ফরমালিন কি এর সুবিধা ও অসুবিধা

ফরমালিন কাকে বলে?


মিথান্যাল বা ফরম্যালডিহাইডের (HCHO) ৩০-৪০% জলীয় দ্রবণকে ফরমালিন বলা হয়। ফরমালিনে ফরম্যালাডিহাইডের পলিমারকরণকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য ১০-১২% মিথানল (স্থিতিকারক) যোগ করা হয়। জলীয় দ্রবণে ফরম্যালডিহাইড অস্থিতিশীল এবং পলিমারকরণে উদ্যত হয়।

ফরমালিন ব্যবহারের সুবিধা


ফরম্যালডিহাইডের ৩০-৪০% জলীয় দ্রবণ মেডিক্যাল ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। প্রাণীজ অঙ্গ, টিস্যু নমুনা, বায়োলজিক্যাল নমুনা সংরক্ষণে ফরমালিন একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্রবণ। এবং জীবাণুনাশক হিসেবে ফরমালিন একটি কার্যকর পদার্থ। ফরমালিনের অপর ব্যবহার হলো হেক্সামিন প্রস্তুতিতে যা বাতজ্বর ও মুত্রাশয়ের পীড়ায় ব্যবহার করা হয়।

এন্টি ব্যাকটেরিয়া অ্যাকুয়ারিয়ামে মাছের পরজীবী সংক্রমন রোধে ফরমালিন ব্যবহৃত হয়। পলিমার সংশ্লেষণে ফরম্যালডিহাইড ব্যবহৃত হয়। এদের মধ্যে ডেলরিন, ইউরিয়া ফরম্যালডিহাইড রেজিন, মেলামাইন - রেজিন (ফরমিকা), ফেনল ফরম্যালহিডাইড রেজিন (ব্যাকেলাইট) অন্যতম। 

ফরমালডিহাইড ব্যবহারের প্রায় ৫০% ই ব্যবহৃত হয় রেজিন উৎপাদনে। জীবানুনাশক হিসেবে অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং স্পোরের ধ্বংস সাধনে ফরমালিনের উচ্চ কার্যকারিতা রয়েছে। এদের মধ্যে ডেলরিন শক্ত প্লাস্টিক হিসেবে কাঠের বিকল্প হিসেবে, ফরমিকা কাঠের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে আবরণ হিসেবে, ব্যাকেলাইট বৈদ্যুতিক সুইচ, সকেট, টেলিফোন সেট, গানের সিডি প্রভৃতি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।

ফরমালিন ব্যবহারের অসুবিধা


ফরমালিনের ব্যাপক ব্যবহার, বিষাক্ততা, উদ্বায়ীতা এবং মানব স্বাস্থ্যের প্রতি হুমকির কারণে বিভিন্ন দেশে কঠোরভাবে এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ২০১১ সালে US National Toxicology Program ফরমালডিহাইডকে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

ফরমালিনের অপব্যবহারের সবচেয়ে উদ্বেগজনক ব্যাপার হলো, অসাধু ব্যক্তিরা বিভিন্ন ফল, শাকসবজি, মাংস, মাছ এবং দুধে ফরমালিন যোগ করে এদের সংরক্ষণ সময় বৃদ্ধি করে। ফরমালডিহাইডের আণবিক ভর এবং উচ্চ দ্রাব্যতার প্রেক্ষাপটে এটি সহজেই কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।

উচ্চ সক্রিয়তার কারণে এটি সহজেই কোষের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানসমূহের (DNA, এনজাইম) সাথে মিথস্ক্রিয়ায় লিপ্ত হয়। এ কারণে ক্যান্সার ছাড়াও কিডনী, লিভার, পাকস্থলী ফরমালডিহাইড দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

উল্লেখ্য, ফরমালিন পানিতে দ্রবণীয় হওয়ায় অজ্ঞতাবশত ফরমালিন যুক্ত কোনো ফলমূল বা মাছ বাজার হতে কেনার পর তা ভালো করে পানিতে ধুয়ে নিলে ক্ষতিকর প্রভাব কিছুটা হ্রাস পায়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url