ট্যানিং কি?
পশু যখন জীবিত থাকে, তখন তার চামড়াটি নরম, নমনীয়, অত্যন্ত দৃঢ় এবং টেকসই হয়ে থাকে। মৃত চামড়ার ক্ষেত্রে এসব বৈশিষ্ট্য আর থাকে না, এটি আর্দ্র হলে পঁচে যায় এবং শুকিয়ে গেলে অত্যন্ত শক্ত এবং ভঙ্গুর হয়ে যায়। ট্যানিং প্রক্রিয়ায় চামড়ার কাঠামোকে সুস্থিত করা হয় এবং একই সময়ে রাসায়নিকভাবে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পঁচনশীলতা রোধ করা হয়।
১. কিউরিং (Curing): চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ শুরু করতে কয়েকদিন সময় লাগে, তাই কিউরিং করা হয়। এ প্রক্রিয়ার লবণ ব্যবহার করে প্রোটিন জাতীয় পদার্থ কোলাজেন (Collagen) কে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করা হয়। কিউরিং প্রক্রিয়ায় NaCI ব্যবহার করে চামড়া থেকে অতিরিক্ত পানি অপসারণ করা হয়।
২. বীম হাউজ অপারেশন: কিউরিং এবং ট্যানিং এর মধ্যবর্তী প্রক্রিয়াকরণ ধাপগুলো বীম হাউজ অপারেশন নামে পরিচিত। এ পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে পানিতে সিক্তকরণ বা সোকিং, লাইমিং, ডিলাইমিং এবং বেটিং (pH অবনমন এবং এনজাইম দ্বারা ক্রিয়াকরণ) এবং পিকলিং (সাধারণ লবণ এবং সালফিউরিক এসিড দ্বারা সংরক্ষণ) উল্লেখ্য, শুধু জেম ট্যানিং এর ক্ষেত্রে পিকলিং প্রয়োজন, ভেজিটেবল ট্যানিং এর ক্ষেত্রে পিকলিং প্রয়োজন হয় না। পিকলিং করার জন্য চামড়াকে লবণের দ্রবণ ও 1.5% সালফিউরিক এসিড এর জলীয় দ্রবণের মধ্যে মিশ্রিত করা হয়।
ট্যানিং কাকে বলে?
ট্যানিং হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে কাঁচা চামড়াকে রাসায়নিক প্রক্রিয়াজাত করে লেদারে (পাকা চামড়া) পরিণত করা হয়, যাতে করে এর প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ণ থাকে। কাঁচা চামড়াকে ট্যানিং এর জন্য প্রস্তুত করার পূর্বে কতিপয় ধাপে প্রক্রিয়াকরণ করা হয়।২. বীম হাউজ অপারেশন: কিউরিং এবং ট্যানিং এর মধ্যবর্তী প্রক্রিয়াকরণ ধাপগুলো বীম হাউজ অপারেশন নামে পরিচিত। এ পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে পানিতে সিক্তকরণ বা সোকিং, লাইমিং, ডিলাইমিং এবং বেটিং (pH অবনমন এবং এনজাইম দ্বারা ক্রিয়াকরণ) এবং পিকলিং (সাধারণ লবণ এবং সালফিউরিক এসিড দ্বারা সংরক্ষণ) উল্লেখ্য, শুধু জেম ট্যানিং এর ক্ষেত্রে পিকলিং প্রয়োজন, ভেজিটেবল ট্যানিং এর ক্ষেত্রে পিকলিং প্রয়োজন হয় না। পিকলিং করার জন্য চামড়াকে লবণের দ্রবণ ও 1.5% সালফিউরিক এসিড এর জলীয় দ্রবণের মধ্যে মিশ্রিত করা হয়।
