ন্যানো পার্টিকেল কী?
ন্যানো পার্টিক্যাল ন্যানো (nano) Greek শব্দ, এর অর্থ অতি ক্ষুদ্র শব্দটি একশ কোটি বা এক বিলিয়ন (1 billion) ভাগের এক ভাগ প্রকাশ করার জন্য প্রয়োজনীয় উপসর্গ (prefix)। অর্থাৎ, ন্যানো হলো 10 ”^-9 এর গুণিতক। ন্যানোকে 'n' অক্ষর দ্বারা প্রকাশ করা হয়। সুতরাং, এক ন্যানোমিটার (1nm) হলো এক মিটারের 100 কোটি বা 1 বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ।
ন্যানো কণা কাকে বলে?
যেসব বস্তুর দৈর্ঘ্য বা আকার ন্যানো স্কেলে পরিমাপ করা হয় তাদেরকে সাধারণত ন্যানো পার্টিক্যাল বা ন্যানো কণা বলে।
ন্যানো কণার আকার সাধারণত 1-100 nm। ন্যানো কণার ধর্মাবলী তার আকার ও আকৃতির উপর নির্ভর করে। যেমন- অ্যালুমিনিয়াম অদাহ্য হলেও ন্যানো অ্যালুমিনিয়াম দাহ্য পদার্থ, কপার অস্বচ্ছ হলেও ন্যানো কপার স্বচ্ছ, স্বর্ণ অদ্রবণীয় হলেও ন্যানো স্বর্ণ দ্রবণীয়।
এছাড়া স্বর্ণ রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয় এবং হলুদ বর্ণের হলেও ন্যানো স্বর্ণ অনুঘটক হিসেবে কাজ করে এবং লাল বর্ণের হয়। স্বর্ণ চুম্বক ধর্ম প্রদর্শন না করলেও ন্যানো স্বর্ণ চুম্বক ধর্ম প্রদর্শন করে, গ্রাফাইট নরম ও পিচ্ছিল হলেও কার্বন ন্যানো টিউব ইস্পাত অপেক্ষা শক্ত প্রকৃতির। আকারের উপর ভিত্তি করে আমরা বস্তুকণাকে তিন ভাগে ভাগ করতে পারি। যথা—
১. সাধারণ বস্তুকণা (2,500-10,000nm)
২. মিহি ও সূক্ষ্মণা (100-2,500nm)
৩. অতি সূক্ষ্মণা (1-100am) ন্যানো কণার আকার (nm)
২. মিহি ও সূক্ষ্মণা (100-2,500nm)
৩. অতি সূক্ষ্মণা (1-100am) ন্যানো কণার আকার (nm)
১৯৯০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের National Institute of Technology Ultrafine Particle এর নাম দেয় ন্যানো পার্টিক্যাল। ন্যানো শব্দের অর্থ খুবই ক্ষুদ্র। ন্যানো স্কেলে বস্তু পরিমাপের একক ন্যানো মিটার। অর্থনৈতিক রসায়ন দেখা দেখানো হলো মানুষের চুলের ব্যাস বাসায় সাধারণত pm এককে পরিমাপ করা হয়। ন্যানোমিটার বোঝার জন্য কয়েকটি ক্ষুদ্র বস্তুর আকার > 5000 10,000 pm দৃশ্যমান আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য = 380 -780nm ও 50,000-100000 nm; সাধারণ কোল্ড ভাইরাসের দৈর্ঘ্য = 30-50 am
ন্যানোকণার প্রকারভেদ
শূন্য মাত্রিক ন্যানোকণা: যে সকল ন্যানোকণার কোনো মাত্রা থাকে না তাদেরকে শুন্যমাত্রিক ন্যানোকনা বলে।
একমাত্রিক ন্যানোকণা: যে সকল ন্যানোকণার যেকোনো একটি মাত্রা (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা) 1-100 nm মধ্যে থাকে তারা একমাত্রিক ন্যানোকণা নামে পরিচিত। পৃষ্ঠতলের প্রলেশন বা মসৃণ ফিল্ম হিসেবে এরা ব্যবহৃত হয়। এরা ন্যানো লেয়ার নামে পরিচিত।
