শেভিং লোশন ব্যবহারের উপকারিতা

আফটার শেভ লোশন কি


আফটার শেভ লোশন গোঁফ ও দাড়ি কাটার পর মুখমন্ডলের ত্বক খসখসে (rough) ও তঙ্ক (dry) হয়। রেজর (razor) দ্বারা দাড়ি ও গোঁফ কাটার সময় অসতর্কতাবশত কোন স্থান কেটে গেলে আফটার শেভ লোশন ব্যবহারে আরাম পাওয়া যায়। এজন্য অতি অল্পকালের মধ্যে এটি পুরুষের দৈনদিন জীবন ধারায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নেয়।

বর্তমানে সচেতন পুরুষরা তাদের ত্বকের যত্নে সর্বদাই এটি ব্যবহার করেন। এর ব্যবহার সত্যিকার অর্থেই ত্বকের যন্ত্রণা উপশমকারী (soothing), পরিচর্যাকারী (nourishing) এবং নিরাময়কারী (healing), যখন দাড়ি কাটার পর ত্বকে এটি লাগানো হয়। শেভ করার দরুণ ত্বকের যে ক্ষতি হয়, আফটার শেভ লোশন ব্যবহারে তা হ্রাস পায় এবং মুখমন্ডলের ত্বকে আরামদায়ক সুগন্ধ রেখে যায়।

আফটার শেভিং লোশন ব্যবহারের উপকারিতা


১. শেভিং পরবর্তী স্বস্তি প্রদান (Shaving Relief): আফটার শেভ লোশন মুখমন্ডলের ত্বককে শেভিংয়ের যন্ত্রণা থেকে স্বস্তি প্রদান করে। এ লোশন ত্বক হতে রক্ত পড়া বন্ধ করে । কেটে যাওয়া স্থান উপশম করে। রেজর ব্যবহারের দরুণ সৃষ্ট প্রদাহ হতে আরাম দেয়।

২. স্বাস্থ্যকর (Hygienic): আফটার শেভ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা মনে রাখি যে, আমরা আমাদের সৌন্দর্য্যের যত্ন নিচ্ছি এবং ত্বকের সুস্বাস্থ্য রক্ষা করছি। যে সকল পুরুষের মুখমন্ডলের ত্বকে ব্রণ থাকার দরুণ দাড়ি কামাতে সমস্যায় পড়েন তারা আফটার শেভ ব্যবহারে ত্বকের সুরক্ষা পান।

৩ ত্বকের যত্ন (Skin care): এ লোশন ব্যবহারে ত্বকের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম রজ্রগুলো পরিষ্কার হয় এবং ব্যাকটেরিয়া দ্বারা রন্ধ্রগুলোর বন্ধ হওয়া প্রতিরোধ করে। যার ফলে ত্বকে ব্রণ সৃষ্টি বন্ধ হয় কিংবা উপস্থিত ব্রণের কম ক্ষতি হয়। ত্বকে এটি আর্দ্রতা প্রদান করে বলে ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল দেখা যায়।

৪. ব্যক্তিত্ব (Impression): আফটার শেভের সুগন্ধ রয়েছে। তাই এটি ব্যবহারে দীর্ঘ সময় সুগন্ধ ছড়ায়। ফলে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায় । সুগন্ধ মানুষকে স্বভাবতই আকর্ষণ করে। তাই উন্নত ব্র্যান্ডের আফটার শেভ ব্যবহার করলে পুরুষের পদমর্যাদা বৃদ্ধি পায়।

৫. বাহ্যিক চেহারা (Appearance): আফটার শেভ ব্যবহারে ব্যক্তির মুখমন্ডলের ত্বকের সিদ্ধতার দরুণ আরো আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে । সৌন্দর্য বৃদ্ধির ফলে লোকের কাছে ব্যক্তির গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যায়।

৬. আত্মবিশ্বাস (Confidence): আফটার শেভ ব্যবহারে ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস বাড়ে। ফলে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, (life - styles) প্রভাব পড়ে। দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা অন্যের ওপর প্রভাব ফেলে। এটি ব্যবহারে অনুভূতিতে সুখের সৃষ্টি করে বলে ব্যক্তির জীবন দর্শনেও তবে এটা মনে রাখতে হবে যে, আফটার শেষে অ্যালকোহল ব্যবহৃত হয়। এটি ত্বকের পক্ষে ক্ষতিকর এবং ত্বকে এটি প্রদাহ তৈরি করতে পারে। নিজের ত্বকের প্রকৃতি অনুযায়ী আফটার শেভ পছন্দ করা উচিত।

আফটার শেভ লোশনের প্রয়োজনীয় উপাদান

ক. জীবাণুনাশকারী পদার্থ
খ আর্দ্রতা প্রদানকারী পদার্থ
গ. সুগন্ধি পদার্থ

নিচে একে একে এদের সম্পর্কে আলোচনা করা হলো

ক. জীবাণুনাশকারী পদার্থ (Antiseptics): শেভিংয়ের ফলে ত্বকে ছোট কাটা এবং জ্বালাপোড়া হতে পারে। অ্যান্টিসেপটিক পদার্থ আফটার শেষে বিদ্যমান অ্যালকোহল SD অ্যালকোহল ৪০ অ্যান্টিসেপটিকের কাজ করে। অ্যালকোহলবিহীন আফটার শেভে পলিকোয়ার্টারনিয়াম- ১০ ব্যবহৃত হয়। এটি ব্যবহার করলে আফটার শেভের তাক - জীবন (shelf - life) বৃদ্ধি পায়। উইচ হ্যাঞ্জেল (Witch hazel) একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক। এটি ব্যবহারে রক্ত নির্গমন বন্ধ করা যায়।

