অ্যালকালয়েড কি, বৈশিষ্ট্য ও কাজ

আলিকালয়েড কাকে বলে?


আলিকালয়েড শব্দের অর্থ ক্ষার-সদৃশ। উদ্ভিদ-জাত যে সকল রাসায়নিক যৌগের হেটারোসাইক্লিক চক্রে এক বা একাধিক নাইট্রোজেন এবং প্রাণীদেহে যাদের সুনির্দিষ্ট কার্যকারীতা রয়েছে তাদেরকে অ্যালকালয়েড বা উপক্ষার (alkaloids) বলে।

নিকোটিন, অ্যাট্রোপিন প্রভৃতি যৌগকে উপরোক্ত সংজ্ঞা অনুসারে অ্যালকালয়েড বলা যায়। এ সকল রাসায়নিক যৌগ ক্ষারকীয় ধর্মবিশিষ্ট বলে এদেরকে অ্যালকালয়েড বা উপক্ষার বলে। উল্লেখ্য যে অ্যালকালয়েডের এই সংজ্ঞা একেবারে যথার্থ নয়। কারণ সকল অ্যালকালয়েড এই সংজ্ঞার আওতায় পড়ে না। অ্যালকালয়েডসমূহ বা উপক্ষারসমূহ।

১. পিপেরিন ক্ষারকীয় নয় এবং বস্তুত এর কোনরূপ শারীরিক কার্যকারিতা নেই। এতদসত্ত্বেও এটি একটি অ্যালকালয়েড।
২. এফেড্রিন সরল-শৃঙ্খল বিশিষ্ট অ্যালকালয়েড এবং এটি পশুর গ্রন্থি কর্তৃক তৈরী হয় এবং এর শারীরিক কার্যকারিতা আছে; কিন্তু এতে কোন হেটারোসাইক্লিক চক্র নাই। এতদসত্ত্বেও এটি একটি অ্যালকালয়েড। অ্যালকালয়েডের শ্রেণীভুক্ত করা যায় না।
৩. থায়ামিন অণুতে নাইট্রোজেনবিশিষ্ট হেটারোসাইক্লিক চক্র রয়েছে কিন্তু এর উৎসের ভিন্নতার কারণে একে এটি অ্যালকালয়েড শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।
৪. কলকিসিন অণুতে নাইট্রোজেনবিশিষ্ট হেটারোসাইক্লিক চক্র রয়েছে এবং এ চক্র মৃদু ক্ষারক প্রকৃতির হওয়া সত্ত্বেও
৫. ক্যাফেইন অ্যালকালয়েড এর সকল বৈশিষ্ট্য পূর্ণ করলেও একে অ্যালকালয়েডের অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি।
৬. অ্যামাইনো এসিড, ফিনাইলইথাইলঅ্যামাইন, কলিন প্রভৃতি বিভিন্ন বায়ো অণুর ক্ষারকীয় প্রকৃতি এবং শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া থাকা সত্ত্বেও এদেরকে অ্যালকালয়েড শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

সুতরাং বলা যায় যে, গঠন, প্রকৃতি ও গুণাগুণে বিভিন্ন উপক্ষারীয় দ্রব্যের মধ্যে বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয় বলে অ্যালকালয়েডের কোন সুষ্ঠু সংজ্ঞা প্রদান সম্ভব নয়।

অ্যালকালয়েডর বৈশিষ্ট্য


১. যে সকল রাসায়নিক যৌগসমূহকে উদ্ভিদে পাওয়া যায়; তবে কিছু সংখ্যক প্রাণী থেকেও উদ্ভূত হয়।

২. যে সকল রাসায়নিক যৌগের গঠনে নাইট্রোজেনবিশিষ্ট হেটারোসাইক্লিক চক্র থাকে এবং
৩. যাদের ক্ষারকীয় ধর্ম ও শারীরিক কার্যকারিতা আছে 

