The Comedy of Errors Bangla Anubad
নাটকের নাম: কমেডি অব এররস
কিছুদিন ধরেই সিয়াকিউজ ও এফিয়াস এই দুটি দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ক্ষুণ্ন হয়ে পারস্পরিক বিবাদ ও ঘৃণার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে যা হয়, বহু উলুখড়ের জীবন ও ভবিষ্যৎ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। নিজের দেশের সীমা লঙ্ঘন করে অন্য রাজ্যে প্রবেশ করলে রক্ষীরা তাকে গ্রেপ্তার করে লাঞ্ছিত করে। অনেককে মৃত্যুদণ্ডেও দণ্ডিত করা হয়। নিজের দেশের শাসকের কৃতকর্মের মাশুল দিতে হচ্ছে বেচারা প্রজাদের। সিরাকিউজ নিবাসী বৃদ্ধ সওদাগর ঈজিয়ানও এফিয়াস রাজ্যে প্রবেশ করার অপরাধে কারাগারে আটক আছেন। আজ ডিউক এসেছেন তাঁকে তাঁর দণ্ডাদেশ শোনাতে। হতাশ মনমরা বৃদ্ধ বণিক ডিউককে দেখেই অনুরোধ করলেন, যথাসম্ভব শীঘ্র যেন তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। বিদ্রুপের হাসি হেসে ডিউক বললেন, বিনা অপরাধে মানুষ মারার ব্যবসা তাঁর নয়। তবে সিরাকিউজের সঙ্গে আলোচনা করেই ঠিক করা হয়েছে, এক দেশের গাড়ী ঘোড়া অথবা মানুষ অন্য দেশে প্রবেশ করতে পারবে না।
কোন দেশের সওদাগর যদি তার বেসাতি নিয়ে অন্য রাজ্যে আসে, তবে তার মালপত্র আটক করে রাখা হবে। সে যদি এক হাজার মার্ক মুক্তিপণ দিতে পারে তবেই মালপত্রসমেত তাকে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এই বৃদ্ধ সওদাগরের মালপত্রের দাম তো একশো মাক হবে কিনা সন্দেহে , হাজার মার্ক মুক্তিপণ দিতে না পারলে তার মৃত্যুদণ্ড তো অনিবার্য। ডিউকের কৌতূহল হোলো, জেনে শুনে বৃদ্ধ কেন ফাসিকাঠে গলা বাড়িয়ে দিতে এসেছেন । এর উত্তরে সওদাগর ঈজিয়ান তার জীবনের মর্মান্তিক কাহিনী শোনালেন। জ্ঞানবয়স থেকেই ঈজিয়ান সওদাগরী নেশার সঙ্গে সংযুক্ত। একবার কার্যোপলক্ষে তাকে স্ত্রীসহ কিছুদিন এপিডেমনসে থাকতে হয়েছিল। সেখানে ব্যবসার পাট মিটতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছিল। এই সময় তার স্ত্রী এমিলিয়া যমজ পুত্র সন্তানের জন্ম দেন । ছেলে দুটির চেহারা ছিল একেবারেই একরকম। সেই সময়ে প্রতিবেশিনী এক মহিলাও একজোড়া পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়ে মারা যান। সে দুটি শিশুর চেহারাও ছিল হুবহু একরকম। এমিলিয়া নিজের শিশুদের সঙ্গে ঐ মাতৃহারা অনাথ ছেলে দুটিকেও বুকে টেনে নেন। প্রতিবেশীরাও এ বিষয়ে তাঁকে সমর্থন করেন।
