গবেষণা চুল্লি কী?

গবেষণা চুল্লি কী?

যে সকল পারমাণবিক চুল্লি নিউট্রন ও গামা রশ্মির উৎস হিসাবে কার্যকর ভূমিকা পালন করে এবং গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হয় তাকে গবেষণা (Research reactor) বলে।যেমনঃ বাংলাদেশের সাভারে অবস্থিত।
 
গবেষণা চুল্লির প্রকারভেদ

১। সরোবর বা সুইমিং পুল চুল্লি, পারমাণবিক চুল্লিটি একটি গবেষণা চুল্লি নিয়ে আরো কতিপয় গবেষণা চুল্লির একটি তালিকা প্রদান করা হল:
২। গ্রাফাইট চুল্লি (Graphite reactor)
৩। পানি বয়লার চুল্লি (Water boiler reactor)
৪। ভারী পানি চুল্লি (Heavy water reactor 
৫। চৌবাচ্চা চুল্লি (Tank reactor)
গবেষণা চুল্লি কী?

নিচে একটি গবেষণা চুল্লি বর্ণনা করা হলো:

সরোবর বা সুইমিং পুল চুল্লি( Swimming pool reactor) - গবেষণার উদ্দেশ্যে নিউট্রন এবং গামারশ্মির উৎস হিসাবে কম বা মাঝারী ক্ষমতার চুক্মিকে গবেষণা চুল্লি বলা হয়। গবেষণা চুল্লির ক্ষমতা দশ কিলোওয়াট থেকে পঞ্চাশ মেগাওয়াট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এক থেকে পাঁচ মেগাওয়াট ক্ষমতার চুল্লিকে মাঝারী চুল্লি বলে গবেষণা চুক্মির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর নিউট্রন ফ্লাক্সঃ

নিউট্রন ফ্লাক্স = প্রতি সেকেন্ডে এক বর্গ সেমি ক্ষেত্রে লম্বভাবে আপতিত নিউট্রন সংখ্যা = প্রতি ঘন সেমি - এ ফিশনজাত নিউট্রন ×নিউট্রনের গড়গতি = 1x10^12 - 1x10^14

1x10^14 নিউট্রন ফ্লাক্সের বেশী ফ্লাক্স বিশিষ্ট চুল্লি কে উচ্চ ফ্লাক্স চুল্লি বলা হয়। এ ধরনের গবেষণা চুল্লি সরোবর চুল্লি বা সুইমিং পুল চুল্লি (Swimming pool reactor) নামে খ্যাত। সরোবর চুল্লি বা সুইমিং পুল চুল্লিতে নিম্নরূপ দুই ধরনের জ্বালানী ব্যবহৃত হয়।

১। উচ্চমানের উন্নীত জ্বালানী (20 -90 % উন্নীত 235U) অ্যালুমিনিয়ামের সাথে মিশিয়ে পাতলা পাত তৈরি করা হয়। এ পাতগুলি খাঁটি অ্যালুমিনিয়ামের সাহায্যে জোড়া লাগিয়ে জ্বালানী উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

2. TRIGA (Training Reasearch And Isotope Production Reactor of General Atomics) জাতীয় সরোবর চুল্লিতে ইউরেনিয়াম - জিরকনিয়াম - হাইড্রাইডের (U - Zr - H) দন্ডাকৃতি উপাদান পানি শীতলক, প্রতিফলক ও আবরক হিসাবে কাজ করে। জ্বালানীরূপে ব্যবহৃত হয়। জ্বালানীর হাইড্রোজেনও আংশিকভাবে মন্থরকের দায়িত্ব পালন করে। সরোবরের একটি কংক্রিটের খাড়া দেওয়াল ঘেরা সরোবর চুল্লি একটি সেতু থেকে পানিতে ঝুলানো থাকে। যান্ত্রিক উপায়ে সমগ্র সেতুটি সরোবরের তীর বরাবর ঠেলে নেওয়া যায় আবার চুল্লিকে সেতু বরাবরও সরানো যায়। এভাবে চুল্লিকে সরোবরের যে কোন স্থানে স্থাপন করা যায়।

নিয়ন্ত্রক যন্ত্রাদি উপর থেকে ঢুকানো যায়। চুল্লির অভ্যন্তর থেকে নিউট্রন বের করে আনার জন্য ফাঁকা নল ব্যবহার করা হয়। এ সব নল দিয়ে নিউট্রনকে ইচ্ছামত বের করে এনে বিভিন্ন পরীক্ষণের কাজে লাগানো হয়। অন্য সময় নলের মুখ পুরু ঢাকনীর সাহায্যে বন্ধ রাখা হয়।

আবরকের মধ্যদিয়ে প্রতিফলকের প্রান্তে অবস্থিত ফাঁককে তাপজ স্তম্ভ বলে। এখানে মন্থরকের সাহায্যে নিউট্রনের বেগ কমানো ও তাপজ (তাপীয়) নিউট্রনে পরিণত করা হয়। যে পদার্থের উপর নিউট্রন অপবর্তন ঘটানো হয় তার ধারককে র‍্যাবিট প্রক্রিয়ায় বাষ্প বা গ্যাসের জন্য ঐ একই প্রক্রিয়ায় দ্রুত গবেষণা এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। উচ্চচাপে চুল্লির অভ্যন্তরে উচ্চ নিউট্রন ফ্লাক্স এলাকায় পাঠানো হয়। বিকিরিত হবার পর নমুনাকে পরীক্ষণের জন্য ঐ একই প্রক্রিয়ায় দ্রুত গবেষণা এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।