দ্বিমাত্রিক ন্যানোকণা: ন্যানোকণার যেকোনো দুটি মাত্রা 1-100 nm এর মধ্যে থাকলে তা দ্বিমাত্রিক ন্যানোকনা।
ত্রিমাত্রিক ন্যানো কণা: ত্রিমাত্রিক ন্যানোকণার তিনটি মাত্রাই 1-100 nm এর মধ্যে থাকবে। উদাহরণ; কলয়েড ও মসৃণ ফিল্মি
ত্রিমাত্রিক ন্যানো কণার বৈশিষ্ট্য
১. 1-100 nm হবে কণার আকূতি।
২. অদৃশ্যমান পদার্থ।
৩. ন্যানোকণা ধাতু, অধাতু, জৈব বা অজৈব উপাদান থেকে তৈরি হতে পারে।
৪. অতি ক্ষুদ্রাকৃতির জন্য একই পদার্থের সাধারণ পরমাণু ও ন্যানো কণার মধ্যে ধর্মের ভিন্নতা দেখা যায়
৫. ন্যানোরণার ধর্ম আকার ও আকৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়।
৬. ন্যানোকণার উন্মুক্ত পৃষ্ঠতল বেশি। ফলে এর অনুঘটকীয় সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।
৭. এর অদানাদার বা আংশিক দানাদার। নানোকণা নির্দিষ্ট আকৃতি সম্পন্ন হয়ে থাকে, যেমন: গোলাকার, বর্তুলাকার, নলের মতো ইত্যাদি।
৮. পদার্থ এবং পারমাণবিক বা আপৰিক গঠনের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করে।
৯. কোয়ান্টাম রসায়ন এবং পদার্থবিদ্যার প্রচলিত নীতি মেনে চলে না
১০. স্বাভাবিক অবস্থায় বস্তুকণাসমূহ সাসপেনশন গঠন না করলেও ন্যানো কথা সাসপেনশন গঠন করে।
১১. দিক উল্লেখ করা হলো। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তথ্য শিল্পে ন্যানো প্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য সাফল্য থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে এর ক্ষতিকর দিকও রয়েছে।
ন্যানো প্রযুক্তির ক্ষতিকর দিক
১. নামো কণিকা এত ক্ষুদ্র যে, অজান্তেই এগুলো শ্বাস - প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করে মারাত্মক স্বাস্থ্য বড়বে যা আমাদের সোসাইটির উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
২. ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে অনেক শিল্পে শ্রমিকের চাহিদা অনেকাংশেই কমে যাবে ফলে বেকারত্বের সংখ্যাও বাড়বে।
৩. ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে আলাদা শক্তির উৎসের উন্নতি তরান্বিত হলে মূল্যবান পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থের দাম দিনে দিনে কমে যাবে বা যাচ্ছে; যা তেল সমৃদ্ধ দেশগুলোতে প্রভাব ফেলবে।
৪. নেনো প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে পারমাণবিক অস্ত্রগুলো এখন আগের থেকে উন্নত ও শক্তিশালী হয়েছে যা মানব সভ্যতার জন্য হুমকিস্বরূপ।
৫. ন্যানো প্রযুক্তি একটি ব্যয়বহুল প্রযুক্তি। এটির জন্য অনেক খরচ করতে হয়। তাছাড়া বৃহৎ পরিসরে এর উৎপাদন কষ্টসাধ্য বিষয়।
মোটকথা ন্যানো প্রযুক্তির সুবিধা ও অসুবিধা উভয়ই বিদ্যমান। তবুও বিজ্ঞানীরা এর অসুবিধাসমূহ দূরীভূত করে সফলতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।