সওদাগর ঈজিয়ান তার পুত্রদুটির নাম রাখেন বড় এণ্টিফোলাস ও ছোট এণ্টিফোলাস। আর পালিত শিশু দুটির নামকরণ করলেন বড় ড্রোমিও ও ছোট ড্রোমিও। শিশুর কলকাকলীতে মুখর তাঁদের জীবন বেশ ভালভাবেই কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু ঈজিয়ান লক্ষ্ম করলেন, এমিলিয়া আস্তে আস্তে বিষণ্ণ , মনমরা হয়ে উঠছেন। দীর্ঘপ্রবাস জীবন অসংযত হয়ে উঠেছে তার। দেশের মাটির জন্য মন কাঁদছে। তাগাদা দিয়ে স্বামীকে অস্থির করে তুলতে লাগলেন তিনি। দেশে ফিরে যেতেই হবে।
অবশেষে একদিন স্ত্রী ও চারটি শিশুসহ দেশে ফেরার জন্য জাহাজে উঠলেন ঈজিয়ান। এই বিশাল জাহাজ, অগণিত বিচিত্র পোশাক পরা মানুষজনের কর্মব্যস্ততা কৌতূহলী দৃষ্টি মেলে পরমানন্দে দেখতে লাগালো ছেলে চারটি। দুদিন দুরাত বেশ ভাল ভাবেই কাটলো। তৃতীয় দিন থেকে শুরু হল সামুদ্রিক ঝড়, ঘন মেঘে ছেয়ে গেল আকাশ। একটু একটু করে উত্তাল হয়ে উঠলো সমুদ্রের জলরাশি। জাহাজের নাবিকরা যাত্রীদের কথা না চিন্তা করে ছোট ছোট নৌকো করে নিমজ্জমান জাহাজ ছেড়ে সরে পড়লো। ঈজিয়ান একটি বিরাট মাস্তুলের একদিকে ছোট এণ্টিফেলাস , ছোট ড্রোমিওকে ও স্ত্রীকে শক্ত করে বাঁধলেন। অন্য প্রান্তে বাকি দুটি ছেলের সঙ্গে নিজেকে বাঁধলেন শক্ত করে। জাহাজ ডুবে গেল, কিন্তু মাস্তুলের কাঠের সাহায্যে তাঁদের ভেসে থাকতে অসুবিধে হোলো না। ঝড়ের তাণ্ডব সমানেই চলতে লাগলো। উত্তার সমুদ্রের অন্ধকার জলরাশির মধ্যে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ভেসে যেতে লাগলেন তাঁরা।
কয়েকঘণ্টা পরে অন্ধকারের বুকে একটু আলোর রেখা দেখা দিল। আশায়, আনন্দে নেচে উঠলো ঈজিয়ানের বুক। একটি জাহাজ এগিয়ে আসছে এদিকে । এমন সময় ভাগ্য তার শেষ খেলাটা খেলো। সমুদ্রে নিমজ্জিত পাথরে ধাক্কা খেয়ে দুটুকরো হয়ে ভেঙে গেল তাঁদের মাস্তুলটি। স্ত্রী এমিলিয়া দুটি শিশু সমেত তার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেন। জাহাজ সত্যিই আসছিল, তবে একটি নয়, দুটি। জলের সঙ্গে লড়াই করতে করতে ঈজিয়ান যেন অস্পষ্টভাবে দেখতে পেলেন, ছোট জাহাজটি থেকে একটি দড়ির মই দিয়ে তার স্ত্রী ও শিশু দুটিকে তুলে নেওয়া হোল।একটু পরে বড় জাহাজটিও তাঁদের কাছে এসে গেল।
