সৌরজগৎ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

সৌরজগৎ কি?

ছোট ছোট গ্রহপুঞ্জ, উল্কাপিণ্ড, উপগ্রহ, সূর্য এবং তার গ্রহ নিয়ে সৌরজগৎ গঠিত।

সৌরজগতের সংখ্যা কয়টি?


মাত্র আটটি গ্রহ নিয়ে সৌরজগত্ গঠিত। সৌরজগতের রয়েছে একশোর বেশি উপগ্রহ। গ্রহপুঞ্জ সংখ্যাও কম নয়, গোপন রোগ কিন্তু শত শত নয়, রয়েছে হাজার হাজার এর উপরে। ধূমকেতুর সংখ্যাও কম নয় এ সংখ্যাটা লাখের উপরে, শুধু উপরে বললে ভুল হবে রয়েছে লক্ষ লক্ষ। এদের সবকিছুর বৈশিষ্ট্য, কার্যাবলী ভিন্ন ভিন্ন। আকৃতির দিক থেকেও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের এদের আবিষ্কার, অবস্থান, কার্যাবলী, গতিবিধি, সবকিছু নিয়েই বিস্ময়ের শেষ নেই। জানা অজানা নানা কল্পনা কল্পনা আদিকাল থেকেই শুরু হয়েছে, আবিষ্কারের নেশায় দ্বিগবিজয চলছে হন্য হয়ে। নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন, নতুন আবিষ্কারের নেশায়, নিরন্তর প্রচেষ্টার শেষ নেই জোতি বিজ্ঞানীদের। বিভিন্ন গ্রহ গুলোর মধ্যে আমরা প্রথমে আলোচনায় আসি সূর্যকে নিয়ে।
সৌরজগৎ
সূর্য: আমরা জানি সবকিছুর মধ্যে রয়েছে সূর্য। কবি সাহিত্যিকগণ সূর্যকে এজন্য সূর্যি মামা বলে ডাকি। অর্থাৎ সূর্য কে মধ্য রেখে অন্যান্য গ্রহ থেকে ছোট যেগুলোকে আমরা সাধারণত উপগ্রহগুলি, অর্থাৎ সবকিছুই ঘুরছে।

পৃথিবীর চেয়ে ১৩ গুণ অর্থাৎ ১৩ লক্ষ গুণ বড় সূর্য।
দূরত্বের দিক দিয়ে আমাদের বাস যোগ্য পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব ১৩ লক্ষ চুরাশিহাজার বর্গ কিলোমিটার। তাপমাত্রার দিক থেকে ৫৭ হাজার ডিগ্রী সেলসিয়াস, এই তাপমাত্রা টা শুধুমাত্র সূর্যের উপরিভাগের দিক হইতে। অন্যদিকে তাপমাত্রা উপরিভাগে তাপমাত্রার তুলনায় কিছুটা কম রয়েছে। সূর্যের কাছাকাছি যাওয়ার মত এখন পর্যন্ত কোন নভোযান আবিষ্কৃত হয়নি ‌। তবে সূর্য কাছে যাওয়ার মত নবজন আবিষ্কারের চেষ্টা মানুষের নিরন্তর তার শেষ নেই। বিশাল দূরত্বের কারণে অতি অল্প তাপে পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়। সাধারণত ধারণা করা হয় মাত্র একভাগ সৌরশক্তি আমরা ব্যবহার করি। আমরা জানি যে সকল শক্তির উৎস এই সূর্য। সূর্যের তাপ কে কাজে লাগিয়ে আমরা সকল কিছু করে থাকি।

আমাদের চারপাশের সবুজ গাছপালা, লতাপাতা, বৃক্ষরাজি সকল কিছুর উৎপাদন সূর্য ছাড়া সম্ভব নয় অর্থাৎ সূর্যের আলো ছাড়া সম্ভব নয়। সূর্যের আলোয় আলোকিত না হলে বিশ্ব টা অন্ধকার থেকে যেত। পৃথিবীর অনেক দেশে রয়েছে যেখানে সূর্যের আলো খুব একটা পৌঁছায় না ‌। ওইসব দেশগুলো বছরে প্রায় সময়ই রাতের মত দেখা যায়। তারা বিশেষ পদ্ধতিতে সূর্যের আলো জমা রেখে উৎপাদন ব্যবস্থা করে থাকে। আবার শীত প্রধান দেশ গুলো যেখানে সূর্যের তাপ খুবই কম থাকে সেখানে কাচের ঘর তৈরি করে বিশেষ পদ্ধতিতে চাষবাস করে। এই পদ্ধতিকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছে গ্রীন হাউজ পদ্ধতি।

