ন্যানো টেকনোলজি

১৮৫৭ সালে বিজ্ঞানী ফ্যারাডে সর্বপ্রথম ন্যানো ম্যাটাল এর Optical Properties এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রদান করেন। বৈশিষ্ট্যকরণ ও প্রয়োগের প্রযুক্তি বিজ্ঞানকে বোঝায়। ন্যানো কণার প্রস্তুতি, ধর্ম ও ব্যবহার সাধারণ বন্ধুকণা অপেক্ষা ভিন্ন।

ন্যানো প্রযুক্তি বলতে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ন্যানো কণার ধমাবলি, তাদের প্রস্তুতি কোম্প, ন্যানো কণা সাধারণত মৌল, জৈব অণু, অজৈব অণু, মেসোফোরাস কণা, ধাতব পদার্থ প্রভৃতি হতে বিশেষ প্রক্রিয়া ও কার্বনের সিলিন্ডার আকৃতির রূপভেদ। কার্বনের পলিমারীয় আকৃতির মাধ্যমে উৎপাদন ও ডিজাইন করা হয়।

ন্যানো প্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হলো কার্বন ন্যানো টিউব, যা রূপভেদ ফুলারিন একটি কার্বন ন্যানো টিউব। এটি সাধারণত ফাঁপা সিলিন্ডার বিশিষ্ট কাঠামো যার মুখ খোলা বা আবদ্ধ এবং এক দেয়াল বা বহু দেয়াল বিশিষ্ট পরমাণুর শীট দ্বারা গঠিত। কার্বন ন্যানো টিউব সেমিকন্ডাক্টর, কন্ডাকটর এবং সুপার কন্ডাক্টর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর বিদ্যুৎ পরিবহনের ক্ষমতা কপার ধাতুর তুলনায় প্রায় সহস্রগুণ বেশি। এর দৃঢ়তা ও শক্তি ইস্পাতের চেয়েও অনেকগুণ বেশি। যেমন, গ্রাফিন হলো কার্বন ন্যানো টিউব যা ইস্পাত অপেক্ষা প্রায় ১০০ গুণ শক্ত।

ন্যানো প্রযুক্তির ধারণা


আলোক ধর্ম ব্যবহার: কোনো বস্তুতে প্রতিফলন রোধ আবরণ তৈরিতে ন্যানো কণা ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ক্যান্সার নির্ণয়ের আলোক ভিত্তিক সেন্সর তৈরিতে ন্যানো কণা ব্যবহার করা হয়।

চুম্বুক ধর্ম ব্যবহার: ন্যানো ম্যাগনেটিক কণা চিকিৎসা বিজ্ঞানকে উন্নত থেকে উন্নততর পর্যায়ে নিয়ে গেছে। যেমন --- ন্যানো ম্যাগনেটিক কণা MRI ছবি উন্নত করেছে, যার ফলে MRI নির্ভর রোগ নির্ণয় আরও সহজ ও নির্ভুল করা সম্ভব হয়েছে।

তাপীয়: ন্যানো কণায় নির্মিত সোলার প্যানেলের সেলে radiation ধারণ ও শক্তির রূপান্তর কার্যকরভাবে বৃদ্ধি পায়।

ইলেকট্রনিক্স: উচ্চ পরিবাহী পদার্থ এবং উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন ক্যাপাসিটর উৎপাদনে ন্যানো কণা ব্যবহারে মোবাইল ফোন, কম্পিউটারে প্রযুক্তিগত বিপ্লব সাধিত হচ্ছে। কারণ, এতে যন্ত্রপাতি ছোট হচ্ছে।‌ যন্ত্রের দক্ষতা ও বহুমাত্রিকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ন্যানো কণায় নির্মিত পরিবাহী তারের রোধ উন্নত হয়।

শক্তি: উচ্চ শক্তির ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যাটারি উৎপাদন ও ফুয়েল সেলের দক্ষতা উন্নয়নে ন্যানো প্রযুক্তি যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।

বায়োমেডিকেল: রোগ নির্ণয়ে কোয়ান্টাম ডটস এর মাধ্যমে সেন্সর নির্মাণ ও শরীরে কোষের নির্ধারিত জায়গায়। নির্দিষ্ট পরিমাণ ঔষধ নিখুঁতভাবে পৌঁছানোর প্রোগ্রাম নির্মাণে ন্যানো কণার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

পরিবেশ: শিল্প দূষণরোধে এবং পানি পরিশোধন প্রযুক্তির উন্নয়নে ন্যানো প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ। ন্যানো স্কেল পদার্থের ধর্মাবলী ম্যাক্রোস্কেল বা বৃহদাকার পদার্থ অপেক্ষা ভিন্ন হওয়ার কারণ নানো স্কেলে পদার্থের পৃষ্ঠতল ও আয়তনের অনুপাত পদার্থের গঠনকারী পরমাণুগুলোর এক বিরাট ম্যাক্রোস্কেল পদার্থের অংশ উক্ত পদার্থের তুলনায় অনেক বেশি পৃষ্ঠতলে থাকে। ফলে ন্যানো পৃষ্ঠতলের পরমাণু অভ্যন্তরে পরমাণুর তুলনায় কম দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে, তাই ন্যানো স্কেল পদার্থ রাসায়নিকভাবে সক্রিয় হয়।