সে জাহাজের নাবিকদের কৃপায় সওদাগর ও শিশু দুটি প্রাণে বেঁচে গেলেন । কিছুদিন পর জাহাজটি তাদের মিরাকিউজ বন্দরে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। দেশে ফিরে দীর্ঘদিন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রমে স্ত্রী ও শিশু দুটিকে সন্ধান করে চললেন সওদাগর। কিন্তু এই বিশাল পৃথিবীর জনারণ্যে কোথায় হারিয়ে গেছে তারা, সে খোঁজ মিললো না। বড় এন্টিফেলাস ও বড় ড্রোমিও এখন তরুণ যুবা। শিক্ষা দীক্ষা, কাজে কর্মে দুজনেই বেশ নিপুণ হয়ে উঠেছে। ড্রোমিও এণ্টিফেলাস - এর সর্বক্ষণের সহচর , একাধারে সে ভৃত্য ও বন্ধু দুই - এর ভূমিকায় পালন করে। এরা দুজনে একদিন ঠিক করলো, ঈজিয়ান বৃদ্ধ হয়েছেন, এবার মা ও ভাইদের খোঁজার ভারটা তারাই নেবে।
যে কথা সেই কাজ। বাড়ী ছেড়ে বিদেশ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়লো দুজনে। তারপর বেশ কিছুদিন তাদের কোনও খবর না পেয়ে উৎকণ্ঠিত ঈজিয়ান নিজেই বেরিয়ে পড়েছেন পথে। এখানে এসে জানতে পারলেন সিরাকিউজের লোকেদের এফিয়াসে প্রবেশ নিষিদ্ধ। প্রহরীদের হাতে ধরা পড়ে গেলেন। ঈজিয়ানের গল্প শুনে দুঃখিত হলেন ডিউক। কিন্তু তার কিছু করার নেই, আইন সবার ক্ষেত্রে সমান ভাবে প্রযোজ্য। তবু তিনি কৃপাপরবস হয়ে পনেরো দিন সময় দিলেন ঈজিয়ানকে। এর মধ্যেও যদি সে মুক্তিপণের টাকাটার ব্যবস্থা করতে পারে, তাহলে ভাল, নাহলে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে তাকে। সওদাগর ঈজিয়ানের গল্পের না জানা দিকটার দিকে এবার একটু আলোকসম্পাত করা যাক। এমিলিয়া , ছোট এণ্টিফেলাস ও ছোট ড্রোমিওকে যে জাহাজটি তুলে নিয়েছিল , সেটি আসলে ছিল জলদস্যুদের জাহাজ। এফিয়াস বন্দরে জাহাজ ভিড়িয়েই জাহাজের ক্যাপ্টেন এমিলিয়াকে তাড়িয়ে দিল, আর একজন ধনী বণিকের কাছে বিক্রী করে দিল ছেলে দুটিকে।
এই ধনী ব্যক্তিটি আবার বর্তমান ডিউকের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। একদিন তার বাড়িতে ফুটফুটে শিশু দুটিকে দেখে খুব ভাল লেগে গিয়েছিল ডিউকের। আত্মীয়ের কাছ থেকে তার কেনা দামের চেয়েও অনেক বেশী দাম দিয়ে কিনে নিলেন তাদের। কয়েক বছরের মধ্যেই তারা বীতিমত জোয়ান মরদ হয়ে উঠলো। ডিউক তাদের শিক্ষা দীক্ষা ও যুদ্ধকার্যে নিপুণ করে তুললেন। এণ্টিফেলাস ডিউকের সেনাদলে উচ্চপদে আসীন হয়ে অচিরেই জনপ্রিয় হয়ে উঠলো। স'র ড্রোমিও তার পাশে রইল সেবকের রূপে, ছায়ার মতই।
