পাল বংশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে


বাংলার দীর্ঘস্থায়ী শাসন করেছে পাল বংশের রাজার। পাল বংশের লোকজনের বসবাস বাংলাদেশের কোথাও না কোথাও দেখা যায় এখনও। পাল কোন বংশের ধারাবাহিক উপাধির নাম নয়। মূলত রাজা শশাঙ্কের মৃত্যুর পর দীর্ঘ দিন বাংলায় শাসন শৃঙ্খলা অরাজকতা দেখা যায়, এই সময় বিভিন্ন ব্যাংক খোলা চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

অষ্টম শতকের প্রায় মাঝ পথে পাল রাজত্বের আবির্ভাব ঘটে। পাল শব্দের অর্থ মূলত শাসক। পাল বংশের প্রথম শাসক হিসেবে গোপালকে ধরা হয়। গোপাল পাল বংশের প্রথম শাসক হলেও তার আদি পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে সম্যক ধারণা এখনো পাওয়া যায়নি।

পাল বংশের শ্রেষ্ঠ সম্রাট কে


তবে গোপালের পুত্র হিসেবে ধর্মপাল কে পাল বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ধর্মপাল বাংলার বিভিন্ন স্থানে তার বিভিন্ন প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে স্মরণীয় হয়ে আছে । যেমন পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার নওগাঁ জেলায় অবস্থিত যে বৌদ্ধ বিহারটি সোমপুর বিহার নামেও অনেকের কাছেই পরিচিত।

ধর্মপালের পিতা গোপাল প্রায় ২৭ বছর শাসন করেছে অর্থাৎ ৭৫০ থেকে খ্রিস্টাব্দ ৭৮২ পর্যন্ত শাসন করেছে। ধর্মপাল বাংলা এবং বিহার শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল এ সময় তিনটি রাজবংশের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার লড়াই চলছিল। ধর্মপালের আরো কিছু স্থাপনা মধ্যে রয়েছে মগদের বিক্রমশিলা। ধর্মপাল দ্বিতীয় নাগভট্ট সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিল। ধর্মপালের এই পরাজয় সামরিক পরাজয় ছিল। ধর্মপাল নেপালের কিছু অংশ জয় করেছিল।

ধর্মপাল ভারত মহাদেশ প্রায় ৪০ বছরের মতো রাজত্ব করেছেন। ধর্মগড় বিদ্যাবুদ্ধির অধিকারী ছিল এবং তার সুদক্ষ পরিচালনার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জন নানা ধরনের উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। তার বিভিন্ন উপাধির মধ্যে রয়েছে পরমেশ্বর, পরম ভট্টারক, মহারাজাধিরাজ, বিক্রম শীল। ধর্মপাল যে পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার নির্মাণ করেছিল তা এখন ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ধর্মপাল শিক্ষার অগ্রগতির জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল সে পঞ্চাশটির মতো শিক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিল।

ধর্মপাল বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি আনুগত্য থাকলে অন্য ধর্মকে শ্রদ্ধার সাথে মানতেন এজন্যই ধর্মপালের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন গগ ছিলেন একজন ব্রহ্মচারী। ধর্মপাল ৭৮১ থেকে ৮২১ পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা সুনামের সাথে শাসন করেছেন। পাল বংশের দ্বিতীয় শাসক দেবপাল ধর্মপালের পুত্র এবং দেবপালের পিতামহ গোপাল।

পাল আমলের সামাজিক অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবন


দেবপাল পিতার মতো বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিল এবং ধর্মের প্রতি তার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন অপরিসীম, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কিছু সংস্কার করেছেন বিশেষ করে বৌদ্ধমঠ গুলো সংস্কারের তারও গ্রনি ভূমিকা রয়েছে।

তিনি প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় নালন্দা সেখানে তার বৈদ্য বিহার এর কাজ শুরু করেন বৌদ্ধ ধর্ম চর্চার জন্য, তার রাজদরবারে কবি-সাহিত্যিকদের বেশ কদর ছিল তিনি মোটামুটি ৮৮১ থেকে ৯৮৯ পর্যন্ত উদ্যমের সাথে শাসনকার্য চালিয়ে গেছেন। পাল বংশের গোপাল ধর্মপাল দেবপাল তিনজনই সুন্দরভাবে এর রাজত্ব পরিচালনা করে গেছেন, দেব পালের মৃত্যুর কিছুদিন পর থেকেই রাজ্যে পিছন খোলা শুরু হয় এবং পাল বংশের সুনাম ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে।

দেবপালের পর মহিফাল পাল বংশের ধারা রক্ষা করার কাজে এগিয়ে আসে। মহিফাল সময় দিনাজপুরের মহিপাল দিগি ফেনীতে মহিপাল দিঘি মহিপাল স্টেশন প্রতিষ্ঠা করেন। ভারত উপমহাদেশের মুর্শিদাবাদ জেলার মুরাদনগর স্থাপন করেন, জনকল্যাণ কাজে তার বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন হয়েছিল। মহিপাল ৫০ বছরের মতো রাজত্ব পরিচালনা করেছিল, পাল বংশের অরাজকতাকে আগের তুলনায় কিছুটা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল। মহীপালের মৃত্যুর পর রাজ্যে আবার অরাজকতা শুরু হয়। 

পাল বংশের পতনের কারণ

এই সময় দ্বিতীয় মহিপাল এর পুত্র এবং অন্যান্য পালের পুত্রদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। ইতিহাসের বিখ্যাত কৈবত বিদ্রোহ দ্বিতীয় মহিপাল এর সময় হয়েছিল। এর কয়েক বছর পর পাল বংশের সর্বশেষ শাসক রামপালের আগমন ঘটে, ইতিহাসে তাকে পাল বংশের সর্বশেষ শাসক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাকে নিয়ে বাংলার প্রাচীন কবি সান্ধ্যকর নন্দী রাম চরিত নামক বই লিখেছেন। সর্বশেষ গোবিন্দ পাল ছিলেন পাল বংশের শেষ রাজা যিনি ১১৫৫ থেকে ১১৬১ পর্যন্ত রাজত্ব করেছেন। বিজয় সেনের হাতে পাল বংশের সমাপ্তি ঘটে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url