সূর্যের বৈশিষ্ট্য

সূর্যের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখ করার মতো যেসব বৈশিষ্ট্য নিম্নে সেগুলো দেওয়া হলো।
  • এখানে কোন তরলপদার্থ নাই
  • কঠিন পদার্থ নেই
  • হাইড্রোজেনের পরিমাণ বেশি শতকরা সংযুক্তি হিসেবে ৫৫%
  • এর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে হিলিয়াম গ্যাস শতকরা সংযুক্তি হিসেবে এর মাত্র ৪৪ শতাংশ।
  • সূর্য ২৫ দিনের ব্যবধানে তার নিজ অক্ষের উপর একবার ঘুরে আসতে পারে।
  • হিলিয়াম এবং হাইড্রোজেন ছাড়া অন্যান্য গ্যাস ও কিছুটা রয়েছে এখানে এর মাত্রা এক শতাংশের বেশি হবে না।

সৌর কলঙ্কে বলতে কি বুঝি?

সূর্যের সকল স্থানের বর্ণ একরকমের নয়। সূর্যের একে একে অংশ একেক রকম, সূর্যের মধ্যে মাঝে মাঝে কিছু কালো দাগ দেখা যায় এগুলোকে সৌরকলঙ্ক বলে। সৌর কলঙ্কে তাপমাত্রা পরিমাণ অন্যান্য অংশের চেয়ে কিছুটা কম।

বুধ: সৌরজগতের আটটি গ্রহের মধ্যে বুধ সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম গ্রহ।

বুধ গ্রহের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য

  • বুধ গ্রহের ব্যাস ৪৮৫০ কিলোমিটার।
  • ওজনের দিক থেকে পৃথিবীর ওজন যদি ৫০ ভাগ হয় তার মাত্র তিন ভাগের সমান।
  • সূর্যের চারপাশে ঘুরে আসছে মাত্র পৃথিবীর ওজন যদি ৫০ ভাগ হয় তার মাত্র তিন ভাগের সমান।
  • সূর্যের চারপাশে ঘুরে আসছে মাত্র দিন সময় লাগে।
  • বুধের থেকে দূরত্ব অর্থাৎ সূর্য পর্যন্ত ৫.৮ কোটি কিলোমিটার।
  • বুধের নিজস্ব কোন উপগ্রহ নেই।
  • বুধের তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি কারণ সূর্যের খুব নিকটে।
  • দুধের পাহাড় এবং ছোট খাটো গর্ত দেখা যায়।
  • ৭৪, ৮০০.০০০ আয়তন বিশিষ্ট।

শুক্র গ্রহের বৈশিষ্ট্যসমূহ

  • পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের গ্রহ।
  • দূরত্ব সূর্য থেকে ১০.৮ কটি
  • দূরত্ব দিক থেকে পৃথিবী থেকে শুক্র ৪.২ কোটি কিলোমিটার
  • শুক্র কে বিশেষভাবে সন্ধ্যাতারা পরিচিতি লাভ করেছে।
  • সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে মাত্র ২২৫ দিন সময় লাগে।
  • এখানে কোন অক্সিজেন নেই
  • কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ অনেক বেশি শতকরা সংযুক্তি হিসেবে ৯৬%
  • বাতাসের চাপের পরিমাণ অনেক বেশি, পৃথিবীর তুলনায় এখানে চাপের পরিমাণ প্রায় নব্বই গুণ বেশি।
  • শুক্রের আয়তন ৪৬০, ২৩০, ০০০ বর্গ কিলোমিটার
  • শুক্রের ব্যাস ১২১০৪ কিলোমিটার

পৃথিবী: আমরা পৃথিবীর মানুষ নামক গ্রহের বাসিন্দা। পৃথিবীর ইতিহাসে রয়েছে বিভিন্ন কথা। এখানে বাস করে হাজার হাজার প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ। প্রাণী জগতের বিচিত্র ভান্ডার রয়েছে পৃথিবীতে। হিমালয়, সাগর, মহাসাগর নানা বৈচিত্রে ভরা এই পৃথিবী।