এফিয়াস নগরের এক ধনীর মেয়ে এণ্টিফেলাস - এর রূপে গুণে মুগ্ধ হয়ে গেলেন। অ্যাড্রিয়ানার বাবাও খুব ধুমধাম করে বিয়ে দিয়ে দিলেন দুজনের। মেয়েজামাই - এর থাকার জন্য একটা সুন্দর বাড়ীও করে দিলেন। এত যশ, অর্থ, প্রতিপত্তি, সুন্দরী গুণবতী স্ত্রী সবকিছু পেয়েও পরিপূর্ণ সুখ উপভোগ করতে পারে না এণ্টিফেলাস। বারে বারেই নিজের মার কথা মনে পড়ে। কোথায় গেলেন তার দুঃখিনী মা! নিয়তির বিধান এমনই বিচিত্র। একই শহরে একপ্রাতে কারান্তরালে মৃত্যুর প্রতীক্ষায় ধুঁকছেন সওদাগর ঈজিয়ান, আর অন্যপ্রাস্তে তারই পুত্র বিলাস - ব্যসনে দিন কাটাচ্ছে। কেউ - ই কারো খবর জানে না। এদিকে সবার অলক্ষ্যে ভাগ্যের চাকা একটু একটু করে ঘুরে চলেছে। এফিয়াস বন্দরে একদিন এসে ভিড়লো এক বিশালাতন জাহাজ।
তা থেকে নামলেন এক বিশাল এণ্টিফেলাস ও বড় ড্রোমিও। ছোট এণ্টিফেলাস - এর সঙ্গে বড় এণ্টিফেলাসের ও ছোট ড্রোমিওর সাথে বড় ড্রোমিও চেহারায় এতটুকু অমিল নেই কোথাও। এরা এসেছে মা ও দুজনের ভাইদের খুঁজতে খুঁজতে। তাদের কপাল ভাল। জাহাজের সহৃদয় নাবিকরা তাদের আগেই জানিয়ে দিয়েছিল এফিরাস রাজ্যের নতুন নিয়মের কথা। তাই তারা নিজেদের সিরাফিউজবাসী পরিচয় গোপন করে অন্যদেশবাসী বলে জানালো। কাজেই জরিমানা বা জেলবাস কোনটাই তাদের সহ্য করতে হোল না। বড় এণ্টিফেলাস বাইরে পা দিয়েই ড্রোমিওকে টাকাকড়ি দিয়ে হোটেলে ঘর ঠিক করতে পাঠালেন। ড্রোমিও খুবই করিৎকর্মা যুবক, সে অচিরেই সব ব্যবস্থাই খুবই ভালোভাবে। Antipholus of Syracuse নগর দর্শনে বেরিয়েছিলেন এমন সময় পথে Antipholus of Ephesus সঙ্গে দেখা।
সে তো তাকে বড় ড্রোমিও মনে করে হোটেলের ঘর এবং টাকাকড়ি সম্পর্কে প্রশ্ন করতে লাগলো। ছোট ড্রোমিওর তো চক্ষু ছানাবড়া , সে ভাবছে তার মনিব ছোর্ট এণ্টিফেলাস এরকম উল্টে - পাল্ট বকছেন কেন? সে উল্টে মনিবকে জানালো, টাকাকড়ি বা হোটেল সম্বন্ধে সে কিছু জানে না , উপস্থিত গিল্পী ঠাকুরণের হুকুমে সে মনিবকে বাড়ীতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছে। —কে গিন্নী ঠাকরুন। —কেন? আপনার wife। আকাশ থেকে পড়লো Antipholus । সে তো বিয়েই করেনি। হতচ্ছাড়া Dromio এর আজ হোলো কি? মনিবের সঙ্গে এরকম বদ রসিকতা করার সাহসই বা কি করে হোল মাথার ঠিক রাখতে পারলো না বড় এণ্টিফেলাস, ড্রোমিওকে দু - চারঘা বসিয়ে দিল মনিবানির কাছে গিয়ে সবিস্তারে সব জানালো ছোট ড্রোমিও।
অ্যাড্রিয়ানা তো রেগে একাকার। নিশ্চয়ই অন্য কোন মেয়ের ফাঁদে পড়েছে তার স্বামী, নইলে বাড়ীর আহ্বান উপেক্ষা করে। রাগে গগস্ করতে করতে ভৃত্যকে নিয়ে স্বামীর সন্ধানে চললো সে! এদিকে হোটেলে ঘর ঠিক করে এসে বড় ড্রোমিও মনিবকে আবিষ্কার করলো। কিন্তু মনিবের ব্যবহার দেখে হতভম্ব হয়ে গেল সে। তার অমন বন্ধুর মত সদাশয় মনিবের সঙ্গে নাকি কি সব বদ্রসিকতা করেছে সে। হোটেল, টাকাকড়ি এসব অর্থ বুঝতেই পারিনি। এসব কথা তো তার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। জাহাজঘাটা ছাড়ার পর এই তো প্রথম তার মনিবের সঙ্গে দেখা। বিপদের ওপর বিপদ।
