মুজিবনগর সরকার

১১ জুলাই ১৯৭১ সালে তাজউদ্দিন আহমেদ এর নির্দেশে সমগ্র দেশকে ১১ টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। দেশের চলমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় মুজিবনগর সরকারের দায়িত্ব ছিল অপরিসীম।

মুজিবনগর সরকারের উদ্দেশ্য


মুজিবনগর সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা এবং বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্ব জনমত সৃষ্টি করা। বাঙালি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাধারণ মানুষ, যুবক অর্থাৎ সকল চিনি লোকদেরকে নিয়ে কাজ করার জন্য ১০ এপ্রিল ১৯৭১ সালে গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার। ১০ এপ্রিল সরকার দেশটাকে চারটি সামরিক অঞ্চলে ভাগ করে। এবং এখানে ৪ জন সেক্টর কমান্ডার নিয়োগ করেন। ১১ এপ্রিল পুনঃবিন্যাস করে ১১ টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। সমগ্র দেশটিকে ৬৪ সাব সেক্টরে বিভক্ত করে এবং তিনটি ব্রিগেড ফোর্স নিযুক্ত করা হয়।

১১ টি সেক্টরে যেসব বাহিনীর সদস্য যোগদান করে


পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত সেনা কর্মকর্তা, ইপিআর, পুলিশ, নৌ এবং বিমান বাহিনীর সদস্য। ১১ এপ্রিল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা নামক জায়গায় মুজিবনগর সরকার গঠন করে বিভিন্ন পদ বিন্যাস করা হয় পদ গুলো নিম্নরূপ।

১. রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হিসেবে খ্যাত।

২. উপরাষ্ট্রপতি অথবা অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম

৩. প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ এছাড়া তাঁর আরও একটি পদ ছিল। প্রতিরক্ষামন্ত্রী

৪. অর্থমন্ত্রী এম এম মনসুর আলী

৫. পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিল খন্দকার মোশতাক আহমেদ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি করা হয়

৬. স্বরাষ্ট্র ও ত্রাণ মন্ত্রী ছিল এইচএম কামরুজ্জামান

মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠান


মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথ তলা বঙ্গবন্ধুর সম্মানে নাম পরিবর্তন করে মুজিবনগর রাখা হয় এখানেই মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠিত হয়। মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের শপথ বাক্য লেখেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম। এবং শপথ বাক্য পাঠ করান অধ্যাপক ইউসুফ আলী। মুজিবনগর সরকারের প্রতি প্রথম আনুগত্য প্রকাশ করে জনাব এম হোসেন আলী। প্রথম কূটনীতিক ব্যক্তি হিসেবে আনুগত্য প্রকাশ করে জনাব কে এম শাহাবুদ্দিন এবং আমদাদুল হক ৬ এপ্রিল ১৯৭১ সালে।

মুজিবনগর সরকারের সচিবালয় কার্যালয় ছিল কলকাতার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের ৫৭/৮ নম্বর বাড়ি। এই বাড়িটিকে প্রবাসী সরকারের সদরদপ্তর হিসেবে ধরা হতো এই 8 নং বাড়িটি অস্থায়ী সদরদপ্তর হিসেবে পরিচালিত হতো।

মুজিবনগর সরকারের সচিবালয় কেন্দ্রিক দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যগণ


১. মুখ্য সচিব: রুহুল কুদ্দুস

২. ক্যাবিনেট সচিব: তৌফিক ইসলাম

৩. প্রতিরক্ষা সচিব ছিল: আব্দুস সামাদ

৪. পররাষ্ট্র সচিব: মাহবুবুল আলম

৫. পুলিশ প্রধান ছিল: আব্দুল খালেক

৬. অর্থ সচিব: খন্দকার আসাদুজ্জামান

৭. বহিঃবিশ্বের বিশেষ দূত হিসেবে ছিল: বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী

মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিফৌজ কি


মুক্তিফৌজ হচ্ছে নিয়মিত বাহিনীর পাশে সাধারণ লোক, ছোট ছোট গেরিলা সংগঠন, আমজনতা নিয়ে যে বাহিনী গঠন করা হয়েছিল তাকে মুক্তিফৌজ নামে পরিচিত পরিচিত করা হয়। এখানে উল্লেখ্য যে ৪ এপ্রিল ১৯৭১ সালে কর্নেল এম এ জি ওসমানী নেতৃত্বে সিলেটের তেলিয়াপাড়া চা বাগানে ১৩ হাজার সৈন্য নিয়ে মুক্তিফৌজ গঠন করা হয়।