অ্যালকালয়েড ভৌত বৈশিষ্ট্য


১. খুব কম সংখ্যক অ্যালকালয়েড বর্ণযুক্ত যেমনঃ বারবেরিন হলুদ বর্ণের হয়।

২. উপক্ষারসমূহ সাধারণত বিভিন্ন জৈব দ্রাবকে যেমন: অ্যালকোহল , ক্লোরোফরম ইত্যাদিতে দ্রবণীয় (অবশ্য কোনাইন ও নিকোটিন তরল জাতীয় এবং সহজেই পানিতে দ্রবণীয়) কিন্তু পানিতে দ্রবণীয় নয়।

৩. অ্যালকালয়েডগুলি, সাধারণত তিক্ত স্বাদযুক্ত।

অ্যালকালয়েড রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য


১. উপক্ষারসমূহ সাধারণত নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সমন্বয়ে গঠিত। কিন্তু খুব কম সংখ্যক অ্যালকালয়েড যেমন: নিকোটিনে অক্সিজেন নেই।

২. এদের গঠনে প্রাপ্ত এক বা একাধিক নাইট্রোজেন পরমাণু সাধারণত হেটারোসাইক্লিক চক্রে অবস্থান করে।

৩. এরা সাধারণত আলোক সক্রিয়। তবে কোনাইস ডানঘূর্ণি এবং প্যাপভেরিন আলোক নিষ্ক্রিয়।

৪. অধিকাংশ অ্যালকালয়েড মিথাইল আয়োডাইডের সাথে বিক্রিয়া করে স্ফটিকাকার উৎপাদ গঠন করে; উৎপাদকের প্রকৃতি অ্যালকালয়েডটি সেকেন্ডারী বা টারসিয়ারী ক্ষারক তার উপর নির্ভর করে।

৫. প্রায় সকল অ্যালকালয়েডই ক্ষারক জাতীয়। এরা জৈব ও অজৈব উভয় জাতীয় এসিডের সাথে স্ফটিকাকার লবণ গঠন করে। উৎপন্ন লবণের প্রকৃতি মূল অ্যালকালয়েডের প্রকৃতির উল্টা কারণ এরা পানিতে দ্রবণীয় কিন্তু জৈব দ্রাবকে অদ্রবণীয়। উদ্ভুত লবণের সাথে ক্ষারক সংযোগে মূল অ্যালকালয়েড পাওয়া যায়। এর উপর ভিত্তি করে অ্যালকালয়েডসমূহকে পৃথক ও সনাক্ত করা যায়। ভালয়ের তেলে stearine উপক্ষার পাওয়া যায়।

অ্যালকালয়েড কাজ


১. উদ্ভিদের বিপাক ক্রিয়াকালে উপক্ষারসমূহ উপজাত হিসেবে উৎপন্ন হয়।
২. উপক্ষারসমূহ প্রোটিন সংশ্লেষণে কাঁচামালরূপে ব্যবহার হতো।
৩. উপক্ষারসমূহ বিষাক্ত প্রকৃতির। এ কারণে এরা তৃণভোজী প্রাণী অর্থাৎ প্রাণীকূলের হাত থেকে সংশ্লিষ্ট উদ্ভিদ নিজেকে রক্ষা করে।
৪. উদ্ভিদের প্রজনন, বিপাক, শ্বসন এবং উদ্ভিদের বৃদ্ধির কাজে উপক্ষারসমূহ ভূমিকা পালন করে।
৫. উপক্ষারসমূহ উদ্ভিদকে বিষক্রিয়া থেকে রক্ষা করতে পারে।
৬. মানবদেহে উপক্ষারসমূহের সুনির্দিষ্ট কার্যকারীতা রয়েছে। যেমন: মুখের মাধ্যমে এদের সেবন করলে কার্যকারিতা বুঝা যায়। উদাহরণস্বরূপ
ক. কোনাইন হলো বাদামী বিষ
খ. কুইনিন ম্যালেরিয়া প্রতিষেধক
গ. কোকেইন স্থানীয় অচেতন্য কারক
ঘ. মরফিন ব্যাথা দূরকারক
ঙ. অ্যাট্রোপিন চোখের তারা প্রসারণকারী নাশক
চ. কলকিসিন গৈটেবাত নাশক হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url