লিথিয়াম ব্যাটারি ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা

লেড স্টোরেজ এবং লিথিয়াম ব্যাটারি ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা

লেড স্টোরেজ ব্যাটারি ব্যবহারে সুবিধা


১. নিম্ন অভ্যন্তরীণ রোধ (Low internal resistance): লেড স্টোরেজ ব্যাটারির অভ্যন্তরীণ রোধ প্রায় 0.001 অপরদিকে ঘড়িতে ব্যবহৃত ব্যাটারির অভ্যন্তরীণ রোধ প্রায় 100 ohms। অভ্যন্তরীণ রোধ কম হওয়ায়, লেড ব্যাটারি থেকে শুরুতে উচ্চ বিদ্যুৎ শক্তি পাওয়া যায়। কার - ইঞ্জিনে প্রয়োজনীয় উচ্চ বিদ্যুৎ শক্তি লেভ স্টোরেজ ব্যাটারি থেকে পাওয়া যায় বলে কার - ইঞ্জিন স্টার্ট করা সহজ হয়। কিন্তু লেড স্টোরেজ ব্যাটারির 12V এর সমতুল্য আটটি 1.5V শুঙ্ক (AA) এর অভ্যন্তরীণ রোধ বেশি হওয়ায় এর থেকে কার ইঞ্জিন স্টার্ট করার প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ শুরুতেই পাওয়া যায় না বলে শুষ্ক কোষ এক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় না।

২. রিচার্জেবল ব্যাটারি (Rechargeable): সাধারণ ব্যাটারি যেমন শুষ্ক কোষ, অ্যালকালাইন কোষ ইত্যাদিকে রিচার্জ র্করা যায় না। লেড - এসিড ব্যাটারিকে রিচার্জ করে বার বার ব্যবহার করা সম্ভব।

৩. চার্জ লেভেল পরীক্ষা (Checking charge levels): অ্যালকালাইন ব্যাটারি, লিথিয়াম অথবা নিকেল কেডমিয়াম ব্যাটারি ইত্যাদি চার্জ লেভেল পরীক্ষা করে ব্যাটারির অবস্থা জানার সুবিধা নেই; কিন্তু লেড - স্টোরেজ ব্যাটারির চার্জ লেভেল জানা যায়। কারণ এর মধ্যে ব্যবহৃত H2SO4, এর ঘনত্ব হাইড্রোমিটার দ্বারা মেপে চার্জ লেভেল জানা যায়। একটি পূর্ণ চার্জযুক্ত লেড স্টোরেজ ব্যাটারিতে H2SO4 এর ঘনত্ব 1.29 g / cm3 এর বেশি থাকে। H2SO4 এর ঘনত্ব কমলে বেটারি চার্জ লেভেল কমার নির্দেশ করে।

৪. সহজ প্রাপ্যতা (Availability): তুলনামূলক কম দামে লেড স্টোরেজ ব্যাটারি সর্বত্র পাওয়া যায়।

লেড-স্টোরেজ ব্যাটারি ব্যবহারে অসুবিধা


১. এসিড বার্ন বিপদ: লেড-স্টোরেজ ব্যাটারিতে 36-38 % (w / w) H2SO4 এর জলীয় দ্রবণ ব্যবহৃত হয়। এই শতকের বার্ন ক্ষত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই লেড-স্টোরেজ ব্যাটারি ব্যবহারে অত্যধিক সতর্ক থাকা উচিত।

২. রিচার্জালে দাহ্য II গ্যাস নির্গমন: লেড - স্টোরেজ ব্যাটারি রিচার্জের সময় কিছু পরিমাণ ইলেকট্রোপাইয় বাষ্পীভূত হয়ে যায় এবং ব্যাটারির খোলা মুখ দিয়ে দাহা H2, গ্যাস বের হতে পারে। তাই রিচার্জকালে লেড - স্টোরেজ ব্যাটারির নিকটে আগুন বা জ্বলন্ত শিখা রাখা যাবে না।

৩. ইলেকট্রোলাইট লেভেল সমস্যা (Electrolyte Levels): লেড - স্টোরেজ ব্যাটারিতে H2SO4 এসিড ঢালার একটি মুখ থাকে। ব্যাটারির রিচার্জের সময় এ ইলেকট্রোলাইট কোনো একটি সেলে কিছু পরিমাণে বাষ্পীভূত হয়ে এসিড। লেভেল সাধারণ অবস্থা থেকে কমে গেলে তখন ব্যাটারি সঠিকভাবে কাজ করে না। তখন ডিসৃটিল্ড ওয়াটার ঐ সেলে যোগ করে এসিড লেভেল ঠিক রাখতে হয়।

