বাবল প্রকোষ্ঠ কী?

বুদবুদ বা বাবল প্রকোষ্ঠের মৌলিক গঠনপ্রণালী

১। বুদবুদ বা বাবল প্রকোষ্ঠ হল একটি পাত্র বা কন্টেইনার যাতে অতিমাত্রায় তপ্ত স্বচ্ছ তরল দ্বারা পূর্ণ অবস্থায় থাকে।
২। স্বচ্ছ তরল হিসাবে সাধারণত ডাইইথাইল ইথার ব্যবহার করা হয়। তবে গবেষণাগারে প্রকৃতির উপর নির্ভর করে তরল হাইড্রোজেন বা তরল হিলিয়াম বা তরল ভারী হাইড্রোজেনও ব্যবহার করা যেতে পারে। বুদ বুদ প্রকোষ্ঠের পাত্র বা কন্টেইনারে একটি পিষ্টন থাকে।

বুদবুদ বা বাবল প্রকোষ্ঠের গঠনের মূলভিত্তি


উইলসন-মেঘ প্রকোষ্ঠ উচ্চ শক্তি সম্পন্ন কণার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় না। কারণ উইলসন - মেঘ প্রকোষ্ঠে অভ্যন্তরভাগের গ্যাসের ঘনত্ব কম থাকে বলে উচ্চ শক্তিসম্পন্ন কণাসমূহ গ্যাসের মধ্য দিয়ে সমগ্র প্রকোষ্ঠে অতিক্রম করে যায়। এটিই উইলসন - মেঘ প্রকোষ্ঠ এর প্রধান ত্রুটি। এ সমস্যা সমাধানকল্পে অনেক ক্ষেত্রে উচ্চচাপবিশিষ্ট গ্যাস ব্যবহার করা হয় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে কণার গতিবেগ হ্রাস করার জন্য মাঝখানে ধাতব প্লেট ব্যবহার করা হয়। আবার ধাতব প্লেট ব্যবহার করা সত্ত্বেও সন্তোষজনক ফল পাওয়া যায় না বলে অতিতাপিত তরল পদার্থ ব্যবহার করা হয়। ফলে এটি কণার যাত্রাপথে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বুদবুদের সৃষ্টি করে তার গতিপথ দৃশ্যমান করে। এভাবে বুদবুদ সৃষ্টি করে বলে একে বুদবুদ বা বাবল প্রকোষ্ঠ বলে।

বুদবুদ বা বাবল প্রকোষ্ঠের সাধারণ কার্যপ্রণালী


বুদবুদ বা বাবল প্রকোষ্ঠের কার্যনীতি উইলসন - মেঘ প্রকোষ্ঠের ন্যায়। বুদবুদ বা বাবল প্রকোষ্ঠের ক্ষেত্রে যে তরলটি ব্যবহার করা হয় তা অবশ্যই অতিতাপিত হতে হয়। তরল পদার্থকে তার স্ফুটনাংকে উত্তপ্ত করলে তরল পদার্থের বাষ্পের বুদবুদ উৎপন্ন হয় এবং তরল পদার্থটি ফুটতে থাকে এবং অতিতাপিত হয়। সফলভাবে তরলকে অভিতাপিত করতে গেলে নিম্নরূপ দুটি শর্ত মানতে হয়।

১। পাত্রে কোন ধরনের কঠিন পদার্থের টুকরা থাকতে পারবে না।

২। পাত্রের সকল গাত্রই মসৃণ থাকতে হবে। ফলে সহজ ও সুন্দররূপে বুদবুদ সৃষ্টি হয়। বুদবুদ বা বাবল প্রকোষ্ঠের ক্ষেত্রে আধানযুক্ত কণার যাত্রাপথে আয়নযুগল বুদ্বুদ তৈরির কেন্দ্র হিসাবে ভূমিকা পালন করে। তরল পদার্থের উপর চাপ প্রয়োগ করলে তাকে তার স্বাভাবিক স্ফুটনাংকের চেয়ে বেশ কিছু উচ্চ তাপমাত্রায় গরম করা হয় এবং অতিরিক্ত চাপের ফলে তরল পদার্থ ফুটে না। কিন্তু হঠাৎ করে চাপ কমালে তরল পদার্থটি অতিতাপিত হয়।

বুদবুদ বা বাবল প্রকোষ্ঠের সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ


বুদবুদ বা বাবল প্রকোষ্ঠের সুবিধাসমূহ—

১। বুদবুদ বা বাবল প্রকোষ্ঠের মধ্যে চলমান তড়িৎ আধানবিশিষ্ট কণাসমূহকে সনাক্ত করে।

২। বুদবুদ বা বাবল প্রকোষ্ঠে বিভিন্ন দিকে ৩/৪ টি ক্যামেরা সংযুক্ত থাকে বলে প্রতিটি ঘটনার ত্রিমাত্রিক ছবি তোলা যায়।

৩। উইলসন-মেঘ প্রকোষ্ঠের ন্যায় এ প্রকোষ্ঠের ক্ষেত্রেও ক্যামেরা সংযুক্ত থাকে বলে কণাসমূহের যাত্রাপথের ছবি নেয়া যায়। বুদবুদ বা বাবল প্রকোষ্ঠের অসুবিধাসমূহ যদিও অনেক আগে বুদবুদ প্রকোষ্ঠের অনেক সফলভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে উচ্চশক্তির গবেষণার ক্ষেত্রে এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এগুলো হল:

১। ত্রিমাত্রিক ইলেকট্রনিক ডাটার পরিবর্তে একটি photographic readout দরকার যার ফলে একটি experiment বার বার সেট করা, পুনরাবৃত্তি করা, বার বার analyze করা অসুবিধার কারণ হয়ে পড়ে।

২। সংঘর্ষের যথা সময়ে অতিতাপিত দশায় উপনীত হওয়ার দরকার হয়। যার ফলে স্বল্পায়ুবিশিষ্ট সনাক্তকরণ কঠিন হয়ে পড়ে।
৩। বুদ্বুদ্ প্রকোষ্ঠগুলো (তেমন বড় নয়) উচ্চশক্তির সংঘর্ষ বিশ্লেষণের জন্য যেখানে সকল উৎপাদনে সনাক্তকারীর মধ্যে থাকতে হয়।

৪। উচ্চ শক্তির কণাসমূহের পথের ব্যাসার্ধ অনেক বড় হবার ফলে আপেক্ষিক ছোট প্রকোষ্ঠে ভ্রামকের হিসাব যথাযথ হয়। 

৫। এক্ষেত্রে তরলের বুদবুদ সৃষ্টি করতে হয়।

৬। বুদবুদ প্রকোষ্ঠে ব্যবহৃত তরল গবেষণাগার প্রকৃতির উপর নির্ভর করে বলে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। এই সকল অসুবিধার কারণে বুদবুদ প্রকোষ্ঠের পরিবর্তে স্ফুলিঙ্গ প্রকোষ্ঠ বা স্পার্ক প্রকোষ্ঠ (Spark ant ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। স্ফলিঙ্গ প্রকোষ্ঠ বা স্পার্ক প্রকোষ্ঠ (Spark counter)
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url