অতর্কিতে সেই সারাইখানায় হাজির অ্যাড্রিয়ানা, সকলের সামনে বড় এণ্টিফেলাসকে স্বামী সম্বোধন করে যাচ্ছেতাই করে বললো সে। তারপর জোর করে হিড় হিড় করে টেনে নিয়ে চললো বাড়ীর দিকে। ভৃত্য অগত্যা মনিবের পিছু নিলো। বাড়ী এসে স্বামীর মাথা ঠাণ্ডা করার জন্য প্রচুর খাদ্যপানীয়র ব্যবস্থা করলো অ্যাড্রিয়ানা। সে সব ঠিক আছে, কিন্তু তার স্বামী সম্বোধন আর তাদের সোহাগের প্রচেষ্টা বিব্রত, লজ্জিত করে তুললো বড় এণ্টিফেলাসকে। সে বেচারা জানে না যে বাড়ীতে সে এসেছে , এটা তার ছোট ভাই - এর বাড়ী। আর এই মহিলা তার ভাতৃবধূ। বড় ড্রোমিও এদিকে পড়েছে অনুরূপ সমস্যায়, এই বাড়ীর দাসীটি যেন সে ড্রোমিওর দীর্ঘদীনের প্রেমপাত্রী। এদিকে অ্যাড্রিয়ানার বোন লুসিয়ানার সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছে বড় এণ্টিফেলাস। কিন্তু সেদিকে একটু বেশীক্ষণ তাকায় সাধ্য কি? অ্যাড্রিয়ানার কড়া নজর এড়াতে পারলে তো?
অবশেষে একসময় ফাঁক বুজে ড্রোমিওকে নিয়ে সে বাড়ী থেকে চুপিসাড়ে কেটে পড়লো এণ্টিফেলাস। রাস্তায় তার সঙ্গে এক স্বর্ণকারের সঙ্গে দেখা। সে নাকি তারই অর্ডার দেওয়া একটা মণিমুক্তাখচিত নেকলেস পৌঁছে দিতে এসেছে। কার নেকলেস? কে দিয়েছে অর্ডার। এণ্টিফেলাস তো তাজ্জব। স্বর্ণকারটিও মহা ব্যস্তবাগীশ লোক, দাম পরে নেবে জানিয়ে নেকলেসটি জোর করেই গছিয়ে দিয়ে গেল তাকে, কোন কথা কানেই নিল না। গৃহকর্তা ছোট এণ্টিফেলাস এতক্ষণে কাজের চাপ মিটিয়ে বাড়ীর পথ ধরেছে। পথে তার ভৃত্যের সঙ্গে যা। কিন্তু নিজের বাড়ীতেই প্রবেশাধিকার পেলো না তারা। শুনলো গৃহিণী নাকি তখন গৃহকর্তাকে চা জলখাবারে আপ্যায়িত করছেন।
সে আবার কি কথা। গৃহকর্তা তো সে নিজেই। তাহলে গৃহিণী নিশ্চই তার অনুপস্থিতির সুযোগ অন্যপুরুষের সঙ্গে বিশ্রামালাপে ব্যস্ত। মাথায় রক্ত উঠে গেল তার, এই সময় হঠাৎ স্বর্ণকারের সঙ্গে দেখা। বাড়ী ফিরেই সে বেচারী দেখে তার এক পাওনাদার এসে বসে আছে। তার টাকাটা আজ না মেটালেই নয়। তাই সে ফিরে এসেছে নেকলেসের টাকাটা নিতে। ছোট এণ্টিফেলাস তো শুনে আকাশ থেকে পড়লো। নেকলেসের অর্ডার সে দিয়েছিল সত্যি। কিন্তু গহনা হাতে না পেয়ে টাকা দেবে কেন? সে স্বর্ণকার বলছে নাকি নেকলেসটা তার হাতেই নাকি দিয়েছে কিছুক্ষণ আগে। আচ্ছা