্রিয় মধ্যবর্তী পরমাণু বা মুক্তমূলক উচ্চ শক্তিসম্পন্ন অণু পরিবর্তনের মাধ্যমে অসক্রিয় অণুতে পরিনত হয় তখন চেইন বিক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটতে থাকে।

শৃংখল বিক্রিয়ার প্রধান বৈশিষ্ট্য


১. প্রতিটি চেইন বিক্রিয়ায় ধীরগতি সম্পন্ন প্রাথমিক ধাপে সক্রিয়া মধ্যবর্তী পরমাণু বা মুক্তমূলক উচ্চ শক্তিসম্পন্ন অণু তৈরী হয় যা দ্রুতগতি সম্পন্ন চলন ধাপের সূত্রপাত ঘটাতে সহায়তা করে।
২. প্রতিটি চেইন বিক্রিয়ার হার সংঘর্ষ তত্ত্বানুসারে প্রাপ্ত গতিবেগের তুলনায় অনেক বেশী।
৩. তা চেইন বিক্রিয়ার সরল কৌশলে ঘটে না।
৪. অশৃংখলিত (nonchain) বিক্রিয়ার শুরুতে বিক্রিয়ার হার বেশী থাকে কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বিক্রিয়ায় কমতে থাকে। কিন্তু চেইন বিক্রিয়ার শুরুতে বিক্রিয়ার শূন্য থাকে এবং সময়ের সাথে সাথে বাড়তে বাড়ছে গতিবেগ সর্বোচ্চ হয় ও সবশেষে বিক্রিয়ার হার কমতে থাকে।
৫. এ সকল বিক্রিয়া চাপ এবং বিক্রিয়কের ঘনমাত্রা দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়।
৬. আলোক রাসায়নিক চেইন বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম উৎপাদ উচ্চ হতে দেখা যায়।
৭. বিক্রিয়ক ব্যতীত অন্য কোন পদার্থের (foreign substance) উপস্থিতি বিক্রিয়ার হারকে বৃদ্ধি বালে করে।
৮. চেইন বিক্রিয়ার গ্যাস মিশ্রণে উপস্থিত রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয় কোন গ্যাস বিক্রিয়ার গতিধারাকে পরিবর্তন করতে পারে।
৯. চেইন বিক্রিয়াসমূহ সাধারণতঃ ভগ্নাংশ ক্রমের হয়ে থাকে।‌তাদের ক্রম বিক্রিয়া পাত্রের আকার এবং অন্যান্য শর্তের উপর নির্ভর করে।
১০. চেইন বিক্রিয়ার আবেশ কাল (Induction period) থাকে । যেহেতু শুরুতে চেইন বিক্রিয়ার হার শূন্য থাকে, হার বৃদ্ধির জন্য সময়ের প্রয়োজন হয়। এ ধরণের সময় কাল (Time lag) কে আবেশ কাল (Period of induction) বলে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url