খ. আর্দ্রতা প্রদানকারী পদার্থ (Moisturizers): আফটার শেভ ত্বকের কোমলতা ফিরিয়ে আনে, এজন্য আফটার শেষে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহৃত হয়। গ্লিসারিন পানিগ্রাহী বলে এটি একটি আর্দ্রতা দানকারী পদার্থ। বাতাস হতে আর্দ্রতা অর্থাৎ জলীয় বাষ্প শোষণ করে ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করে। অলিভ ওয়েলও একটি ময়েশ্চারাইজার হিসেবে তেল - নির্ভর আফটার শেষে ব্যবহৃত হয়। অ্যালানটয়েন যৌগ একটি প্রদাহ নিবারনকারী পদার্থ বিধায় এটিও আফটার শেভ লোশন প্রস্তুতিতে ভূমিকা রাখে।

গ. সুগন্ধী পদার্থ (Frangrances): আফটার শেভ সুগন্ধযুক্ত বা গন্ধবিহীন হতে পারে। অনেক ব্যক্তি কড়া গন্ধ সহ্য করতে পারেন না। এতে তাদের মাথা ধরা, ত্বকের প্রদাহ বা অন্যান্য অস্বস্তিকর উপসর্গ দেখা দেয়। সুগন্ধযুক্ত আফটার শেভে প্রায় ৪০০০ বিভিন্ন রাসায়নিক সুগন্ধী দ্রব্য হতে পছন্দনীয় সুগন্ধীদ্রব্য যোগ করা হয়। পরিবেশবান্ধব সবুজ আফটার শেভে চন্দন, প্যাচুলি তৈল এবং সেইজ উদ্ভিদের এসেনসিয়েল তৈল ব্যবহৃত হয়।

আফটার শেভ লোশন প্রস্তুতি


আফটার শেষের ধারণা এসেছে রেজর দ্বারা মুখমন্ডলের ত্বকের কোন ছোট বা বড় কাটা স্থানের সংক্রমণ প্রতিরোধে একটা উপায় বের করার মানসে। রেজরে ব্যবহৃত ব্লেডে আয়রন আছে, যা শেভিংয়ের সময় ত্বকের রক্তের সংস্পর্শে আসতে পারে। ফলে ছোট বা বড় ধরনের সংক্রমণের সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে। আফটার শেভ ব্যবহারে এ ধরনের সংক্রমণ বাধা পায়। এভাবে এটি ব্যবহারে ব্যক্তির স্বাস্থ্যের সুরক্ষা হয়।

আফটার শেভ লোশনের ব্যবহার প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা শাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়েছিল। তখন এতে অ্যালাম ব্যবহৃত হত বর্তমানে ডজন খানেক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারে আফটার শেভ উৎপন্ন হয়। যদিও এদের ব্যবহারে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়। তবুও গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয় নাই যে, এর ব্যবহারে দাড়ি সাদা হয়। সুতরাং এ আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, শেভের পর অবশ্যই আমাদের দাড়ি সাদা হয়। ত্বকের সুরক্ষার জন্য আফটার শেভ লোশন ব্যবহা করা উচিত। ওল্ড স্পাইস আফটার শেভ লোশন এ বিষয়ের পথিকৃৎ।

এ লোশনের বিশেষ বৈশিষ্ট হলো এটি জীবাণুনাশক, যা মুখমন্ডলের ত্বকের ক্ষতের বা কাটা স্থানের সুরক্ষা আনে। আফটার শেভ লোশন মূলত অসেবনীয় স্পিরিট অ্যালকোহল দিয়ে তৈরি, যা জীবাণুনাশক। এতে স্টিয়ারে ধর্য রাখছে। এ ধরণের অনেক আফটার শেভ লোশনে। এর সাথে সুগন্ধী রাসায়নিক পদার্থ অথবা এসেনসিয়েল তৈল ব্যবহার করে আফটার শেভ লোশনের সুগন্ধ আনা হয়। অনেক আফটার শেভে আর্দ্রতা প্রদানকারী পদার্থ থাকে বলে ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করে।

এ জাতীয় পদার্থ প্রাকৃতিক ভেষজ বা কৃত্রিম রাসায়নিক পদার্থ হতে পারে। এটি ত্বককে নরম করে। একটি লোশনে অনেক সময় রক্ত নির্গমনরোধী রাসায়নিক পদার্থও যোগ করা হয়। তাই এটি এক ধরনের ঔষধ হিসেবে কাজ করে এবং ত্বকের পরিষ্কারক ও আরামপ্রদানকারী পদার্থ হিসেবে ভূমিকা রাখে। প্রাকৃতিক ভেষজ দ্বারা প্রস্তুতকৃত আফটার শেভে লেবুর রস, কমলার রস, হলুদ, ফুলের নির্যাস, কর্পূর ইত্যাদি থাকে। এ ধরনের আফটার শেভ ব্যবহার ত্বকের জন্য নিরাপদ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url