মিথ্যেবাদী তো? কথায় কথা বাড়ে। কলহ হাতাহাতিতে পৌঁছাবার উপক্রম হতেই স্বর্ণকার চৌকিদারকে ডেকে তার নালিশ জানালে। চৌকিদার সব শুনে বললো এখনি তার সামনে টাকা মিটিয়ে দিলে সে এণ্টিফেলাসকে ছেড়ে দেবে। মানসম্মান নিয়ে টানাটানি পড়েছে দেখে ছোট এন্টিফেলাস ড্রোমিওকে বাড়ী থেকে টাকা আনতে পাঠালো। এখন বাড়ী খালি। বড় এণ্টিফেলাস তার ভৃত্যকে নিয়ে কেটে পড়েছে। ড্রোমিওর মুখে স্বামী টাকার দরকারের কথা শুনে অ্যাড্রিয়ানা সঙ্গে সঙ্গেই টাকা বার করে দিল।
কিন্তু জট একবার পাকালে কি আর সহজে খোলে। টাকা নিয়ে ড্রোমিও পড়লো বড় এণ্টিফেলাসের সামনে। তাকেই নিজের মনিব মনে করে তার কাছেই টাকাগুলো দিয়ে চলে গেল। প্রমাদ গুণলো বড় এণ্টিফেলাস। এ কেমন দেশ রে বাবা! না চাইতেই টাকা, গয়না দিয়ে দেয়। জোর করে অপরিচিত লোককে স্বামী সম্বোধন করে বাড়ী নিয়ে গিয়ে খাতির যত্ন করে সুন্দরী মহিলারা; এ কোনও মায়াবিনীর দেশ নয়তো? মানে মানে প্রাণ নিয়ে এখান থেকে কেটে পড়াই মঙ্গল। সে তাড়াতাড়ি হোটেল থেকে মালপত্র নিয়ে জাহাজঘাটায় যাবার জন্য ছুটলো। এদিকে টাকা পাঠাতে অ্যাড্রিয়ানার দেরী দেখে অস্থির হয়ে উঠেছে ছোট এণ্টিফেলাস। চৌকিদারকে রাজী করিয়ে তাকে নিয়ে বাড়ী এসে তার হাতে টাকাটা দিয়ে নিষ্কৃতি পেল সে।
চৌকিদার চলে গেল, কিন্তু অ্যাড্রিয়ানার ওপর মারমুখী হয়ে উঠলো এণ্টিফেলাস। স্ত্রীর ওপর বিশ্বাস নষ্ট হয়ে গেছে তার। স্বামীর রকম সকম দেখে ভয় পেয়ে গেল অ্যাড্রিয়ানা। কি সব উল্টো পাল্টা বকছে মানুষটা, মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি? পরপুরুষে আসক্ত আবার সে কবে হোল? আর টাকাও তো চাওয়ামাত্র দিয়ে দিয়েছিল ড্রোমিওকে। স্বামীর চিকিৎসা দরকার মনে করে চাকরদের সাহায্যে জোর করে ঘরে বন্ধ করে রাখলো তাকে । আর একজন বিখ্যাত ওঝাকে ডাকলো তার চিকিৎসা করার জন্য। নিজে ছুটলেন স্বর্ণকারের বাড়ীতে ব্যাপারটা সকর্ণে শুনতে। পথিমধ্যে একটি দৃশ্য দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না অ্যাড্রিয়ানা।
তার স্বামী, যাকে সে এইমাত্র ঘরে বন্ধ করে রেখে এসেছে , সে কি করে এরই মধ্যে ছাড়া পেয়ে জাহাজঘাটার রাস্তায় চলেছে? গাড়ী থেকে নেমে পড়ে স্বামীকে পাকড়াও করলো অ্যাড্রিয়ানা। বিপদ বুঝে এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে সামনের গির্জার ভিতরে পালিয়ে গেষ এণ্টিফেলাস। দ্বিতীয়বার ঐ মায়াবিনীর খপ্পরে পড়তে রাজী নয় সে। অ্যড্রিয়ানা পড়ে গেল মহা বিপদে। গির্জার দরজায় গিয়ে অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করলো সে। কিন্তু সেখানকার পাদ্রী বললেন, শরণাগতকে আশ্রয় দেওয়াই তাঁর ধর্ম । গির্জায় কেউ আশ্রয় নিলে তাকে জোর করে বার করে দিত পারবেন না তিনি।