পৃথিবী নামক গ্রহের বৈশিষ্ট্য

  • সূর্য থেকে দূরত্ব থেকে পৃথিবীর তিন নাম্বার গ্রহ।
  • ৪৭ সেকেন্ড ৪৮ মিনিট ৫ ঘন্টা ৩৬৫ দিনে সূর্যকে একবার ঘুরে আসতে সক্ষম হয়।
  • মাত্র একটি উপগ্রহ অর্থাৎ চন্দ্র।
  • শতাংশ থেকে অর্থাৎ চন্দ্র থেকে গড় দূরত্ব ৩৮১,৫০০কিলোমিটার।
  • এখানে গড় তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৯০ ডিগ্রী সেলসিয়াস‌।

মঙ্গল গ্রহের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য

  • সূর্য থেকে দূরত্ব ২২.৮ কটি।
  • আমাদের পৃথিবী থেকে দূরত্ব ৭.৮ কটি
  • মঙ্গলের ব্যাস ৬৭৭৯ কিলোমিটার।
  • ওজন পৃথিবীর ১০ অংশের একাংশ।
  • মঙ্গলের আয়তন ১৪৪,৭৯৮,৫০০
  • সূর্যকে ঘুরে আসতে সময় লাগে ৬৮৭ দিন।
  • এবং সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে সময় লাগে ৩৭ মিনিট ২৪ ঘন্টা।
  • মঙ্গলের অন্য গ্রহের উপগ্রহ রয়েছে যথা: ডিমোস এবং ফেবোস।
  • এখানে তিন ভাগ নাইট্রোজেন এবং দুই ভাগ আর্গন গ্যাস রয়েছে।
  • তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে।
  • মরিচা পড়ার কারণে এখানে যে পাথর গুলো দেখা যায় সেগুলো লালবর্ণ হয়েছে এজন্য মঙ্গল গ্রহ লাল গ্রহ বলে।

বৃহস্পতি গ্রহের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য

  • সবচেয়ে বড় গ্রহ।
  • পৃথিবীর চেয়ে তেরোশো গুণ বেশি।
  • আয়তন ৬১,৪১৯,০০০,০০০ বর্গ কিলোমিটার।
  • ৭৭ দশমিক ৮ কোটি কিলোমিটার দূরে সূর্য থেকে।
  • সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে ১২ বছর সময় লাগে অর্থাৎ এক যুগ সময় লাগে।
  • এবং নিজ অক্ষে অবতীর্ণ করতে ৯ ঘন্টা ৫৩ মিনিট।
  • এখানে সূর্য দুইবার উঠে এবং দুইবার অস্ত যায়।
  • উপগ্রহ সংখ্যা কম নয় ৬৭ টি।
  • গ্যানিমেড, ইউরোপা, ক্যাপ লিস্ট এগুলো বিখ্যাত উপগ্রহ।

শনি গ্রহের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য

  • বড় দিক থেকে দ্বিতীয়।
  • আয়তন ৪২,৭০০,০০০,০০০বর্গ কিলোমিটার
  • ব্যাস ১১৬,৪৬৪ কিলোমিটার
  • পাঁচ মাস ২৯ বছরে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে।
  • মাত্র ৪০ মিনিটে নিজ অক্ষে একবার আবর্তন করে।
  • এখানে উজ্জ্বল বলয় রয়েছে মাত্র তিনটি যেগুলো সনি কে ঘিরে রেখেছে।
  • বাষট্টির উপগ্রহ ক্যালিপ্সাট,  টাইটান উল্লেখযোগ্য।
  • ১৪৩ কোটি কিলোমিটার দূরে সূর্য থেকে।

ইউরেনাস গ্রহের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য

  • উপগ্রহ ২৭ টি
  • আয়তনের দিক থেকে একেবারে ছোট নয় বরং পৃথিবীর চেয়ে ৬৪ গুন বড়। কিন্তু ওজন ওই তুলনায় কম মাত্র ১৫ ভাগ
  • মেরিন্ডা, টাইটানিয়া, অবেরন এগুলো উল্লেখযোগ্য উপগ্রহ।
  • অনেক বছর ব্যবধানে ৮৪ বছরে একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।
  • নেপচুন গ্রহের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য
  • দূরত্ব দিক হতে সূর্য থেকে অনেক দূরে প্রায় ৪৫০ কোটি কিলোমিটার।
  • এখানে উপগ্রহ একেবারে কম নয় ১৪ টি
  • ১৬৫ বছরের ব্যবধানে সূর্যকে একবার অতিবাহিত করে।
  • এই গ্রহটি অধিক পরিমান শীতল।
  • নেপচুনের ব্যাস হচ্ছে ৪৯,২৪৪ কিলোমিটার।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url