ন্যানো ম্যাক্রোস্কেল অবস্থায় থাকে তখন তাদের গঠনকারী পরমাণুর ইলেকট্রনীয় শক্তিস্তরগুলির অধিক্রমণ ঘটে ব্যান্ড বা পতি গঠিত হয়। অন্য দিকে, ন্যানো স্পেল পদার্থে পরমাণুর সংখ্যা খুবই কম হওয়ায় এধরনের পদার্থে পরমাণুগুলোর ইলেকট্রনীয় শক্তিস্তর একক পরমাণুর কোয়ান্টাইজা (quantized) ইলেকট্রনীয় শক্তিস্তরের প্রায় অনুরূপ হয়। এর ফলে ন্যানো স্কেল পদার্থের তড়িৎ ও আলোক হয় বৃহদাকার পদার্থের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়।

ন্যানো স্কেলে পদার্থের প্রকারভেদ 


কার্বন ভিত্তিক ন্যানো স্কেল পদার্থ (Carbon based nanoscale materials): এ ধরনের পদার্থগুলো কার্বন দ্বারা গঠিত। এগুলো ফাঁপা গোলাকার বা ডিম্বাকার অথবা চোঙ্গাকৃতির (Cylindrical) হয়ে থাকে। গোলাকার বা ডিম্বাকার কার্বনভিত্তিক ন্যানো স্কেল পদার্থকে বলে ফুলারিন (fullerene) এবং ফাপা চোঙাকৃতির কার্বন ভিত্তিক ন্যানো স্কেল পদার্থকে বলে ন্যানো টিউব।

ধাতু ভিত্তিক ন্যানো স্কেল পদার্থ (Metal based nanoscale materials): এ ধরনের পদার্থগুলো বিভিন্ন ধরনের ধাতু বা তাদের যৌগ থেকে উৎপন্ন করা হয়। যেমন- ন্যানো গোল্ড, ন্যানো সিলভার, কোয়ান্টাম ডট (quantum dot), টাইটেনিয়াম ডাইঅক্সাইড ইত্যাদি।

ডেনড্রেইমার (Dendrimer): এগুলো ন্যানো স্কেল পলিমার অণু। এ ধরনের পলিমার অণুতে কোনো মুখ্য শৃঙ্খ (backbone chain) নেই এবং সমগ্র অণুটি অসংখ্য শাখা প্রশাখায় বিভক্ত।

বিমিশ্র ন্যানো স্কেল পদার্থ (Composite nanoscale materials): একটি ন্যানো স্কেল পদার্থকে অপর একটি ন্যানো স্কেল পদার্থের সঙ্গে মিশ্রিত করে বা একটি ন্যানো স্কেল পদার্থকে অপর একটি ম্যান্ড্রো স্কেল ব বৃহদাকার পদার্থের সঙ্গে মিশ্রিত করে এরূপ পদার্থ তৈরি করা হয়।

ফুলারিন: ফুলারিন হচ্ছে কার্বনের এক প্রকার রূপভেদ যার সংকেত Cn, যেখানে n এর মান কেবল জোড় সংখ্যায় 30-600 এর মধ্যবর্তী হয়। ফুলারিন কার্বন পরমাণু দ্বারা গঠিত ফাঁপা গোলক, অধিবৃত্তীয় ও টিউব আকৃতির কণা বিশেষ। ফুলারিনের নির্মিত কার্বন ন্যানোটিউব বেশ দৃঢ় ও শক্ত যা শিল্পক্ষেত্রে ব্যাপক প্রয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।

২. ন্যানো টিউব (Nanotubes): কাৰ্বনভিত্তিক ন্যানো স্কেল পদার্থ, এগুলো চোঙাকৃতির এবং গ্রাফাইট স্তর দ্বারা গঠিত। এগুলো একক বা বহুস্তরবিশিষ্ট হয়ে থাকে। এ ধরনের ন্যানো স্কেল পদার্থের টান শক্তি অতি উচ্চমানের হয়। বিশ্বের সবচেয়ে ছোট টেস্টটিউব হচ্ছে কার্বন ন্যানো টিউব। এর ব্যাস 2nm - 30nm এবং দৈর্ঘ্য কয়েক nm হয় ।ন্যানো কথা নির্মিত বস্তুর বর্গ লাল হয়।

স্বর্ণের ন্যানো পার্টিকেল

ন্যানো স্বর্ণ কণা পানিতে কালো বর্ণ ধারণ স্বর্ণের (Au) ন্যানো পার্টিক্যাল এর বর্ণ কি সোনালী রঙের?

যে কোন পদার্থের স্বাভাবিক অবস্থা ও তার ন্যানো পার্টিক্যাল এর ভৌত অবস্থা মূলত এক নয়। (1-100 am) বা ন্যানো পার্টিক্যাল এর এই ব্যাসের পরিধিতেই মূলত পদার্থের ভৌত অবস্থার (যেমন - গলনাঙ্ক, রঙ, তলদেশের ক্ষেত্রফল ইত্যাদি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

কারণ, এক্ষেত্রে পার্টিক্যাল এর বাল্ক বা কেন্দ্রের অংশ হতে পৃষ্ঠতলে এ ইলেকট্রন সংখ্যা বেড়ে যায়। ঠিক একই কারণে স্বর্ণের স্বাভাবিক রঙ সোনালী হলেও 1-100mm ব্যাসের স্বর্ণের ন্যানো কণার রঙ মূলত লাল। স্বর্ণের ন্যানো পার্টিক্যাল এর ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা অস্বাভাবিক বলে তারা কোয়ান্টাম ইফেক্ট এ অংশ নেয় এবং তখন তাদের সোনালী নয় বরং গাঢ় লাল দেখায়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url