দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি বর্তমানে একটা অপ্রতিরোধ্য ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। বিগত সালে অনিয়ন্ত্রিত পেয়াজের মূল্যবৃদ্ধি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে তাই দেখিয়ে দিচ্ছে। নানান কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। যেমন:
১. চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্যহীনতা: দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ এটি। ক্রেতার চাহিদানুযায়ী সরবরাহ না থাকায় অনিবার্যভাবে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটে।
২. অসাধু ব্যবসায়ীদের চক্রান্ত: স্বার্থান্বেষী ব্যবসায়ী মহল মজুতদারির মাধ্যমে বাজারে আকস্মিক কৃত্রিম মূল্যবৃদ্ধি ঘটায়। হঠাৎ করে তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বাজার থেকে গায়েব করে ফেলে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে।
৩. বিদেশে রপ্তানি: বিদেশে যেসব পণ্য রপ্তানি করে বেশি লাভ হয়, রপ্তানিকারকেরা সেসব পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে। এতে করে দেশে পণ্য ঘাটতি হয় এবং মূল্য বৃদ্ধি পায়।
৪. করবৃদ্ধি: অনেক সময় সরকার দেশের অর্থনৈতিক ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে জনগণের ওপরে অধিক করারোপ করে। বিক্রেতারা এ কর সমন্বয় করতে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে ফলে পণ্যদ্রব্যের মূল্য বেড়ে যায়।
৫. চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি: আমাদের দেশে পণ্য উৎপাদক এবং ভোক্তার মাঝে অসংখ্য স্তরে চাঁদাবাজরা সক্রিয় থাকে এবং তাদের চাঁদা দিতে দিতে পণ্যের মূল্য অনেক বেড়ে যায়। তারা সাধারণত পরিবহন সেক্টর এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অবৈধ চাঁদা আদায় করে, যার প্রভাব পড়ে পণ্যদ্রব্যের ওপর।
৬. সংরক্ষণ, সরবরাহ ও বণ্টনে অব্যবস্থা: রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং সামাজিক অস্থিরতার কারণে যেমন— হরতাল, ধর্মঘট, অবরোধ ইত্যাদির কারণেও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। এসব ক্ষেত্রে পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় বাজারে দ্রব্য সরবরাহ কমে যায়, ফলে মূল্য বৃদ্ধি পায়। এর ওপর পরিবহন খরচ বৃদ্ধি ও বণ্টনে অব্যবস্থার ফলেও মূল্যবৃদ্ধির কবলে পড়তে হয়।
৭. বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধি: বর্তমানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা । উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশগুলো পর্যন্ত এ সমস্যার হাত থেকে রেহাই পায়নি। ফলশ্রুতিতে আমদানিকৃত দ্রব্যের মূল্য বাড়ছে। তবে আফসোস, এ বিশ্ববাজারে অনেক সময় দ্রব্যের মূল্য কমে এলেও আমাদের দেশে মূল্যহ্রাসের কোনো প্রভাব পড়ে না।
৮. জনসংখ্যা বৃদ্ধি: অধিক জনসংখ্যা আমাদের দেশের একটা অন্যতম প্রধান সমস্যা। বাড়তি জনসংখ্যার জন্যে প্রয়োজন বাড়তি পণ্যের ব্যবস্থা করা। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব হয় না বলে বাজারে পণ্য ঘাটতির সৃষ্টি হয়। এতে করে মূল্য বেড়ে যায়।
৯. চোরাচালান: কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের আশায় দেশীয় পণ্য চোরাপথে বিদেশে পাচার করে দেয়। এতে করে দেশে সেসকল পণ্যের দাম বেড়ে যায়।
১০. প্রাকৃতিক দুর্যোগ: ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের দেশের নৈমিত্তিক ব্যাপার। এ ধরনের দুর্যোগ নষ্ট করে দেয় অনেক খাদ্যপণ্য। ফলে খাদ্যদ্রব্যের ঘাটতি সৃষ্টি হয়। আবার দুর্যোগের ফলে অনেক সময় একস্থান থেকে অন্যস্থানে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায়ও পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হয় বলে পণ্যের দাম বেড়ে যায়।
১১. জাতীয় জীবনে প্রচলিত বিভিন্ন উৎসব: ঈদ, নববর্ষ, পূজা প্রভৃতি উপলক্ষ্যে মানুষ সাধ্যের অতীত পণ্যদ্রব্য ক্রয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এতে পণ্যদ্রব্যের ওপর অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ পড়ে। এ সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফা লাভের আশায় পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। আমাদের দেশের একটি বড় সমস্যা হলো- একবার কোনো বস্তুর মূল্য বৃদ্ধি পেলে সে বৃদ্ধির পারদ কখনো নিম্নগামী হয় না।
এছাড়া আমদানিকৃত পণ্যের ওপর যে শুল্কভার আরোপ করা হয়, তাতেও পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। এতে দুর্ভোগ বাড়ে জনগণের। কেননা পণ্যের ওপর যে করারোপ করা হয় তা প্রকারান্তরে জনগণকেই বহন করতে হয়।