অগত্যা অ্যাড্রিয়ানা গেল ডিউকের কাছে দরবার করতে। এদিকে পনেরো দিন অপেক্ষা করার পরও যখন সওদাগর ঈজিয়ান মুক্তিপণের ব্যবস্থা করতে পারলো না। তখন নিরুপায় হয়েই সেদিন ডিউক তাকে নিয়ে এসেছেন গির্জার কাছেই বধ্যভূমিতে। অ্যাড্রিয়ানা সেখানেই কাঁদতে কাঁদতে এসে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালো। ঠিক সেই সময় ছোট এণ্টিফেলাস কোন রকমে ওঝাদের হাত ছাড়িয়ে পাগলের মত মূর্তি নিয়ে ছুটে এসেছে ডিউকের কাছে স্ত্রীর বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে। ডিউক তো পড়লেন মহাসমস্যায়। এণ্টিফেলাসকে তিনি নিজের ছেলের মতই ভালবাসেন। তার গুণের কদর করেন। অ্যড্রিয়ানাও রূপে গুণে অনন্যা বলেই জানেন। কার কথা বিশ্বাস করবেন? কার পক্ষে রায় দেবেন। এদিকে তাকিয়ে মৃত্যু পথযাত্রী সওদাগর ঈজিয়ানের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। ঐ তো তার পুত্র এণ্টিফেলাস।
ডিউককে সম্বোধন করে তিনি বললেন, আর তার মরতে ভয় নেই, কেন না মরার আগে প্রিয় পুত্রের মুখ তো দর্শন করতে পেরেছেন। ছোট এণ্টিফেলাস অবাক হয়ে গেল, এই বৃদ্ধ তাকেই পুত্র সম্বোধন করছেন? একে তো সে আগে কখনো দেখেই নি।বাইরে গোলমাল শুনে ইতিমধ্যে বড় এণ্টিফেলাস গির্জা থেকে বেরিয়ে দেখতে এসেছে ব্যাপারটা কি। তাকে দেখে সমবেত মানুষরা তো হতভম্ব। এ কি যাদুর খেলা নাকি? দুটি মানুষ এরকম হুবহু একরকম দেখতে হয় কি করে? একমাত্র বৃদ্ধ সওদাগরই বুঝলেন আসল ব্যাপারটা কি। দীর্ঘদিন পরে দ্বিতীয় সন্তানটিকেও ফিরে পেয়েছেন তিনি। এই গির্জা সংলগ্ন মঠেই এতকাল সন্ন্যাসিনীর বেশে দিন কাটাচ্ছিলেন ঈজিয়ানের স্ত্রী এমিলিয়া। ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে তিনিও দেখলেন এই আশ্চর্য দৃশ্য। এগিয়ে এলেন তিনি। নিজের স্ত্রীকে চিনতে পেরে আনন্দে বারুদ্ধ হয়ে গেল বৃদ্ধের। সব ভাল, যার শেষ ভাল। সব কুহেলীর অবসান হোল। এই স্বজন মিলনের দৃশ্যে সমবেত জনতা, এমনকি ডিউকের চোখেও জল এসে গেল। হারান মাণিক পেয়ে বৃদ্ধ বৃদ্ধা আনন্দসাগরে ভাসলেন। এমিলিয়া পুত্রবধু অ্যাড্রিয়ানাকেও টেনে নিলেন বুকে। দুই ড্রোমিও পরস্পরের দিকে চেয়ে রইল যেন দর্পণে প্রতিবিম্ব দেখছে।