তখন কোলাজেনের pH খুবই কমে যায় এবং খনিজ ট্যানিং এর এজেন্টগুলো সহজে চামড়ার ভেতর প্রবেশ করতে পারে কলে চামড়ায় যুক্ত Ca লবণসমূহ অপসারিত হয়। প্রোটিনের Ca লবণ সালফিউরিক এসিডের, এর সাথে বিক্রিয়া করে CaSO4, তৈরির মাধ্যমে অপসারিত হয় এবং প্রোটিনের মাঝে সংযোগ সৃষ্টি করে চামড়াকে ক্লোম ট্যানিং এর উপযোগী করে তোলে। কাঁচা চামড়া থেকে সকল অপ দ্রব্য দূরীকরণের পর পাকা চামড়া প্রস্তুতকরণের প্রক্রিয়াকে চামড়া ট্যানিং বলে। চামড়ার মূল রাসায়নিক এটি একটি আঁশ জাতীয় প্রোটিন এবং অ্যামিনে এসিডের সমন্বয়ে গঠিত ট্যানিং।
চামড়া ট্যানিং এর সাহায্যে পশুর কাঁচা চামড়াকে ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়। ট্যানিং - এর সময় চামড়াকে লবণযুক্ত করা হয় যাতে চামড়ায় বিদ্যমান প্রোটিন জাতীয় পদার্থ যেমন— কোলাজেন যাতে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা পঁচে না যায়। এছাড়া খাবার লবণ যোগ করার ফলে এটি কোলাজেনের pH মানকে বেশ নিচে নামিয়ে চামড়ায় খনিজ ট্যানিং পদার্থ প্রবেশে সাহায্য করে এবং চামড়ার pH নেমে গিয়ে যে ক্ষতি হতো তা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
টার্নিং প্রক্রিয়া দু ধরনের:
১. চামড়ার ভেজিটেবিল ট্রেনিং
২. খনিজ বক্স চামড়া ট্যানিং
১. ভেজিটেবল ট্যানিং (Vegetable tanning): ভারী লেদার, জুতার তলা কিংবা বেল্টের জন্য ভেজিটের ট্যানিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। উদ্ভিজ্জ ট্যানিং এ সক্রিয় উপাদান হলো ট্যানিন। ট্যানিন এক শ্রেণির জৈন যৌগ (পলিফেনল), যা প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন উদ্ভিদোও পাড়ায় ও ছালে পাওয়া যায়। বিশেষ করে বাদাম, হরিতকী, আমলকী, সুপারী এবং গরান গাছের ছালে যথেষ্ট পরিমাণে ট্যানিন বিদ্যমান থাকে। ট্যানিন চামড়ার কোলাজেনের সাথে আবাদ হয়ে এবং ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ রোধী করে তোলে। ট্যানিন ঋণাত্মক চার্জযুক্ত কোলয়েড হিসেবে কাজ করে।
অপরদিকে এসিড মাধ্যমে চামড়ার প্রোটিন ধনাত্মক চার্জযুক্ত থাকে। কাজেই ট্যানিন, প্রোটিনের চার্জকে প্রশমিত করে এবং ট্যানিন কোলাজেন বন্ধন সৃষ্টি হয়। যেহেতু, ক্ষারীয় দ্রবণে প্রোটিন ঋণাত্মক চার্জযুক্ত থাকে, কাজেই ট্যানিং করার পূর্বে চুন - পদ্ধতি হতে উদ্ভুত সকল চুনকে প্রশমিত করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় ট্যানিং করতে প্রায় কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে। ট্যানিং করার সময় ট্যানিন চামড়ায় বিদ্যমান শর্করা নিঃসরণ করে, যা জারিত হয়ে এসিডে পরিণত হয় এবং এভাবে তরলকে অম্লীয় করে রাখে।
ট্যানিং প্রক্রিয়াকালে চামড়ার প্রোটিনের সাথে বিপুল পরিমাণে ট্যানিন সংযুক্ত হয় এবং এর ফলে চামড়ার ওজন বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। সংযুক্ত ট্যানিন চামড়ার ছিদ্রসমূহকে বন্ধ করে দিতে সমর্থ হয় এবং এতে চামড়া শক্ত হয়। স্যুটকেস ও আসবাবপত্র নির্মাণে ঐ লেদার ব্যবহৃত হয়।