মুক্তিফৌজ এর প্রধান দায়িত্ব সদস্যগণ


১. কর্নেল এম এ জি ওসমানী: মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার ইন চিফ
২. লে কর্নেল আব্দুর রউফ: মহান মুক্তিযুদ্ধের চিফ অফ স্টাফ
৩. গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার: যুদ্ধে দায়িত্ব ছিল ডেপুটি চিফ অব স্টাফ যিনি স্বাধীনতাযুদ্ধে ঘোষণাপত্রের সময় উপস্থিত ছিলেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার গুলোর নাম এবং অঞ্চল


১. ১ নং সেক্টর দায়িত্ব ছিল রফিকুল ইসলাম এবং মেজর জিয়াউর রহমান প্রধান অঞ্চল চট্টগ্রাম। ১ নং সেক্টরে মুন্সী আব্দুর রউফ কাজ করতেন।

২. ২ নং সেক্টর দায়িত্ব ছিল খালেদ মোশাররফ এবং এটিএম হায়দার দুজনে মেজর। প্রধান অঞ্চল বৃহত্তর নোয়াখালী কুমিল্লা বি বাড়িয়য়া এবং রাজধানী ঢাকা শহর এবং ফরিদপুরের কিছু অংশ। ২ নং সেক্টরে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল কাজ করতে।

৩. ৩ নং সেক্টর দায়িত্ব ছিল কে এম শফিউল্লাহ এবং নুরুজ্জামান এখানে উল্লেখযোগ্য যে কে এম শফিউল্লাহ ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর প্রধান দায়িত্ব ছিল। প্রধান অঞ্চল হবিগঞ্জ কিশোরগঞ্জ।

৪. ৪ নং সেক্টর দায়িত্ব ছিল মেজর চিত্তরঞ্জন দত্ত এবং ক্যাপ্টেন আব্দুর রউফ এখানকার প্রধান অঞ্চল মৌলভীবাজার সিলেট। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান ৪ নং সেক্টরে কাজ করতেন।

৫. ৫ নং সেক্টর মেজর শওকত আলী একজন এই দায়িত্বে ছিল এখানকার প্রধান অঞ্চল সুনামগঞ্জ-সিলেট এর কিছু অংশ।

৬. ৬ নং সেক্টর দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল উইং কমান্ডার বাশার প্রধান অঞ্চল রংপুর দিনাজপুর

৭. ৭ নং সেক্টর প্রধান দায়িত্বে নাজমুল হক মেজর নাজমুল এবং নুরুজ্জামান প্রধান অঞ্চল রাজশাহী, বগুড়া ও পাবনা।

৮. ৮ নং সেক্টর দায়িত্বে ছিল মেজর আবু ওসমান চৌধুরী এবং মেজর এম এ মঞ্জুর প্রধান অঞ্চল ছিল বৃহত্তর কুষ্টিয়া, যশোর, গোপালগঞ্জ, মুজিবনগর ‌ এই ৮ নং সেক্টরে কাজ করতো বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ।

৯..৯ নং সেক্টর দায়িত্বে ছিলেন মেজর জলিল এবং এম এ মঞ্জুর এবং জয়নাল আবেদীন মেজর। এই অঞ্চলের প্রধান অংশ সাতক্ষীরা বরিশাল

১০. ১০ নং সেক্টর যা নৌ সেক্টর হিসেবে পরিচিত এখানে নিয়মিত কোন সেক্টর কমান্ডার ছিল না। এখানে মুক্তিযুদ্ধের একজন বীরশ্রেষ্ঠ কাজ করত বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন যিনি একজন ইঞ্জিনরুম আর্টিফিসার অফিসার ছিলেন ‌

১১. ১১ নং সেক্টর এখানে প্রধান দায়িত্বে ছিল মেজর আবু তাহের এবং ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট এম হামিদুল্লাহ এখানকার প্রধান অঞ্চল ছিল মমিনশিং টাঙ্গাইল । এখানে মুক্তিযুদ্ধে নারী বীর প্রতীক হিসেবে পরিচিত তারামন বিবি ১১ নং সেক্টরের কাজ করতো।

ব্রিগেড আকারে তিনটি ফোর্স এর কর্মকর্তা


১. কে ফোর্স দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার খালেদ মোশাররফ
২. এস ফোর্স দায়িত্বে ছিল কে এম শফিউল্লাহ
৩. জেড ফোর্স দায়িত্বে ছিল জিয়াউর রহমান

মহান মুক্তিযুদ্ধে এসব বাহিনী ছাড়াও ছিল গেরিলা বাহিনী, কূক প্লাংকটন বাহিনী, টাঙ্গাইলের কাদেরিয়া বাহিনী, টাঙ্গাইলের বাতেন বাহিনী, এছাড়া প্রতিটি অঞ্চলে ছোটখাটো জানা-অজানা অনেক বাহিনী দেশ রক্ষার্থে উদ্দীপ্ত হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url