৪. ভারী ব্যাটারি বহন করতে সমস্যা (Troubles to Carry Heavy Battery): লেড স্টোরেজ ব্যাটারিতে ৩৮% H2SO4 এসিড দ্রবণে অনেকগুলো লেড ধাতুর পাত ও লেড অক্সাইড ইলেকট্রোড নিমজ্জিত থাকে। লেড স্টোরেজ ব্যাটারির ওজন 30-60 পাউন্ড হয়ে থাকে। এত ভারী লেড ব্যাটারিকে তুলতে গিয়ে অসতর্কতাবশত পেশিতে ব্যথা বা আহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৫. পরিবেশের দূষণ (Environmental Pollution): লেড - স্টোরেজ ব্যাটারি বর্জ্যরূপে ফেলে দিলে লেড / ধাতু মাটিতে দূষণ সৃষ্টি করে। লেড আয়ন (Pb2 +) মাটি থেকে খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করে মানুষের দেহে বিভিন্ন প্রকার রোগ সৃষ্টি করে থাক

লিথিয়াম ব্যাটারি ব্যবহারে সুবিধা ও অসুবিধা

লিথিয়াম ব্যাটারি দু'প্রকার; যেমন প্রাইমারি লিথিয়াম ব্যাটারি যেখানে লিথিয়াম ধাতু অ্যানোডরূপে ব্যবহৃত হয়। এটি রিচার্জেবল নয়। অপরটি হলো লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি। এটিতে অ্যানোড হলো লিথিয়ামযুক্ত গ্রাফাইট এটি রিচার্জেবল ব্যাটারি।

লিথিয়াম ব্যাটারির সুবিধা

 ১. ওজনে হালকা: লেড ধাতু ও নিকেল ধাতু দিয়ে তৈরি ব্যাটারির তুলনায় লিথিয়াম ব্যাটারি হাল্কা। তাই মোটর কারে এটি ব্যবহারযোগ্য।

২. পরিবেশ দূষণ, পাওয়ার ও স্থায়িত্ব: নিকেল ও লেড ধাতু থেকে তৈরি ব্যাটারির তুলনায় লিথিয়াম ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় , এটি তুলনামূলক কম বর্জ্যরূপে মাটিতে যুক্ত হয়। লিথিয়াম ব্যাটারির পাওয়ার অন্য যেকোনো ব্যাটারির পাওয়ারের তুলনায় বেশি।

লিথিয়াম ব্যাটারির অসুবিধা

১. রিচার্জেবল নয় (Not Rechargeable): লিথিয়াম ব্যাটারি রিচার্জেবল না হওয়ায়, একবার ব্যবহার শেষে পরিত্যাজ্য বা বর্জ্য হয়। আবার ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিতে যুক্ত থাকলে, তখন এটি প্রতিস্থাপন করা যায় না। ফলে ইলেকট্রনিক যন্ত্রটিই বর্জ্য হয়ে যায়।

২. বিপজ্জনক ফুটা বা লীক্ হওয়া: বৈদ্যুতিক যন্ত্রে ব্যবহৃত অবস্থায় লিথিয়াম ব্যাটারিতে লীক্ বা ফুটা হলে ঐ বৈদ্যুতিক যন্ত্র উত্তপ্ত ও পরে আগুন জ্বলে ওঠে। যেমন ২০০৬ সালে Dell Computer Company এদে তড়িৎ প্রাটিপের একটি ব্যাচ বাজার থেকে ভুল নিতে বাধ্য হয়; কারণ ঐ ল্যাপটপে ব্যবহৃত লিথিয়াম ব্যাটারিতে ফুটা হওয়ার তো দেখা গিয়েছিল।
 
৩. কমার্শিয়াল স্টোরেজে অসুবিধা: লিথিয়াম ব্যাটারিগুলো সংস্পর্শে থাকলে ফ্রিকশন বা সংঘর্ষের কারণে পরিবেশে বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টি করে। পানি - বাষ্পের সংস্পর্শে করোশন বা ধাতুক্ষয় ঘটে এবং H2, গ্যাস নির্গত করে। 

লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ব্যবহারে সুবিধা


১. বহনযোগ্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিতে লিথিয়াম - আয়ন ব্যাটারি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। লেড - এসিড ব্যাটারি ভারী এবং সহজে বহনযোগ্য নয়; কিন্তু লিথিয়াম - আয়ন রিচার্জেবল ব্যাটারি সহজে বহনযোগ্য।

২. লেড - এসিড ব্যাটারির সমপরিমাণ ভোল্টেজ বিদ্যুৎ লিথিয়াম - আয়ন ব্যাটারি থেকে পাওয়া যায়। তাই যান্ত্রিক গঠন কৗশল অপরিবর্তিত রেখে লেড - এসিড ব্যাটারির পরিবর্তে লিথিয়াম - আয়ন ব্যাটারি ব্যবহার সহজে করা যায়। 

লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ব্যবহারে অসুবিধা


 লিথিয়াম - আয়ন ব্যাটারিতে দাহ্য প্রকৃতির ইলেকট্রোলাইট অধিক চাপে থাকে। তাই এটি অবস্থাভেদে বিপজ্জনক হতে পারে। তাই এটিতে গঠনগত নিরাপদ ব্যবস্থা রয়েছে। তবুও কোনো কোনো কোম্পানির তৈরি লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি থেকে দুঘটনার সংবাদে ঐ কোম্পানির লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির ব্যাচ বাজার থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। লিথিয়াম - আয়ন ব্যাটারি বিস্ফোরণ ঘটবে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url