গবেষণা চুল্লী অনেক সময় পাল্‌সিতকরণ করে তৈরী করা হয়। এসব চুল্লিতে ক্ষমতা দ্রুত সর্বোচ্চ মানে পৌছে আবার তেমনি দ্রুত একটি নিম্নমানে নেমে আসে। পাল্‌সিত চুল্লীর সুবিধা এই যে, সময় বেছে নিয়ে ইচ্ছামত মাত্রার নিউট্রন ফ্লাক্স ব্যবহার করা যায় । তাছাড়া এক পালস মুহূর্তের মধ্যে ক্ষণজীবি তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের উৎপাদনও এখানে অপেক্ষাকৃত অনেক বেশী হয়ে থাকে। TRIGA জাতীয় চুন্নীর মন্থরক ও জ্বালানীর ঘনিষ্ঠ সন্নিবেশ জ্বালানীতে উৎপন্ন তাপ মন্থরককেও দ্রুত উত্তপ্ত করে তোলে। এ ধরনের চুল্লীর পরিকল্পনা এমনভাবে করা হয় যাতে উত্তপ্ত হবার সাথে সাথে পুনঃপ্রজনন গুণকের মান দ্রুত কমে যায় এবং তার ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পালস থেমে যায়। বাংলাদেশের ঢাকার অদূরে সাভারে স্থাপিত চুল্লিটি এই TRIGA জাতীয়। এর সাহায্যে নানা ধরনের নিউক্লিয় গবেষণা পরিচালনা করা হয়। 

গবেষণা চুল্লির বৈশিষ্ট্য


নিয়ে গবেষণা চুল্লির কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ও প্রয়োগ উল্লেখ করা হলো
১। গবেষণা চুল্লিতে নিয়ন্ত্রিত শিকল বিক্রিয়া ব্যবহার করা হয়।
২। গবেষণা চুরি স্থাপনের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কম খরচ হয়।
3 গবেষণা চুল্লি তে সাধারণ উন্নীত ইউরেনিয়াম জ্বালানী হিসেবে ভূমিকা পালন করে।
৪। গবেষণা চুক্মিতে প্রায় ক্ষেত্রেই চুক্মির কেন্দ্রের পাশে 4-5 ফুট পুরু গ্রাফাইটের স্তর রাখা হয়।
৫। গবেষণা চুন্নিকে খুব সহজেই শীতল রাখা যায়।
৬। গবেষণা চুরিতে নিউক্লিয় বিক্রিয়াস্থলে গবেষণার জন্য তার কেন্দ্রে বিভিন্ন বস্তুতে নিউট্রন বা গামা রশ্মির সাহায্যে আঘাত করার ব্যবস্থা থাকে।
৭। গবেষণা চুরি তুলনামূলকভাবে কম শক্তিসম্পন্ন। যেমনঃ একটি গবেষণা চুক্মি সাধারণত 3-4MW শক্তিসম্পন্ন হয়ে থাকে।
৮। গবেষণা চুল্লি বিস্ফোরণের তেমন কোন সম্ভাবনা থাকে না।
৯। গবেষণা চুল্লি পরিচালনা বেশ সহজ।
১০। গবেষণা চুল্লিতে প্রয়োজনমত তাপীয় স্তম্ভ ব্যবহার করা হয়।
১১। এ চুল্লির কেন্দ্র হতে নিউট্রন বের করে আনার জন্য একটি ফাঁকা টিউব ব্যবহার করা হয় যা বীম টিউব নামে পরিচিত। এভাবে অপসারিত নিউট্রনবে- সংগ্রহ করে বিভিন্ন কাজে লাগানো যায়।
১২। এমন অনেক গবেষণা চুরি রয়েছে যেগুলোতে এমন ব্যবস্থা রাখা হয় যেন চুল্লির বিশেষ বিশেষ অংশ অন্য অংশের চেয়ে বেশি পরিমাণে নিউট্রন ফ্লাক্স পাওয়া যায়। এ ব্যবস্থাকে ফ্লাক্স ফাঁদ বা ফ্লাক্স ট্রিপ (Flux trip) বলে।

গবেষণা চুল্লির প্রয়োগ 


 ১। গবেষণা চুল্লি প্রধানত গবেষণা কাজে ব্যবহৃত হয়।
২। গবেষণা চুল্লি নিউট্রনের উৎস হিসেবে ভূমিকা পালন করে। 
৩। গবেষণা চুল্লি হতে সৃষ্ট নিউট্রনের সাথে সাথে বিক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন আইসোটোপ তৈরি করা হয়।
৪। গবেষণা চুল্লি কেন্দ্র হতে নিউট্রন বের করে আনার জন্য একটি ফাঁকা টিউব ব্যবহার করা হয় যা বীম টিউব নামে পরিচিত । বীম টিউব হতে বের করে আনা নিউট্রনসমূহকে বিভিন্ন কাজে লাগানো যায়।
৫। গবেষণা চুল্লি গামা রশ্মি উৎস হিসেবেও ভূমিকা পালন কর। গবেষণা চুল্লিতে নির্গত গামা রশ্মি বিভিন্ন কাজে প্রয়োগ করা যায়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url